বিচার চেয়ে পথে পড়ুয়ারা। ফাইল চিত্র।
এ যেন চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার দশা। সিবিএসই বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রশ্ন ফাঁসের পর বিভাগীয় তদন্তে ফুটে উঠেছে সার্বিক প্রশাসনিক গলদের চিত্রটিই। সিবিএসই কেন্দ্রীয় বোর্ড হওয়ায় স্বভাবতই অভিযোগের আঙুল মোদী সরকারের দিকেই।
মানবসম্পদ মন্ত্রক কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রশ্ন ফাঁস হিমবাহের চূড়ামাত্র। আসল সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। প্রথমত-দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে বানানো সিবিএসই বোর্ড এখন ভারাক্রান্ত অন্যান্য পরীক্ষা নিতে। গোটা দেশে সর্বভারতীয় স্তরে যে ৩২টি জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় তা সামলাতে বছর ভর ব্যস্ত থাকতে হয় সিবিএসই-কে। ফলে দশম-দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসের পরিমার্জন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন, সামগ্রিক পরীক্ষাব্যবস্থার উন্নতি করার মতো বুনিয়াদি বিষয়গুলি কার্যত গুরত্ব হারিয়েছে এই কেন্দ্রীয় বোর্ডের কাছে। যে কারণে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদেরই। সমস্যাগুলি নতুন নয়। কেবল প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ওই সমস্যাগুলিকে সামনে এনে দিল।
কেন্দ্র অবশ্য বলছে, সিবিএসই-কে ভারমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। গত বছরই গঠন হয়েছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। যা ২০১৯ সাল থেকে সিবিএসই-র পরিবর্তে সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া শুরু করবে। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, এর অর্থ হল, যা হবে তা নতুন সরকারের আমলে হবে। মোদী সরকার চার বছর ধরে কেন পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বহু ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেও কেন গত চার বছরে সরকার শিক্ষা নীতি নিয়ে আসতে পারল না তা নিয়ে সরব হয়েছেন কপিল সিব্বলের মতো প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীরা।
দ্বিতীয়ত, গত সেপ্টেম্বরে গুজরাত ক্যাডারের আমলা অনিতা করবাল চেয়ারম্যান হিসাবে কেন্দ্রীয় বোর্ডে যোগ দেন। তার আগে পাক্কা দু’বছর শীর্ষ কর্তার অভাবে দিশাহীনতায় ভুগেছে ওই প্রতিষ্ঠান। দায়িত্ব নেওয়ার পরে এটিই প্রথম বড় পরীক্ষা ছিল অনিতার। যাতে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিমত কেন্দ্রের।
কেন্দ্রীয় বোর্ডের এই গাফিলতিতে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী দ্রুত বিভাগীয় তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে। প্রাথমিক ভাবে মন্ত্রক বলছে, কেন্দ্রীয় বোর্ড হওয়ায় ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়াকেই দায়ী করা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বোর্ডের দৈনন্দিন কাজকর্মে। শুধু দশম-দ্বাদশ নয়, সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলিতেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠছে ফি বছর।
সিবিএসই যে এই সমস্যায় পড়তে পারে তা ১৯৮৬ সালেই বুঝেছিলেন শিক্ষাবিদেরা। তখন যে শিক্ষানীতি তৈরি হয়েছিল তাতে প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য একটি পৃথক বোর্ডের সুপারিশ করা হয়। বিজেপির অভিযোগ, গত ত্রিশ বছরে সেই বোর্ড গঠনে উদ্যোগ নেয়নি কোনও সরকার। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাও ২০১৭ সালে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বিল সংসদে পাশ হয়। যা প্রথম কাজ শুরু করবে ২০১৯ সালে। ওই বছর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্য জয়েন্ট ও মেডিক্যালের জন্য সর্বভারতীয় এনইইটি পরীক্ষা নেবে পৃথক ওই সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy