E-Paper

ভোটার বাদ ও যোগ নিয়ে প্রশ্ন, কিন্তু ধরবে কে?

বিরোধী শিবিরের সূত্রের দাবি, নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি ভোটার তালিকা থেকে বেছে বেছে বিজেপি বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি থেকে খাঁটি ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে দিচ্ছে। অন্তত নির্বাচনের সময়ে ভোটারদের একটা অংশ যাতে ভোটার তালিকার বাইরে থাকে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:২৬

—প্রতীকী চিত্র।

‘ভোট চুরি’ হচ্ছে। কিন্তু সংগঠনের দুর্বলতা, দলের কর্মীদের অভাব এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ না থাকায় সেই ‘ভোট চুরি’ রোখা যাচ্ছে না। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার পরে বিহারেও বিরোধী জোটের ভরাডুবির পরে কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবিরের নেতারা এমনই মনে করছেন।

বিরোধী শিবিরের সূত্রের দাবি, নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি ভোটার তালিকা থেকে বেছে বেছে বিজেপি বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি থেকে খাঁটি ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে দিচ্ছে। অন্তত নির্বাচনের সময়ে ভোটারদের একটা অংশ যাতে ভোটার তালিকার বাইরে থাকে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেমন বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইএর-এর খসড়া তালিকা প্রকাশের সময়ে ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষের নাম বাদ পড়েছিল। তার পরে চূড়ান্ত তালিকায় আরও ৩.৬৬ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ যায়। এই ৩.৬৬ লক্ষ ভোটারের মধ্যে খাঁটি ভোটার থাকলেও তাঁদের কেউ নাম বাদ দেওয়া নিয়ে আপত্তি তুলে ফের নাম যোগ করার আবেদন করার সুযোগ পাননি। কারণ তত দিনে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। পরে তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় যোগ হলেও তাঁরা এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ হারালেন। ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গেও একই ভাবে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ককে বেছে বেছে এই ভাবে বাদ দেওয়া হতে পারে বলে বিরোধীদের আশঙ্কা।

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, প্রথমে মহারাষ্ট্র, তারপরে হরিয়ানা, এ বার বিহারে ভোটার তালিকায় কারচুপি হয়েছে। যখন তা হয়েছে, সে সময় কংগ্রেস বা অন্য বিরোধীদের নিচুতলায় সংগঠন ও সক্রিয়, প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে তা রোখা যায়নি। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে টনক নড়েছে। তাই মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার ভোটের দীর্ঘ সময় পরে রাহুল গান্ধী তথ্যপ্রমাণ দেখিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। ভোটের আগে বা ভোটগ্রহণের সময় দলের বুথ স্তরের কর্মী বা পোলিং এজেন্টরা কী করছিলেন, তার উত্তর দিতে পারেননি। কংগ্রেসের এক পোড়খাওয়া নেতার মতে, ‘‘বিহারে ভোটার অধিকার যাত্রা না করে রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদবের বুথ স্তরে ভোটার অধিকার রক্ষা করার দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল।’’

হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা আশিস দুয়া ছয় বছর এআইসিসি-র সচিব হিসেবে মহারাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দলের বুথ স্তরের কর্মী, পোলিং এজেন্ট, ভোট গণনা এজেন্টরা যুক্ত থাকেন। ভোটার তালিকা তৈরি, ভোটগ্রহণ থেকে গণনার সময় তাঁরা যদি নজরদারি না করে সব কিছু মেনে নেন, তা হলে পরে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে লাভ হয় না। যদি দেখা যায়,নিচু স্তরে সেই নজরদারি ব্যবস্থা কাজ করছে না, তা হলে আগে নিজের ঘর গোছাতে হবে।’’

আজ কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি দাবি করেছে, বিহারে এনডিএ যে ২০২টি আসনে জিতেছে, তার মধ্যে ১২৮টি আসন এসআইআর-এর মাধ্যমে ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে জিতেছে। এই ১২৮টি কেন্দ্রে যত ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, তার থেকে এনডিএ প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান কম। বাদ যাওয়া ভোটাররা বাদ দিলে ফল অন্য রকম হত। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, মহারাষ্ট্রে বিজেপি ১৪৯টি আসনে লড়ে ১৩২টি আসনে জিতেছিল। অর্থাৎ ৮৮.৫% জয়ের হার। বিজেপি বিহারে ১০১টি আসনে লড়ে ৮৯টি আসনে জিতেছে। এখানেও ৮৮.১১% ‘স্ট্রাইক রেট’। এ দেশে এই জয়ের হার অসম্ভব। ১৯৮৪-র লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস রেকর্ড আসন জিতলেও এত জয়ের হার ছিল না।

বিহারের ভোটে ভরাডুবি নিয়ে শনিবার সকালে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে গিয়ে রাহুল গান্ধী, সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল, বিহারের ভারপ্রাপ্ত নেতা কৃষ্ণ অল্লাভুরু, কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেনরা বৈঠক করেন। তারপরে তাঁরা ফের ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন। বেণুগোপালের দাবি, বিরোধী জোটের কোনও শরিক এই ফল প্রত্যাশা করেননি। তাঁরা দাবি করেছেন, দু’এক সপ্তাহের মধ্যে‘ভোট চুরি’-র সমস্ত তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হবে।

ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে আম্পায়ারের দিকে আঙুল তুলে কি লাভ হবে? ‘ভোট চুরি’ নিয়ে রাহুল গান্ধীর প্রচারের সঙ্গে যুক্ত কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘বিহারে এসআইআর-এর সময়ই ভোট চুরি আটকানো উচিত ছিল। বুথ স্তরের এজেন্ট বা বিএলএল-দের অভাব ও তাঁদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে তা সম্ভব হয়নি। বিহারের ৭.৮৯ কোটি ভোটারের মধ্যে থেকে প্রথমে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ যায়। এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত, ৭ লক্ষ ভোটারের একাধিক জায়গায় নাম রয়েছে বলে বাদ গিয়েছিল। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে স্থানান্তরিত বা বা ঠিকানায় খোঁজ মেলেনি বলে যে ৩৬ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেখানেই কারচুপি হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, বিহারে খসড়া তালিকায় ৭.২৪ কোটি ভোটার ছিলেন। তারপরে চূড়ান্ত তালিকায় আরও ৩.৬৬ লক্ষ নাম বাদ যায়। কেন তার উত্তর মেলেনি। সুপ্রিম কোর্টও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সে দিকে বিএলএ-দের নজর দেওয়া উচিত ছিল। অন্য দিকে প্রায় ২১ লক্ষ নতুন নাম যোগ হয়েছিল। যার মধ্যে ১৪ লক্ষের মতো আঠারো বছর বয়সে পা দেওয়া নতুন ভোটার। বাকিরা কোথা থেকে এল, সেটাও প্রশ্ন।

কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, বিহারে এসআইআর-এর পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৭.৪২ কোটি ভোটারের নাম ছিল। নির্বাচনের সময় কমিশন জানায়, মোট ভোটারের সংখ্যা ৭.৪৫ কোটি। এই তিন লক্ষ ভোটার কোথা থেকে এল? নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, এসআইআর-এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় প্রকাশের পরেওমনোনয়ন জমার শেষ দিনের ১০ দিন আগে পর্যন্ত নতুন ভোটার হিসেবে তালিকায় নাম তোলার আবেদনের সুযোগ ছিল। সেই সময়ই ৩ লক্ষ অতিরিক্ত নাম যোগ হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar Assembly Election 2025 Congress Vote Rigging

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy