‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আবার এক বার পহেলগাঁও কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই গত ২২ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘জঙ্গি হামলার কঠোর জবাব দেবে ভারত। আমার বিশ্বাস পহেলগাঁওয়ের ঘটনা দেখে প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটছে।’’
মোদী আরও বলেন, পহেলগাঁও কাণ্ড প্রত্যেক ভারতীয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের যে কোনও প্রান্তে থাকা মানুষ পহেলগাঁওয়ের হত্যালীলায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমব্যথী। পহেলগাঁও হামলা জঙ্গিদের ভিতু মনোভাবেরই প্রতিফলন। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যখন কাশ্মীরে শান্তি ফিরছিল, স্কুল-কলেজ খুলছিল, গণতন্ত্র মজবুত হচ্ছিল— যা দেশের শত্রু বা জম্মু-কাশ্মীরের শত্রুদের সহ্য হয়নি। তারা চেয়েছিল, আতঙ্ক ছড়িয়ে কাশ্মীরকে আবার অশান্ত করে তুলতে। সেই কারণে এত বড় ষড়যন্ত্র করল।’’
তার পরই মোদী সকলকে একজোট হওয়ার বার্তা দেন। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের একতাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। গোটা বিশ্ব দেখছে এই হামলার পর পুরো দেশ এক সুরে কথা বলছে। ভারতীয়দের মনে যে আক্রোশ আছে, তা গোটা দুনিয়াতেই আছে। এই জঙ্গি হামলার পর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সমবেদনা আসছে। আমাকেও বিশ্বনেতারা ফোন করেছেন, চিঠি লিখে ঘটনার নিন্দা করেছেন।’’
মোদীর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমি নিহতদের পরিবারদের ফের এক বার আশ্বস্ত করতে চাই যে, ন্যায় মিলবেই। ষড়যন্ত্রকারী এবং হামলাকারীদের কঠোর জবাব দেওয়া হবেই।’’
আরও পড়ুন:
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও আহত বেশ কয়েক জন। ঘটনার পর থেকেই বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ আছে বলে অভিযোগ ভারতের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপও করা হয়েছে ইতিমধ্যে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পড়শি দেশ। প্রথমে হামলার দায় স্বীকার করলেও শনিবার ‘দ্য রেজ়িসট্যান্স ফোর্স’ (টিআরএফ) দাবি করে, এই হামলার সঙ্গে তাদের যোগ নেই।
পহেলগাঁও কাণ্ডের খবর পেয়ে সৌদি আরবের সফরসূচি কাটছাঁট করে বুধবার সকালেই ভারতে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লিতে নেমেই বিমানবন্দরে বৈঠক করেন তিনি। তার পর থেকে পহেলগাঁওয়ের পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন তিনি। তাঁর নির্দেশেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাশ্মীরে গিয়েছেন। সেনাপ্রধান তো বটেই, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবারই তিনি বলেছিলেন, জঙ্গিদের খুঁজে বার করে ‘কল্পনাতীত শাস্তি’ দেবে ভারত। তার পর থেকে জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চলছে অনন্তনাগ, কুলগাঁও-সহ উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে একাধিক জঙ্গির বাড়ি। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে।
মঙ্গলবারের ওই হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে ভারত। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি। অটারী সীমান্তে ভারতের ‘ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট’ বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বৈধ নথিতে এ দেশে এসেছেন, তাঁদের ১ মে’র মধ্যে একই পথে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানিদের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে ‘সার্ক’ ভিসাও। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ করেছে। ভারতীয় বিমানের জন্য বন্ধ করা হয়েছে পাকিস্তানের আকাশসীমা। শুধু তা-ই নয়, শিমলা চুক্তি বাতিলেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ইসলামাবাদ। সেই আবহে জঙ্গি দমনে ভারতও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করার দিকে এগোচ্ছে। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপড়েন, ভারতের মাটিতে জঙ্গি দমন জোরদার সেনা অভিযানের মধ্যেই মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি কোনও বার্তা দেন কি না, সে দিকে নজর ছিল অনেকের। সেই অনুষ্ঠানেই ফের এক বার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার ‘সংকল্প’ করলেন প্রধানমন্ত্রী।