Advertisement
E-Paper

তাজের শহরে ওঁরা যেন জয় আর বীরু, একে অপরের পরিপূরক

এক জন যদি শোলের বীরু হন, অন্য জন যেন জয়। একে অপরের পরিপূরক। এক জন বসতে যাচ্ছেন তো অন্য জন চেয়ার এগিয়ে দিচ্ছেন। এক জন দাঁড়াতে গেলে অন্য জন বাড়িয়ে দিচ্ছেন হাত।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৬
যৌথ প্রচারে রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব। শুক্রবার আগরায়। ছবি: পিটিআই।

যৌথ প্রচারে রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব। শুক্রবার আগরায়। ছবি: পিটিআই।

এক জন যদি শোলের বীরু হন, অন্য জন যেন জয়। একে অপরের পরিপূরক। এক জন বসতে যাচ্ছেন তো অন্য জন চেয়ার এগিয়ে দিচ্ছেন। এক জন দাঁড়াতে গেলে অন্য জন বাড়িয়ে দিচ্ছেন হাত। দু’দলের সম্পর্কে চোরাস্রোতের মধ্যেই রাহুল গাঁধী আর অখিলেশ যাদবের এই শরীরী ভাষাই উন্মাদনা ছড়িয়ে দিল আগরার রোড শোয়ে। আর তাজমহলের শহরে সমাজবাদী পার্টির সমর্থকদের সেই উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিল, পুত্রের উত্থানে এখন শাহজাহানের মতোই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ মুলায়ম।

শীর্ণ যমুনার ধার ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আগরা ফোর্ট। ছেলের হাতে বন্দি শাহজাহানের শেষ আশ্রয়স্থল। সেখান থেকে মেরেকেটে আড়াই কিলোমিটার দূরে দয়ালবাগ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে রোড-শো শুরু করলেন অখিলেশ। তাজের শহর দেখল এক নতুন জুটিকে। দুই নেতাই যুবশক্তির প্রতীক। তাই বেছে নেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে। তাঁদের নিরাশ করেননি ছাত্র-ছাত্রীরা। দু’ধারে উপচে পড়া ভিড়। অধিকাংশই ছাত্র-ছাত্রী। সাড়ে চারটেয় শুরু রোড শো। মাঠ থেকে বেরোতেই দয়ালবাগ লেডিজ হোস্টেল। ভিড়ের দাপটে অখিলেশ-রাহুল ‘ভাইয়া’দের দেখা দায়। নিরাশ ছাত্রীদের মনের কথা বুঝেই হাইড্রোলিক লিফটে করে বাসের ছাদে উঠে এলেন দুই নেতা। ভিড়ও দৌঁড়লও বাসের সঙ্গে। গোটা পথেই বাসের উপরে পড়তে থাকল ফুলের পাপড়ি। যেখানেই ভিড়, সেখানে হাতে হাত দিয়ে বাসের ছাদে উঠে এসেছেন রাহুল-অখিলেশ।

রোড শো-র শেষ প্রান্তে ছিপিটোলায় মাইক হাতে তুলে নিলেন অখিলেশ। নিশানা নরেন্দ্র মোদী। জনতার উদ্দেশে ছুঁড়ে দিলেন প্রশ্ন, ১৫ হাজার টাকাও কি আপনাদের অ্যাকাউন্টে এসেছে? অখিলেশ থামতেই শুরু করলেন রাহুল। বলেন, “মোদীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কালো টাকা ফেরাবেন। সবার অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে ১৫ লক্ষ টাকা। কত টাকা পেয়েছেন আপনারা?” তার পর নিশানায় মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। এর ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কট, বিশেষ করে আগরার ছোট কারখানাগুলি কী ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে— দু’জনের কথায় ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে সে কথা। আর শুধু বিজেপিকে আক্রমণই নয়, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার যুক্তিকেও এ দিন তুলে ধরেন অখিলেশ। বলেন, ‘‘হাত ছেড়েও সাইকেল চালানো যায়। কিন্তু শক্তিশালী হাতের সাহায্য পেলে সাইকেল আরও ভাল চলতে পারে।’’ নতুন জোট, সব বাঁধা কাটিয়ে নতুন সমীকরণ— দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ছবিকেই তুলে ধরছিল। অখিলেশ ও রাহুলের যে যৌথ সঙ্গত লখনউয়ে শুরু হয়েছিল, আজ তার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে আগরায়।

তবে বহু ক্ষেত্রেই দু’দলের নেতাদের মধ্যে মতের অমিল আজও চোখে পড়েছে। রোড-শোর যাত্রাপথ নিয়ে স্নায়ুর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় নেতারা। কংগ্রেস শিবিরের দাবি, রোড শো শুরু হোক আগরা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে। সেখানে কংগ্রেসের নজীর অহমেদ জোটের প্রার্থী। তাঁদের যুক্তি, কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে অখিলেশের প্রচারে গোটা রাজ্যে জোট বার্তা জোরালো হবে। কিন্তু সপা শিবির গোঁ ধরে জানায়, রোড-শো আগরা উত্তর থেকে শুরু হয়ে আগরা দক্ষিণে শেষ হবে। শেষ পর্যন্ত প্রধান শরিকের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় কংগ্রেস। আগরা উত্তরের দয়ালবাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেলা সাড়ে চারটেয় শুরু হয় অখিলেশ-রাহুলের প্রচার। ভগবান টকিজ, সুর সদন, আগরা কলেজ হয়ে ছিপিটোলা চৌরাহায় রোড-শো যখন শেষ হল, ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটা ছুঁইছুঁই।

যাত্রা পথে বার বার মোদীকে আক্রমণ করে এসেছেন রাহুল আর অখিলেশ। কিন্তু রোহিলাখণ্ডের এই অঞ্চলে কুড়ি শতাংশ দলিত ভোটার। যাদের বার্তা দিতে পরশু আসছেন বিএসপি নেত্রী। তবে ভাল ফল করতে সপা-কংগ্রেস চাইছে মুসলিম ভোটের মেরুকরণ। আর সামনে আনা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে স্বচ্ছতার কথা। রোড শোয়ের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- অধ্যাপকের অনেকেই কিন্তু স্বচ্ছতার রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ দেখা গেল। অনেকেই বলছেন, আর একবার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে অখিলেশকে দেখা যেতেই পারে!

Akhilesh Yadav Rahul Gandhi Alliance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy