Advertisement
E-Paper

অবস্থা বদলাবে কি, প্রশ্ন রইলই

সায়রা বানো, আফরিন রহমানরা তিন তালাকের পাশাপাশি বহুবিবাহ, নিকাহ হালালা-র বিরুদ্ধেও সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত সিদ্ধান্ত নেয়, শুধু তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়েই বিচার হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪০
খোশমেজাজে: তিন তালাক খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে। মঙ্গলবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই।

খোশমেজাজে: তিন তালাক খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে। মঙ্গলবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই।

বছর ছত্রিশের সায়রাকে লেখা স্বামীর চিঠিতে তিনটিই শব্দ ছিল— তালাক, তালাক, তালাক। কাজি বললেন, বিচ্ছেদ বৈধ।

সেই তিন তালাক আজ খারিজ হওয়ায় সায়রা বানো খুশি। এ দিনের রায়ে তাৎক্ষণিক তালাক প্রথায় কার্যত সব বিবাহবিচ্ছেদই অবৈধ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা এখন কী করবেন? আইনজীবী রুখসানা চৌধুরীর ব্যাখ্যা, সাধারণ ভাবে দেখা যায়, স্বামী টাকা পাঠানো বন্ধ করলে যখন স্ত্রীরা কৈফিয়ৎ চান, তখন তাঁদের বলা হয় তিন তালাক দেওয়া হয়েছে। তিন তালাক হয়েছে কি হয়নি, তাই নিয়ে তখন প্রতারণার মামলা হয়। মুসলিম আইনে প্রতারণা মামলার আয়ু তিন বছর পর্যন্ত থাকে। আজকের রায় গত তিন বছরে তিন তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের সুবিধা দেবে। তার চেয়েও পুরনো ঘটনাগুলির কী হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।

তা ছাড়া বাস্তবে এত লড়াই কত দূর সম্ভব, সেটাও প্রশ্ন। কারণ দেওবন্দের দারুল উলুম বা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড এখনও খোলা মনে এটা মেনে নিতে পারছে না। দারুল উলুম জানিয়েছে, তিন তালাক কোরান ও হাদিসের সঙ্গে যুক্ত। তাতে কোনও বদল সম্ভব নয়।

সায়রা বানো:

২০১৫ সালে সায়রাকে তালাক দেন স্বামী। কেড়ে নেন সন্তানদেরও। ২০১৬-য় তিন তালাক ও বহুবিবাহকে অবৈধ ঘোষণার
দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে যান উত্তরাখণ্ডের সায়রা।

ইসরত জহান:

বিয়ের ১৫ বছর বাদে ২০১৫ সালে হাওড়ার ইসরত জহানকে দুবাই থেকে ফোনে তালাক দেন স্বামী মুরতাজা। সন্তানদেরও নিয়ে যান। সন্তানদের ফেরত চেয়ে ও খোরপোশের দাবিতে আদালতে
যান ইসরত।

গুলশন পারভিন:

১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তালাকনামা (নোটিস) পাঠিয়েছিলেন স্বামী। তিন
তালাক প্রথা রদের দাবিতে ২০১৫ সালে আদালতে যান উত্তরপ্রদেশের মেয়ে গুলশন।

আফরিন রেহমান:

২০১৪ সালে বিয়ে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পরের বছর বাপের বাড়ি ফেরেন আফরিন। ২০১৬-য় স্পিড পোস্টে তালাক দেন স্বামী। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টে যান জয়পুরের আফরিন।

আতিয়া সাবরি:

বিয়ের তিন বছর বাদে, ২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের আতিয়াকে চিরকুটে লিখে তালাক দেন স্বামী। তিন তালাক মেয়েদের মৌলিক আধিকারের বিরোধী, এই দাবি তুলে এ বছর জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি।

সায়রা বানো, আফরিন রহমানরা তিন তালাকের পাশাপাশি বহুবিবাহ, নিকাহ হালালা-র বিরুদ্ধেও সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত সিদ্ধান্ত নেয়, শুধু তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়েই বিচার হবে।

এ দেশে শুধুমাত্র হানাফি মতবাদে বিশ্বাসী সুন্নি মুসলমানরাই তিন তালাক প্রথা মানেন। শিয়ারা একে স্বীকৃতি দেন না। সুপ্রিম কোর্টে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড তিন তালাক রদ করার জোরালো বিরোধিতা করেছিল। তারা আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভোপালে কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছে। বোর্ডে সভাপতি মহম্মদ রাবে হাসান নাদবির যুক্তি, কী ভাবে এই রায় কার্যকর হবে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। দারুল উলুমের মহতমিম মুফতি অবুল কাশিম নৌমানি জানান, ল’ বোর্ডের সিদ্ধান্তই তাঁরা মেনে নেবেন। কিন্তু বোর্ডের সদস্যদের হুঁশিয়ারি, মোদী সরকার যেন এই রায়কে ব্যবহার করে মুসলিমদের ব্যক্তি আইনে হস্তক্ষেপ শুরু না করে। বিজেপি বরাবরই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষে। সে বিষয়েই আগাম সতর্ক করতে চাইছে মুসলিম কট্টরপন্থী সংগঠনগুলি।

যে অবস্থায়


৯৫ শতাংশ বিবাহবিচ্ছিন্না কোনও খোরপোশ পান না


৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই তালাক


৪৩.৫ শতাংশ বিবাহবিচ্ছিন্নার বয়স ১৮ থেকে ২১ বছর


১১ শতাংশ বিবাহিত মহিলা বিবাহবিচ্ছিন্না বা পরিত্যক্তা

মুসলিম মহিলা আন্দোলনের সমীক্ষা অনুযায়ী

রুখসানা আরও মনে করালেন, ‘‘তালাক-এ-হাসান ও তালাক-এ-এহসান এখনও চালু। সেখােনও বিবাহবিচ্ছেদ ল’বোর্ড ও কাজিদের উপরে নির্ভরশীল। ওই দু’টি ক্ষেত্রেও মহিলাদের বঞ্চিত করার অনেক সুযোগ রয়েছে।’’ তিন তালাকের বিরুদ্ধে লড়াই করা ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের জাকিয়া শোমান তাই বলছেন, ‘‘লড়াই সবে শুরু। এখনও অনেক দূর যেতে হবে।’’

Triple Talaq Supreme Court of India Unconstitutional Illegal তালাক সুপ্রিম কোর্ট Muslim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy