কথা ছিল রাজ্যসভার সদস্য হয়ে কপ্টার-কাণ্ডে সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণের লক্ষ্য করবেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। কিন্তু প্রকাশ্যে অরুণ জেটলিকে সরিয়ে নিজের অর্থমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে দলের মধ্যেই বিরাট গোলমাল বাঁধিয়ে দিয়েছেন তিনি। একটি সাপ্তাহিককে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, লোকসভা ভোটে নয়াদিল্লি আসনটি থেকে তাঁকে প্রার্থী করার কথা হয়েছিল। কিন্তু পাঞ্জাবি নন বলে অরুণ তাঁকে টিকিট দিতে চাননি।
স্বামীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে একটিও মন্তব্য করেননি জেটলি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। দলের পক্ষ থেকে স্বামীকে সতর্ক করা হয়েছে। মোদী ও অমিত শাহ এই স্বামীকে দিয়েই সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রাজনীতি করতে চান। কিন্তু স্বামীর কাজেকর্মে রেগে আগুন রবিশঙ্কর প্রসাদ থেকে মুখতার আব্বাস নকভির মতো নেতারা। রাজ্যসভায় শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ ছাড়াই তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চলে গিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের পরে বলেন, মোদী তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু। যে কোনও সময়েই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
স্বামী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনকে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আইএমএফের লোক বলে দেওয়ায় খোদ প্রধানমন্ত্রী অস্বস্তিতে। এখানেই শেষ নয়, সুব্রহ্মণ্যম স্বামী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক দেশের আর্থিক সঙ্কট কাটাতে রীতিমতো ব্যর্থ। চিঠিটি কার্যত জেটলির প্রতি তীব্র অনাস্থা। এমনকী, কংগ্রেসের অভিযোগে গলা মিলিয়ে তিনি বলেছেন, বিদেশ থেকে কালো টাকা আনতে ব্যর্থ এই সরকার। ফলে স্বামীর কাজে বিজেপির ভিতরে আলোড়ন শুরু হয়েছে। সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য দলের একাংশের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনকে সরিয়ে তাঁকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর করা হলে রজি হবেন কি না, সে প্রশ্নে স্বামীর জবাব, ‘‘আমি রাজনৈতিক ব্যক্তি। অরাজনৈতিক পদ নেব না।’’ জেটলিকে সরিয়ে অর্থমন্ত্রী হতে কি রাজি? তাঁর মন্তব্য, ‘‘নিশ্চয়ই, আমি রাজি। কারণ এটা রাজনৈতিক পদ।’’
স্বামীকে নিয়ে সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গেও তাঁর অহিনকুল সম্পর্ক ছিল। তখনও সঙ্ঘের একাংশের চাপে স্বামীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করতে হয়েছিল। আইনমন্ত্রী হয়ে তিনি বিচার ব্যবস্থায় এমন সব কাজ করতে শুরু করেছিলেন যে বাজপেয়ী বিপদে পড়ে যান। স্বামী উচ্চশিক্ষিত, খুবই ভাল বক্তা। এত লোকের বিরুদ্ধে সক্রিয় রাজনীতি করলেও কেউ তাঁকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণ করতে পারেনি। এ বারও রাজ্যসভায় তাঁর মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে মোহন ভাগবতের পূর্ণ সমর্থন ছিল। আরএসএসকে খুশি রাখতে তিনি এখন নতুন করে রামমন্দির আন্দোলন শুরু করার কথা বলছেন। উগ্র হিন্দুত্বের উপর বইও লিখেছেন। তবে এই টানাপড়েনে সঙ্ঘের কিছু নেতা পুরনো প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। তাঁরা বলছেন, ২০০০ সালে স্বামী আরএসএস-কেই ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেছিলেন। এমনকী, কিছু দিন আগে তিনিই অভিযোগ আনেন, ন্যাশনাল হেরান্ড মামলায় মোদী তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না! ফলে ‘অনিয়ন্ত্রিত মিসাইল’-কে সনিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে গিয়ে খোদ মোদী বিপদে পরেন কি না— এই আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলে।
জেটলির সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক চিরকালই তিক্ত। বিজেপির অনেকেই মনে করেন, স্বামী ও নভজোৎ সিংহ সিধুকে রাজ্যসভায় নিয়ে এসে জেটলির রাজনৈতিক গুরুত্বকে খর্ব করার চেষ্টা হয়েছে। স্বামীর তীব্র সনিয়া-বিরোধিতার সমর্থক নন জেটলি। দলের মধ্যে তিনি বলেছেন, সনিয়ার দুর্নীতি নিয়ে কাগজে-কলমে প্রমাণ নেই। ফলে বিজেপি কর্মীরা হইচই করতে পারেন, কিন্তু সংসদে এমন কিছু নথিভূক্ত করা উচিত নয়, যার সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।
ফলে স্বামীকে নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। দলের যে প্রবীণ নেতাদের মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য করে দেওয়া হয়েছে, তাঁরাও বলতে শুরু করেছেন স্বামীর বয়স ৭৬। তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে কেন? শেষ পর্যন্ত তাই স্বামীকে নিয়ে মোদী কী করেন, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy