E-Paper

মাটি ছাড়তে কেন দেরি বিমানের

পাশাপাশি, বিমানটি ভেঙে পড়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানের চাকা বা ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ করা যায়নি। এই ঘটনায় ইঞ্জিনে শক্তির ঘাটতির ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ০৮:০৯
ভেঙে পড়া বিমানের ছবি।

ভেঙে পড়া বিমানের ছবি। —ফাইল চিত্র।

আকাশে ওড়ার পথে যে মোক্ষম সময়ে বিমানের ক্রমশ উপরের দিকে উঠে যাওয়ার কথা, ঠিক সেই সময়েই বিমানটি দম হারিয়ে ফেলা পাখির মতো কেন নীচের দিকে নামতে শুরু করল, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত সব মহলে। সমাজমাধ্যমে ভেঙে পড়া বিমানের ভিডিয়ো থেকে দেখা যাচ্ছে, ড্রিমলাইনারটি রানওয়ের মাটিতে ধুলোর ঝড় তুলে উপরে ওঠার চেষ্টা করার পর্বেই আচমকা শক্তি হারিয়ে নীচের দিকে নামা শুরু করছে। যা দেখে বিমানচালক এবং উড়ান বিশেষজ্ঞদের একাংশের মনে হয়েছে, রানওয়ের যে অংশে বিমানটির মাটি ছেড়ে উঠে যাওয়ার কথা, তার চেয়ে কিছুটা দেরি করেছে।

পাশাপাশি, বিমানটি ভেঙে পড়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানের চাকা বা ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ করা যায়নি। এই ঘটনায় ইঞ্জিনে শক্তির ঘাটতির ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। মোক্ষম সময়ে বিমানকে ঠেলে উপরে তোলার জন্য পর্যাপ্ত গতি (থ্রাস্ট) জোগাতে না পারার পিছনে ইঞ্জিনের ত্রুটি ছাড়াও পাইলটদের ভুলের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তীব্র গরমের মধ্যে হালকা হয়ে যাওয়া বাতাস জেট ইঞ্জিনের ভিতরে জ্বালানির সঙ্গে মিশে দহনের পর পিছনের ছোট ছিদ্র দিয়ে বাইরের দিকে তীব্র গতিতে বেরিয়ে আসে এবং প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে কম ঘাত তৈরি করে। বিমানের ভার হিসাব করে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা সে জন্য নির্ধারণ করে রাখা জরুরি। ওই পরিকল্পনায় ভুল হলে বিমানের ইঞ্জিন অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। তবে তার জন্য ড্রিমলাইনারের মতো বিমানের দু’টি ইঞ্জিন একযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা নয়। এমনকি, একটি ইঞ্জিন ব্যবহার করেও বিমান অনায়াসে উপরে উঠতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিমানচালকরা। ফলে ওই বিপত্তি ঘটলেও তা সামলে নিতে পারার কথা অভিজ্ঞ বিমানচালকদের। কিন্তু কোন সমস্যায় আদপেই বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ করার সময় পেলেন না দুই চালক, সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না। এখানেই ইঞ্জিনের সমস্যার চেয়ে গুরুতর হয়ে দেখা দিচ্ছে চালকদের কারও ভুল হওয়ার প্রশ্ন।

বিমানচালকদের একাংশ জানাচ্ছেন, উড়ান আকাশে তোলার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ডানায় বিশেষ অংশ (ফ্ল্যাপ) থাকে। ওই ফ্ল্যাপ ডানার সঙ্গে কোনাকুনি অবস্থানে রাখা হয়। যাতে বাতাসের ঘাত বৃদ্ধি পায়। রানওয়েতে বিমান দৌড় শুরু করার সময় ফ্ল্যাপের অবস্থান ঠিক না থাকলে অ্যালার্ম বাজতে থাকে। ফলে সেখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, বিমান উড়তে শুরু করার পর তার নীচের দিকে নেমে আসার টান (ড্র্যাগ) কমানোর জন্য দ্রুত ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ করা জরুরি। একই সময়ে বিমানকে ঠেলে উপরে তোলার জন্য ইঞ্জিনের শক্তিও বাড়ানো হয়। এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে ইঞ্জিনের শক্তি যথেষ্ট বাড়ল না, অথচ কী এমন ঘটল যে বিমানটিকে গতিশীল অবস্থায় কিছুটা উপরে তুলে নিয়ে যেতে ডানার কাছ থেকেও পর্যাপ্ত সাহায্য মিলল না? এখানেই বিমান উপরে তোলার সময়ে ভুল করে ডানার ফ্ল্যাপ খুলে ফেলার প্রশ্ন আসছে। কম উচ্চতায় বিপুল ভার নিয়ে বিমান আকস্মিক ভাবে উপরে ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলার কারণেই নীচের দিকে নামতে শুরু করে বলে জানাচ্ছেন বিমান চালকদের একাংশ। ওই অবস্থায় আচমকা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় কি ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ করার সময় পাননি চালকেরা? প্রাক্তন বায়ু চিফ মার্শাল অরূপ রাহাও শনিবার বলেছেন, “যে ভাবে বিমানটি মাটিতে পড়েছে, সেটা দেখে মনে হচ্ছে মাটি থেকে আকাশে ওঠার সময়েই তার ইঞ্জিন শক্তি হারিয়েছিল। সম্ভবত দু’টি ইঞ্জিনই শক্তি হারিয়েছিল। এবং সেটা ঘটেছে খুব সঙ্কটজনক স্তরে। সেই কারণেই বিমানটি ভেঙে পড়েছে। জ্বালানিতেও সম্ভবত শুদ্ধতার অভাব ছিল। আগেও এমন ঘটেছে।”

আমদাবাদের দুর্ঘটনার পরই ৬ দফা মাপকাঠি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে ডিজিসিএ। বিমানের জ্বালানির বিশুদ্ধতা, কেবিনে বাতাসের চাপ, বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, হাইড্রোলিক ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি টেক অফ করার আগে প্রয়োজনীয় শর্ত ঠিকমতো পূরণ করা হচ্ছে কি না, তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ahmedabad Plane Crash plane accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy