E-Paper

রণনীতি ব্যর্থ, বিহার বিপর্যয়ের পরে প্রশ্নে রাহুলের অনুপস্থিতি

বিজেপির দাবি, রাহুল গান্ধী ফের বিদেশ সফরে। শুক্রবার জওহরলাল নেহরুর জন্মবার্ষিকীতে দিল্লির শান্তিবনে সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেও রাহুলকে সেখানে দেখা যায়নি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
রাহুল গান্ধী।

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

বিহারের নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ দু’মাস তাঁকে বিহারে দেখা যায়নি! ওই সময় তিনি দক্ষিণ আমেরিকা সফরে চলে গিয়েছিলেন। শুক্রবার বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের যখন ফল প্রকাশ হচ্ছে, সে সময়ও তাঁকে দিল্লিতে দেখা গেল না।

বিজেপির দাবি, রাহুল গান্ধী ফের বিদেশ সফরে। শুক্রবার জওহরলাল নেহরুর জন্মবার্ষিকীতে দিল্লির শান্তিবনে সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেও রাহুলকে সেখানে দেখা যায়নি। রাহুল গান্ধী কোথায়? প্রশ্ন করলে কংগ্রেস নেতাদের মুখে কুলুপ। যদিও নিজের দল এবং জোটের বিপর্যয়ের পরে রাত সাড়ে ন’টায় প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান রাহুল। নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘‘বিহারের এই ফলাফল চমকে দেওয়ার মতো। আমরা এমন এক ভোটে জিততে পারিনি, যেটা শুরু থেকে নিরপেক্ষ ছিল না।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘এই লড়াই সংবিধান ও গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই। কংগ্রেস এবং ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ এই ফলাফল গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াইকে আরও জোরদার করবে।’’

তিনি দেশে থাকুন বা বিদেশে, বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে মহাগঠবন্ধন তো বটেই, কংগ্রেসেরও ভরাডুবির পরে ফের রাহুল গান্ধীর ‘এই আছি এই নেই’ রাজনীতি নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠল। তাঁর ভোট চুরি ও সামাজিক ন্যায়ের রণনীতি বিহারে কাজ করেনি। ফলে রাহুল গান্ধীকে ভবিষ্যতে রণনীতি পাল্টাতে হবে কি না, নতুন রণনীতি কী হবে, সেই সব কোনও প্রশ্নেরই জবাব ‘টিম রাহুল’-এর কাছে নেই। বিজেপি আজ কটাক্ষ করেছে, ‘রাহুল গান্ধী ৯৫-তম নির্বাচনী হারের রেকর্ড করলেন! হারের জন্য ট্রফি থাকলে তাঁর আলমারি ভর্তি হয়ে যেত!’ সন্ধ্যায় বিজেপি সদর দফতরে বিজয় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আমার ভয় যে, এর পরে কংগ্রেসে একটা বড় ভাঙন ধরবে।’’

মুখে ‘ভোট চুরি’র কথা বললেও বিহারের ফলাফলে স্তম্ভিত কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে তিনটি কারণ চিহ্নিত করছেন। এক, ‘সামাজিক ন্যায়’-এর নীতি নিয়ে কংগ্রেসবিহারে দলিত, ওবিসি বা অনগ্রসর এবং ইবিসি বা অতি অনগ্রসরদের কাছে টানার যে চেষ্টা করেছিল, সেই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। দুই, ‘ভোট চুরি’ নিয়ে অভিযোগ কোনও কাজকরেনি। তিন, প্রার্থী বাছাইতেও গন্ডগোল হয়েছে।

পাঁচ বছর আগে ২০২০-র বিহার বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ৭০টি আসনে লড়ে ১৯টি আসনে জিতেছিল। এ বার কংগ্রেস আসন বণ্টন নিয়ে প্রবল দর কষাকষির পরে ৬১টি আসনে লড়ে মাত্র ৬টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেস নেতারা এত খারাপ ফল দেখে হতবাক। ময়না তদন্ত করতে বসে তাঁদের মত, বিহারে এসআইআর শুরু হওয়ার পরে রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদব ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ করেছিলেন, তাতে সাড়াও মিলেছিল। মহাগঠবন্ধনের পক্ষে আবহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় ‘ভোট চুরি’ ভোটারদের কাছে কোনও ইস্যুই ছিল না। ১ সেপ্টেম্বর পটনায় ভোটার অধিকার যাত্রা শেষের পরে পাক্কা দু’মাস রাহুল বিহারে যাননি। এই দু’মাসে কংগ্রেস-আরজেডির মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে বিবাদ তৈরি হলেও তিনি হস্তক্ষেপ করেননি। বিহারের কংগ্রেসের নেতাদেরর নালিশ, ১ সেপ্টেম্বরের পরে ২৯ অক্টোবর রাহুল-তেজস্বী ফের বিহারে এক সঙ্গে জনসভা করেন। এই দু’মাসে ভোটার অধিকার যাত্রা-র ফলে বিরোধীদের পক্ষে যে হাওয়া তৈরি হয়েছিল, তা উধাও হয়ে যায়। বিহার কংগ্রেসের এক নেতার অভিযোগ, ‘‘বিহারে ভোটগ্রহণের ঠিক আগে রাহুল গান্ধী হরিয়ানার ভোট চুরি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বিহারের ভোটের পরে একই রকম ভোট চুরির তথ্য সামনে আসবে। তাতে ভুল বার্তা গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, আমরা আগেই হার মেনে নিয়েছি।’’

রাহুল গান্ধী দলিত, ওবিসি, ইবিসি ভোটকে পাখির চোখ করে জাতগণনার জাবি তুলেছিলেন। বিহারেও এই ভোটব্যাঙ্ককে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু বাস্তবে তা কাজ করেনি। উল্টে সামান্য যে উচ্চবর্ণের ভোট ছিল, তা-ও সরে গিয়ে থাকতে পারে বলে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন। যার অর্থ, রাহুলের দুই প্রধান কৌশল— সামাজিক ন্যায়ের আশ্বাস ও ভোট চুরির অভিযোগ ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী তারুর বিহারের ফলপ্রকাশের আগেই অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপির বিভাজনের নীতির মোকাবিলা করতে গিয়ে কংগ্রেস অতিরিক্ত বামপন্থী হয়ে পড়ছে। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, ভোটের রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ কৃষ্ণ আল্লাভুরুকে বিহারের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েও রাহুল ভুল করেছেন। প্রার্থী বাছাইতেও গণ্ডগোল হয়েছে। কংগ্রেসের ৬১ জনের মধ্যে অন্তত ১০ জন বিজেপি, জেডিইউ বা এলজেপি থেকে ঘুরে আসা প্রার্থী ছিল।

এর পরেও কংগ্রেস নেতাদের দাবি, তাঁরা এতখানি খারাপ ফল আশা করেননি। কংগ্রেসের নেতারা ইতিমধ্যেই ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন। বিহারে কংগ্রেসের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক অশোক গহলৌতের যুক্তি, ‘‘ভোটের মধ্যেই ১ কোটি ৩৫ লক্ষ মহিলাকে ১০ হাজার টাকা করে বিলি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কিছু বলেনি। এ-ও এক রকম ভোট চুরি। বিজেপি অকল্পনীয় মাত্রায়অর্থ খরচ করেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rahul Gandhi Bihar Assembly Election 2025 Congress

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy