E-Paper

শান্তি বৈঠকে কেন নেই মোদী, উঠছে নানা প্রশ্ন

যেখানে তারকাখচিত নেতৃত্বের উপস্থিতি, সেখানে ভারতের এই সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটি থেকে যেন কৌশলগত দূরত্ব রাখা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০০
‘গাজ়া শান্তি সম্মেলন’ মোদী না থাকায় উঠছে প্রশ্ন।

‘গাজ়া শান্তি সম্মেলন’ মোদী না থাকায় উঠছে প্রশ্ন। ফাইল চিত্র।

শর্ম-আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত ‘গাজ়া শান্তি সম্মেলন’-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই শান্তি সম্মেলনটি যেহেতু ট্রাম্পেরই বিশ দফা শান্তি প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে, তাই এর অলিখিত ‘বরকর্তা’ তিনিই, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু মোদী নিজে না গিয়ে কুড়ি দেশের এই শীর্ষ মাপের কূটনৈতিক বৈঠকে পাঠালেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহকে। এর কারণ নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজধানীর রাজনৈতিক শিবিরে।উঠছে প্রশ্নও।

বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর আজ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, “শর্ম–আল–শেখে গাজ়া শান্তি সম্মেলনে যে শীর্ষ নেতারা উপস্থিত রয়েছেন, তাঁদের পাশে ভারতের প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব বড়ই বিসদৃশ লাগছে। বিষয়টি কীর্তিবর্ধন সিংহের যোগ্যতার প্রশ্ন নয়। কিন্তু যেখানে তারকাখচিত নেতৃত্বের উপস্থিতি, সেখানে ভারতের এই সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটি থেকে যেন কৌশলগত দূরত্ব রাখা হচ্ছে। ভারতের বিবৃতিতে অবশ্য একেবারেই এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়নি। আঞ্চলিক সুস্থিতি এবং পুর্নগঠনে ভারতের স্বর এখানে খুবই ফিকে হয়ে গেল।”

ঘটনা হল, ট্রাম্পের কুড়ি দফা গাজ়া শান্তি প্রস্তাবকে প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিক বার স্বাগত জানালেও ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সঙ্কটে ভারতের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানসূত্রের সঙ্গে ওই প্রস্তাবের কোনও সঙ্গতি ছিল না। এ বিষয়ে ভারতের চিরাচরিত নীতি হল— দু’পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছনো যেখানে নিরাপদ এবং স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম কার্যকর প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, যেখানে ইজ়রায়েলের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস সম্ভব হবে। ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি চুক্তিকে প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানালেও কেন তিনি সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র নিয়ে চুপ, তা নিয়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই গাজ়া শান্তি সম্মেলনে নিজে উপস্থিত না থেকে প্রধানমন্ত্রী ‘কৌশলগত দূরত্ব’ বজায় রাখতে চাইলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

পাশাপাশি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দর কষাকষি যখন তুঙ্গে, তখন ট্রাম্পের মুখোমুখি হওয়ার অভিপ্রায় যে মোদীর নেই, তা এর আগেও আরও দু’বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে ব্রিকস শীর্ষ কর্তাদের ভিডিয়ো বৈঠক এবং নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে মোদী নিজে না উপস্থিত থেকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে পাঠিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েক মাস ধরে এবং গত কাল পর্যন্ত যে খামখেয়ালি মন্তব্য করে গিয়েছেন, তা মোদীকে পাশে রেখে করে বসলে নয়াদিল্লির বিড়ম্বনার একশেষ হত বলেই মনে করা হচ্ছে! আর তাই এই এড়িয়ে যাওয়া।

‘গাজ়া শান্তিবৈঠক’-এ যোগ দিতে মিশরের শর্ম এল-শেখে গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ দূত তথা বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ। সেখানে ট্রাম্প ও অন্যান্য রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে তাঁর ছবি সমাজমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। লিখেছেন, ‘গাজ়া শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় এবং আশা প্রকাশ করে যে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।’ শর্ম এল-শেখে বৈঠকের পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ভারতকে ‘অসাধারণ দেশ’ বলে উল্লেখ করে, মোদীর নাম না করে, বলেন, “আমার এক বন্ধু (ভারতে) শীর্ষ পদে রয়েছেন।” এখানেই না থেমে ট্রাম্পের উক্তি, “আমার ধারণা ভারত ও পাকিস্তান মিলেমিশে খুব সুন্দর ভাবে থাকবে।” এই মন্তব্য করার সময়ে সামনেই দাঁড়ানো পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের দিকে তাকান তিনি। মুচকি হাসেন শাহবাজ়ও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gaza Peace Agreement gaza

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy