E-Paper

সরকারি হস্তক্ষেপ কি সাহিত্য অকাদেমিতেও

অকাদেমির একাংশের মতে, সংস্কৃতি মন্ত্রক তথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখন সরাসরি নজরদারি রাখবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে সাহিত্য অকাদেমির কাজকর্ম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২৩

—প্রতীকী চিত্র।

আরএসএস তথা বিজেপির ভাষা ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান’ নীতির ঘণ্টা সাহিত্য অকাদেমির করিডরেও শোনা যাচ্ছে কি না, তাই নিয়ে আশঙ্কা এবং বিতর্ক তৈরি হল। এর সূত্রপাত সম্প্রতি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ঘোষণাকে ঘিরে। দিল্লির রবীন্দ্র ভবনে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার জন্যে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের নির্দেশেই এমন ঘটেছে বলে সূত্রের খবর। স্বশাসিত অকাদেমির কাজে কেন্দ্রের এমন ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে সাহিত্যিক মহলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

অকাদেমির সদস্যদের একাংশের দাবি, মন্ত্রকের এই আচরণ সংস্থার স্বশাসনকে খর্ব করছে। এ ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মতামত জানিয়েছেন সাহিত্য অকাদেমির প্রাক্তন সচিব তথা কেরলের কবি কে সচ্চিদানন্দন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘কী লজ্জাজনক ব্যাপার, জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত এগ্‌জ়িকিউটিভ বোর্ড অনুমোদন করে দেওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় সরকার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ঘোষণা আটকে দিল! আমি আনন্দিত যে এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটার অনেক আগেই আমি বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছি। অকাদেমির স্বায়ত্তশাসন হারানোর ব্যাপারে আমাদের যে আশঙ্কা ছিল, তা-ই সত্যি প্রমাণিত হল। গণতন্ত্রের শেষ স্তম্ভটিরও পতন হল’।

সাহিত্য অকাদেমির সচিব কে শ্রীনিবাস রাও অবসর নেওয়ার পরে সেই পদে সম্প্রতি অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন পল্লবী হোলকর। যিনি ২০১১ ব্যাচের আইএএস, সিএজি থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রকের ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত হয়েছেন। অকাদেমির একাংশের মতে, সংস্কৃতি মন্ত্রক তথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখন সরাসরি নজরদারি রাখবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে সাহিত্য অকাদেমির কাজকর্ম। অকাদেমির জেনারেল কাউন্সিল পাঁচ বছরের জন্য তৈরি হয়। বর্তমান কাউন্সিলের মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত। অনেকে এমন আশঙ্কাও করছেন যে, সময়ের আগেই সেটা ভেঙে দিয়ে নতুন করে কাউন্সিল তৈরি করা হবে, যাতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকে। এমনটাও মনে করা হচ্ছে পুরস্কার যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বাছাই করা লেখকরাই পান, সে জন্য বাছাই ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কারও করা হতে পারে।

এখন পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং পক্ষপাতহীন বলেও দাবি করছেন অকাদেমির এই অংশ এবং লেখক মহল। এখন যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে বিভিন্ন লেখকের পাঠানো বইয়ের বাছাই তিনটি স্তরে হয়। প্রতিটি ভাষার জন্য পৃথক পৃথক প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়। সেই তালিকা যায় অকাদেমির পরামর্শদাতা কমিটির কাছে। তার পরে যায় অকাদেমি-নিযুক্ত তিন সদস্যের জুরি কমিটির কাছে। সেটিই চূড়ান্ত কমিটি। এই কমিটিতে তিন জুরি ছাড়াও থাকেন এক জন আহ্বায়ক, যিনি মতামত দিলেও বইটির চূড়ান্ত নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। কোন বই পুরস্কৃত হবে, তা নির্ধারিত হয় ওই তিন জনের মধ্যে ভোটে। অর্থাৎ হয় তিন জনের ঐকমত্যে অথবা ২:১ ভোট প্রাপ্তির হিসাবে। প্রতিটি ভাষার ক্ষেত্রেই এই নিয়ম। এর ফলে কেন্দ্র ইচ্ছা করলেই তার পছন্দের ব্যক্তিকে পুরস্কার দিতে পারে না। অনেক ধাপ বা স্তর পেরিয়ে এক জন পুরস্কার প্রাপকের নাম উঠে আসে। এ বার যদি সংস্কারের নামে এই এতগুলো কমিটি বা স্তর উঠিয়ে দিয়ে একটি মাত্র কেন্দ্রীয় কমিটিকে রাখা হয়, তা হলে রাজ্যগুলির মতামত প্রকাশের জায়গা খর্ব হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে বলে অনেকের মত।

যদিও সাহিত্য অকাদেমির পক্ষ থেকে এই ধরনের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরস্কার প্রদানের গোটা প্রক্রিয়াকে ‘আরও স্বচ্ছ’ করার প্রচেষ্টা চলছে। সাহিত্য অকাদেমি, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, ললিত কলা অ্যাকাডেমি এবং ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাকে একটি চিঠি দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রক মনে করিয়ে দিয়েছে, ২০২৫-’২৬-এর জন্য এই অ্যাকাডেমিগুলির সঙ্গে মন্ত্রকের চুক্তিপত্র সই হয়েছে। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছে পুরস্কারগুলির কাঠামো পুনর্বিন্যাস করার কাজ শুরু করাহবে সংস্কৃতি মন্ত্রকের সঙ্গেআলোচনার মাধ্যমে।

প্রশ্ন উঠছে, এই পুনর্বিন্যাসের কাজের ফলাফল আগামী বছরের পুরস্কারের ক্ষেত্রে দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু এই বছরে কেন সমস্ত রাজ্যের জুরির চূড়ান্ত প্রস্তাব অকাদেমির কার্যনির্বাহী বোর্ডে পেশ করার পরেও ঘোষণা করা হল না? এই তালিকায় কোনও বদল হবে কি না, তাই নিয়ে জল্পনাই এখন তুঙ্গে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sahitya Akademi Award Sahitya Academy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy