Advertisement
E-Paper

কানহাইয়ার জিভ কাটলেই ইনাম দেবেন বিজেপি নেতা

একটা জাল ভিডিও! তার দৌলতেই রীতিমতো দেশদ্রোহী বানিয়ে আদালত চত্বরে একদল ‘দেশপ্রেমিকে’র চড়-থাপ্পড় আছড়ে পড়েছিল কানহাইয়া কুমারের ওপর! আর জেল থেকে বেরিয়ে অসংখ্য টিভি ক্যামেরা ও কয়েক হাজার লোকের চোখের সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও সঙ্ঘ পরিবারকে তীক্ষ্ণ বিদ্রুপে ভরিয়ে দেওয়ায় এ বার তাঁর জিভ কেটে নেওয়ার হুমকি এল!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:২২
কানহাইয়া

কানহাইয়া

একটা জাল ভিডিও! তার দৌলতেই রীতিমতো দেশদ্রোহী বানিয়ে আদালত চত্বরে একদল ‘দেশপ্রেমিকে’র চড়-থাপ্পড় আছড়ে পড়েছিল কানহাইয়া কুমারের ওপর! আর জেল থেকে বেরিয়ে অসংখ্য টিভি ক্যামেরা ও কয়েক হাজার লোকের চোখের সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও সঙ্ঘ পরিবারকে তীক্ষ্ণ বিদ্রুপে ভরিয়ে দেওয়ায় এ বার তাঁর জিভ কেটে নেওয়ার হুমকি এল! ২৮ বছরের ছাত্রনেতাকে গুলি করলে গুনে গুনে ১১ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার পোস্টারও পড়ল! কেউ বা তাঁর মাথার দাম নিলামে তুলে দিলেন উনিশ লাখে! উপরি পাওনা বলতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অকথ্য গালাগালি!

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কংস-বাহিনী কি শেষ পর্যন্ত নেমেই পড়ল?

যাঁকে ঘিরে এত কাণ্ড, সেই কানহাইয়া আজ আর মুখ খোলেননি। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় তাঁর বন্ধুরা হাসতে হাসতে বলছেন, ‘‘কানহাইয়ার বাঁশিতে আগুন তো লেগে গিয়েছে!’’

আগুনের বহরটা দেখা যাক। গত কাল রাতে ল্যুটিয়েন দিল্লির বিভিন্ন দেওয়ালে পোস্টার পড়েছে, ‘‘জেএনইউ প্রেসিডেন্ট দেশদ্রোহী কানহাইয়াকে কেউ গুলি করলে পূর্বাঞ্চল সেনার তরফে তাঁকে ১১ লক্ষ টাকা ইনাম দেওয়া হবে।’’ পোস্টারের নীচে পূর্বাঞ্চল সেনার ফোন নম্বর। যেখানে ফোন করলে একজন রীতিমতো যুক্তি দিয়ে বোঝাচ্ছেন, কেন কানহাইয়াকে মেরে ফেলা উচিত! আবার কুলদীপ ভার্সনি নামে উত্তরপ্রদেশের এক বিজেপি নেতা আজ টিভি ক্যামেরার সামনেই বলেন, ‘‘যে কানহাইয়ার জিভ কেটে আনবে, তাঁকে হাতে হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা দেব।’’ এ খবর জানাজানি হতেই বিজেপি কুলদীপকে বহিষ্কার করেছে। বিরোধীদের মতে, সেটা লোক দেখানো। তা না হলে দল বিপদে পড়বে যে! কিন্তু বিজেপির লক্ষ্য যে পাল্টায়নি তার উদাহরণ এর কয়েক ঘণ্টা পরে বৃন্দাবনে অমিত শাহের বক্তৃতা। দলের যুব মোর্চার মঞ্চে দাঁড়িয়ে কানহাইয়ার নাম না করে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘দেশে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়াকে বাক্‌স্বাধীনতা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কংগ্রেসের লজ্জা হওয়া উচিত যে তাঁদের সহ-সভাপতি এই কার্যকলাপকে সমর্থন করছেন।’’

এখন প্রশ্ন হল, ক’দিন আগেই কানহাইয়া প্রসঙ্গ নিয়ে আর না-এগিয়ে তার বদলে ‘জনদরদি’ বাজেটকে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও কেন আবার ময়দানে নামল বিজেপি? দলীয় সূত্র বলছে, কানহাইয়ার বক্তৃতা যে ভাবে সমাজের একটা অংশের মন কেড়েছে, তাতে দলের নেতারা উদ্বিগ্ন। তাঁরা মনে করছেন, বিষয়টাকে এখনই পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। বরং দেশভক্তির প্রশ্নে যারা কানহাইয়ার অবস্থানের বিপক্ষে, তাদের আবেগকে উস্কে দেওয়া দরকার। আর সেই কারণেই আজ জাতীয়তাবাদের মোড়কে চড়া সুরে বিষয়টি তুলেছেন অমিত।

পাশে আছি। চিনা আগ্রাসনের প্রতিবাদে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী তিব্বতি ছাত্রের সমর্থনে বেঙ্গালুরুর তিব্বতিরা। শনিবার। ছবি: এএফপি।

যা শুনে অনেকেই বলছেন, আগুন একটা লেগেছে। এবং সঙ্ঘ পরিবারের শাখা-প্রশাখা এত দূর ছড়ানো যে এই আগুন আরও ছড়াবে। কেননা রাম সেনা বা পূর্বাঞ্চল সেনার মতো অনামি-বেনামি একাধিক উগ্র হিন্দু সংগঠন গোটা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। বিজেপি এই আগুন এখন থামাতেও চায় না। এই আগুন ছড়িয়ে যত মেরুকরণ হবে, তত তাদের লাভ।

কংগ্রেসের লক্ষ্য অন্য। কানহাইয়া-প্রসঙ্গ তুলে অসমে এক ভোটপ্রচার সভায় রাহুল গাঁধী আজ বলেন, ‘‘ওঁর বক্তৃতা আমি শুনেছি। দেশবিরোধী একটা কথাও কানহাইয়া বলেননি। কেউ দেশবিরোধী স্লোগান দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু দু’জন বা তিন জনের জন্য গোটা জেএনইউ-র ছাত্রছাত্রীদের কেন দেশবিরোধী বলা হবে?’’ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, উদার হিন্দু সমাজ বিজেপির মিথ্যে প্রচারের খেলা ধরে ফেলেছে।

ছাত্র-যুবদের মধ্যে মোদী সম্পর্কে মোহভঙ্গ হচ্ছে। সেটাই ত্বরান্বিত করতে চান রাহুল।

আর কানহাইয়া? জেএনইউ-তে ফিরে গত দু’দিন তীব্র ভাষায় মোদী বিরোধিতা করেছেন। আজ মুখই খোলেননি। বরং পোড় খাওয়া রাজনীতিকের মতো চুপ থেকেছেন। হয়তো দেখে নিতে চাইছেন আর কী তির ছুটে আসে তাঁর দিকে।

বন্ধুরা বলছেন, কংস-বধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কানহাইয়া!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy