প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে ২ কোটি চাকরির। এই এগারো বছরে যা সব মিলিয়ে হওয়ার কথা ২২ কোটি। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এগারো বছরের শাসনকালে সেই চাকরির স্বপ্ন এসে ঠেকেছে ২২ লাখে! রাজনৈতিক সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ দফতরই আজ জন-অভিযোগ, কর্মিবর্গ এবং আইন ও ন্যায় মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটিকে দেওয়া রিপোর্টে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। সূত্রের আরও খবর, সরকারের দেওয়া এই রিপোর্টের বেশ কিছু অসঙ্গতি এবং অসম্পূর্ণ তথ্যে অসন্তুষ্ট কমিটির বিরোধী সাংসদরা। তাঁরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে লিখিত জবাব চেয়েছেন। ওই কমিটির চেয়ারম্যান, বিজেপির ব্রিজলাল দফতরের সচিব রচনা শাহকে জানিয়েছেন, প্রশ্নগুলির লিখিত জবাব যেন দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, আজ বৈঠকে ডিএমকে-র সাংসদ পি উইলসন প্রশ্ন তোলেন, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের অনেক পদ বিলুপ্ত হয়েছে। এই পদের সংখ্যা কত? পদ বিলোপের কারণ কী? তাঁর হিসাব মতো, ২০১৪ সাল থেকে (অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে) গ্রুপ সি এবং ডি পদে ২২ কোটি আবেদনপত্র জমা হয়েছে। পদ ছিল মাত্র ৭.২২ লাখ। উইলসনের বক্তব্য, যদি সব পদ ভর্তিও হয়ে যায়, তাও বিপুল সংখ্যক আবেদনকারী বেকার থেকে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে? তিনি জানতে চান, চুক্তিবদ্ধ নিয়োগের সংখ্যা বেড়েছে। এই মুহূর্তে কত চুক্তিবদ্ধ নিয়োগ হয়েছে, তার হিসাব দেওয়া হোক। সূত্রের খবর, উইলসন বৈঠকে বলেন, নতুন ক্যাডার তৈরি করা হয়েছে ‘ল্যাটারাল এন্ট্রি’র মাধ্যমে। এই ধরনের নিয়োগের সংখ্যা কত এবং নিয়োগের পদ্ধতি কী?
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেবে তাঁর সরকার। সেই হিসাব ধরলে গত এগারো বছরে ২২ কোটি চাকরি হওয়ার কথা। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় রিপোর্টে যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, টেনটুনে ২২ লাখ চাকরি পেয়েছেন। সূত্রের খবর, বলা হয়েছে ২০১৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ইউপিএসসি-র মাধ্যমে ৬৮,২২৫ জন, এসএসসি-র মাধ্যমে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৫১ জন, রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে ৫ লাখ ৮ হাজার ৬৯৯ জনের চাকরি হয়েছে। ২ লাখ ৯৫২টি পদের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে চলতি বছরে, সেগুলিও ভর্তি হয়ে যাবে। পদোন্নতির মাধ্যমে ৭ লাখ ৮০ হাজার ৪১টি খালি পদ ভর্তি হয়েছে। তবে পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্য পদ ভর্তি হওয়ার হিসাব দেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। তার আগের হিসাব অর্থাৎ (২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত) দেওয়া হয়নি। সূত্রের খবর, এই নিয়ে বৈঠকের মধ্যে কর্মিবর্গ দফতরের সচিব রচনা শাহের কাছে প্রশ্ন তোলেন কমিটির সদস্য সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁর বক্তব্য, ২০১১ সাল থেকে তিনি এই কমিটির সদস্য। কখনও এমন অসম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়নি। কেন এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব হল, প্রশ্ন তাঁর। আগের হিসাব জানতে চেয়েছেন তিনি।
২০২২-এর প্রাপ্ত পরিসংখ্যানেই দেখা গিয়েছিল, বছরে দু’কোটি চাকরি দূর, হয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ চাকরি। চব্বিশের লোকসভাকে নজরে রেখে তখন বিরোধীরা ঝাঁপিয়েছিলেন বিষয়টি নিয়ে। তখন মোদী প্রতিশ্রুতি দেন, পরের দেড় বছরে ১০ লাখ সরকারি চাকরি দেওয়ার। তখন থেকেই ‘রোজগার মেলা’ নাম দিয়ে, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে মোদী নিজে নিয়োগপত্র বিলি শুরু করেন। আজ সরকারি রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোজগার মেলার মাধ্যমে মোট ১০ লাখ নিয়োগপত্র বিলি করা হয়েছে। সুখেন্দুশেখরের প্রশ্ন, কোন বিভাগে, কী পদে, কোন প্রক্রিয়ায় এই চাকরি দেওয়া হয়েছে? তাঁর অভিযোগ, তথ্য চাপা হচ্ছে।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, রোজগার মেলার মাধ্যমে বিজেপির বাছাই করা লোকজন এবং বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বেশি নিয়োগ হয়েছে। তাই তথ্য স্পষ্ট ভাবে দেওয়া হচ্ছে না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)