নাম যোগ করার আর্জির তুলনায় ছয় গুণ নাম বাদ দেওয়ার দাবি! বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জনের প্রথম দফায় ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছিল। গত ৩০ দিনে তাঁদের মধ্যে থেকে ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ তালিকায় নাম যোগ করার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তার প্রায় ছয় গুণ আর্জি জমা পড়েছে ওই খসড়া ভোটার তালিকা থেকে আরও ১ লক্ষ ৯৭ হাজারের বেশি মানুষের নাম বাদ দেওয়ার জন্য। এই সব আর্জি ও আপত্তিই এসেছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে থেকে।
নির্বাচন কমিশনের এই তথ্যের পরে নতুন করে বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, এত নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জমা পড়ছে কেন? রাজনৈতিক শিবিরের যুক্তি, ভোটাররা নিজের নাম ভোটার তালিকা নাম বাদ পড়লে আর্জি জানান। সাধারণ মানুষ গোটা ভোটার তালিকায় কে সঠিক ভোটার, কে নয়, তা নিয়ে মাথা ঘামান না। কারও নাম নিয়ে আপত্তিও জানান না। তা হলে এত ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার আর্জি জমা পড়ছে কেন? রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, সাধারণ ভোটারদের নামে আপত্তি জমা পড়লেও এর পিছনে আসলে রাজনৈতিক মদত রয়েছে। দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঠিক এ ভাবেই বিজেপির কর্মীরা আম আদমি পার্টির ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। বিহারেও সম্ভবত সেই কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সেই কৌশল সফল হলে বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা থেকে আরও ২ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়তে পারে। কারণ এই আর্জি-আপত্তি জানানোর জন্য ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের অবশ্য দাবি, এসআইআর-এর নির্দেশিকাতেই বলা হয়েছে, খসড়া তালিকা থেকে কোনও ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার আগে মহকুমাশাসক পদমর্যাদার ইআরও (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার)-কে সেই ভোটারের বক্তব্য শুনতে হবে। তাঁরা লিখিত নির্দেশিকা দিলেই নাম বাদ যাবে। এর বিরুদ্ধেও ভোটাররা জেলাশাসক বা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে আবেদন জানাতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় পরিমার্জন বা এসআইআর (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিসন) শুরু করে ১ অগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। জানুয়ারি মাসে বিহারে প্রায় ৭.৯ কোটি মানুষ ভোটার তালিকায় ছিলেন। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, তাতে ৭.২৪ কোটি মানুষ রয়েছে। প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত। ৩৬ লক্ষ পাকাপাকি ভাবে অন্যত্র স্থানান্তরিত। বাকি ৭ লক্ষের মতো মানুষের নাম একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় রয়েছে বলে বাদ পড়ে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাদ পড়ে যাওয়াদের মধ্যে থেকে কেউ চাইলে উপযুক্ত নথি-সহ নাম যোগ করার আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কেউ ভোটার তালিকায় অন্য কারও নাম থাকা নিয়ে আপত্তি থাকলেও তা বাদ দেওয়ার দাবি জানাতে পারবেন।
এত দিন নির্বাচন কমিশন এমন কত নাম যোগ করার আর্জি ও বাদ দেওয়ার দাবি জমা পড়েছে, তার মোট সংখ্যা জানাচ্ছিল। আলাদা ভাবে কোনটির সংখ্যা কত জানাচ্ছিল না। আজ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১ অগস্ট দুপুর থেকে ৩০ অগস্ট সকাল পর্যন্ত ২৯,৮৭২টি নাম যোগ করার জন্য আবেদন জমা পড়েছে। অন্যের নাম নিয়ে আপত্তি জমা পড়েছে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭৬৪টি। এর সবই সাধারণ ভোটারদের আবেদন।
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কাদের নাম কেন বাদ পড়েছে, তার বুথ ভিত্তিক তালিকা প্রথমে নির্বাচন কমিশন প্রকাশই করেনি। সুপ্রিম কোর্ট ১৪ অগস্ট এই নির্দেশ দেওয়ার পরে কমিশন তা করেছে। যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের নাম যোগ করার জন্য নথি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে আধার গ্রহণ করতে বলেছে। তাই সময় পেলে আরও বাদ পড়া মানুষ নাম যোগ করার আর্জি জানাবেন। ইতিমধ্যেই আরজেডি সুপ্রিম কোর্টে এই ১ সেপ্টেম্বরের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট সোমবার বা ১ সেপ্টেম্বরই এই আর্জি শুনবে।
বিরোধী শিবিরের দাবি, যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের নির্বাচন ফর্ম-৬ পূরণ করতে বলছে কমিশন। আবার যাঁদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাঁদেরও ফর্ম-৬ পূরণ করতে বলা হয়েছে। যাঁরা এই ফর্ম জমা দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কারা নতুন ভোটার আর কারা বাদ পড়ে যাওয়া, তা আলাদা ভাবে জানানো হোক। বাদ যাওয়া ভোটার, বিশেষ করে অন্যত্র স্থানান্তরিত বলে ভোটারদের জন্য নতুন ফর্ম দেওয়া হোক। তাঁদের জন্য ৩০ দিন সময়সীমা বাড়ানো হোক। কমিশনের বক্তব্য, ১৮ বছরে পা দেওয়ার ফলে যাঁরা নতুন ভোটার হিসেবে নাম তোলার আর্জি জানিয়েছেন, তার সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ৩৩ হাজার মতো। যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়ে নাম তোলার আর্জি জানিয়েছেন, তাঁরা আলাদা। তাঁদের সংখ্যাই ২৯ হাজার ৮৭২ জন। কমিশন সূত্রের যুক্তি, যদি ৬৫ লক্ষ বাদ পড়ে যাওয়াদের মধ্যে ৩০ লক্ষেরও কম আবেদন জমা পড়ে থাকে, তার অর্থ, ভোটার তালিকা পরিমার্জনে বড় ভুলচুক হয়নি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)