Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Punjab

Assembly Election 2022: পটিয়ালার ‘গড়’ রক্ষাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ‘পঞ্জাবকেসরী’র, এই হারেই কি যুদ্ধ শেষ প্রাক্তন ফৌজির?

রাজনীতির বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেছিল, ‘শেষ ভোটের’ কথা বলে সহানুভূতি পাওয়া যাবে না বুঝেই কৌশল বদলেছিলেন পটিয়ালার ফুলকিয়াঁ রাজবংশের উত্তরাধিকারী। কারণ, চণ্ডীগড়ের সিসওয়ানের খামারবাড়ি থেকে তাঁর শেষ সাড়ে চার বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্ব চালানো নিয়ে আমজনতা এবং পঞ্জাব কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল বিস্তর।

অমরেন্দ্র সিংহ।

অমরেন্দ্র সিংহ। ফাইল চিত্র।

সায়ন ত্রিপাঠী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ১৩:২৩
Share: Save:

এটাই ছিল তাঁর শেষ ‘ম্যাচ’! পাঁচ বছর আগে পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ মনোনীত হওয়ার পর প্রতিটি জনসভায় নিয়ম করে এই কথা বলতেন ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ। নিজের দলের আর এক দুঁদে খেলোয়াড় নভজোৎ সিংহ সিধুর সঙ্গে যে তাঁর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সে কথা জানাতেন বারে বারেই।কিন্তু এ বার পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে এক বারও নিজের অবসরের প্রসঙ্গ তোলেননি ‘ক্যাপ্টেন’। বরং পুরনো ‘টিম’ থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে বিজেপি-র সহযোগী হয়ে ভোটে লড়তে নেমে ‘কংগ্রেস হাইকমান্ডের অবহেলার কথা’ বলেছিলেন। সিধুর বিরুদ্ধে ‘পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠতা’-র অভিযোগ তুলেছিলেন। রাহুল গাঁধী-প্রিয়ঙ্কা বঢরার ‘রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা’ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন।

রাজনীতির বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেছিল, ‘শেষ ভোটের’ কথা বলে সহানুভূতি পাওয়া যাবে না বুঝেই কৌশল বদলেছিলেন পটিয়ালার ফুলকিয়াঁ রাজবংশের উত্তরাধিকারী। কারণ, চণ্ডীগড়ের সিসওয়ানের খামারবাড়ি থেকে তাঁর শেষ সাড়ে চার বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্ব চালানো নিয়ে আমজনতা এবং পঞ্জাব কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল বিস্তর। প্রশাসনিক দুর্নীতি, বালিপাচার, মাদকের চোরাকারবার ঠেকাতে তাঁর সরকার নিশ্চেষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে বারে বারেই। তাঁর পাকিস্তানি ‘বান্ধবী’ আরুশা আলমকে নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

পটিয়ালার ‘গড়’ রক্ষাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অমরেন্দ্রের। সেই দুর্গের পতন হল প্রতিদ্বন্দ্বী ‘আপ’-এর কাছে। এই পরাজয়েই তাঁর রাজনীতির যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল কি না, তা বলবে সময়। কিন্তু পঞ্জাবের রাজনীতিতে নতুন শক্তির উত্থানে প্রাক্তন ফৌজি অমরেন্দ্র যে অশ্বপৃষ্ঠ থেকে ভূপাতিত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

পঞ্জাবের কংগ্রেস পরিষদীয় দলের অন্দরে বিক্ষোভের জেরেই দ্বিতীয় বারের মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদটাও পূর্ণ করতে পারেননি অমরেন্দ্র। বিধানসভা ভোটের ছ’মাস আগে তাঁকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। গত সেপ্টেম্বরে সেই ‘অমরেন্দ্র হঠাও’ অভিযানে সিধুর পাশাপাশি ছিলেন চরণজিৎ সিংহ চন্নী (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী), সুখজেন্দ্র সিংহ রণধাওয়ার (প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী) মতো একদা ক্যাপ্টেন-ঘনিষ্ঠেরাও।

প্রায় সাড়ে পাঁচ দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনে আগেও দলবদল করেছেন অমরেন্দ্র। আশির দশকে ইন্দিরা গাঁধী অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রতিবাদ জানিয়ে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন এই প্রাক্তন সেনা অফিসার। যোগ দিয়েছিলেন শিরোমণি অকালি দলে। তবে কয়েক বছর পরে ফের কংগ্রেসে ফিরেছিলেন। ২০০২ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরার পরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই বেছে নিয়েছিলেন সভানেত্রী সনিয়া। যদিও তাঁর নেতৃত্বে লড়ে ২০০৭-এর বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়েছিল কংগ্রেস।

এর পরেও ২০১২ সালে কংগ্রেসের প্রথা ভেঙে বিধানসভা ভোটের আগে অমরেন্দ্রকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও সে বারও ভোটে কংগ্রেস হারে। টানা দ্বিতীয় বার ক্ষমতা দখল করে অকালি-বিজেপি জোট।

পঞ্জাব কংগ্রেসের অন্দরে সেই সময়েই অমরেন্দ্র-বিরোধী আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটে। সে বার পঞ্জাবের ১৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জিতেছিল কংগ্রেস। কিন্তু তারই মধ্যে অমৃতসরে বিজেপি-র হেভিওয়েট প্রার্থী অরুণ জেটলিকে হারিয়েছিলেন অমরেন্দ্র। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটের আগে তাই মুখ্যমন্ত্রী পদে তিনি ফের হাইকমান্ডের ‘স্বাভাবিক পছন্দ’ হয়ে যান।

এ বার ভোটের আগে দল এবং সরকারে অন্তর্বিরোধের জেরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারানোর পরে কংগ্রেস ছেড়ে পঞ্জাব লোক কংগ্রেস গড়েছিলেন ৮০ বছরের ‘রাজা’। পদ্মশিবিরের সহযোগীও হয়েছিলেন। কিন্তু পুরনো অনুগামীদের প্রায় কাউকেই পাশে পাননি। ১১৭ আসনের পঞ্জাব বিধানসভায় এ বার ৭৩টিতে বিজেপি এবং ২৮টিতে অমরেন্দ্রর দল প্রার্থী দিয়েছিল। ১৪টিতে লড়েছিল শিরোমণি অকালি দল-ছুট প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখদেব সিংহ ধিঙ্গসার দল শিরোমণি অকালি দল (সংযুক্ত)। অমরেন্দ্র নিজে লড়েছিলেন তাঁর পুরনো কেন্দ্র পটিয়ালাতেই। তাঁর স্ত্রী প্রণিত কৌর সেখানকারই কংগ্রেস সাংসদ। কিন্তু পদের তোয়াক্কা না করে প্রচারপর্বে ধারাবাহিক ভাবে স্বামীর পাশে ছিলেন তিনি।

কেন্দ্রের বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি বড় অবদান ছিল পঞ্জাবের চাষিদের। আন্দোলনকারী কৃষকদের মন পেতে এনডিএ জোট ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল বিজেপি-র সবচেয়ে পুরনো সহযোগী শিরোমণি অকালি দল। এ বার বিভিন্ন জনমত এবং বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত ছিল— কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হলেও পঞ্জাব বিজেপি-র প্রতি এখনও বিমুখ। আম আদমি পার্টি, কংগ্রেস এবং শিরোমণি অকালি দলের ত্রিমুখী লড়াইয়ে ‘চতুর্থ শক্তি’র কোনও সম্ভাবনা ছিল বলেও পূর্বাভাস ছিল না। তা হলে কি এই ফলাফলের পর রাজনীতিতে ক্যাপ্টেনের ‘ইনিংস’ শেষ? গোটা পঞ্জাব তাকিয়ে থাকবে সে দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE