Advertisement
E-Paper

হ্যাঁ কি না? কলেজে ছাত্রীদের বেমক্কা জবাবে বেকুব রাহুল

প্রশ্ন কিংবা জবাব— বেমক্কা ধেয়ে এলেই মুশকিল। নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রে প্রশ্ন, রাহুল গাঁধীর ক্ষেত্রে জবাব। ক’দিন আগে বিলেতের সাংবাদিক বৈঠকে বেসামাল দেখিয়েছিল মোদীকে। আজ ঘরের মাঠে বেকুব বনলেন রাহুল। স্বচ্ছ ভারত ও মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়ে তাঁর কটাক্ষকে মুখের উপরে নাকচ করে দিল কলেজছাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:১১
অস্বস্তি কাটিয়ে হাসিমুখেই পড়ুয়াদের মাঝে। বেঙ্গালুরুতে। ছবি: পিটিআই।

অস্বস্তি কাটিয়ে হাসিমুখেই পড়ুয়াদের মাঝে। বেঙ্গালুরুতে। ছবি: পিটিআই।

প্রশ্ন কিংবা জবাব— বেমক্কা ধেয়ে এলেই মুশকিল। নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রে প্রশ্ন, রাহুল গাঁধীর ক্ষেত্রে জবাব।

ক’দিন আগে বিলেতের সাংবাদিক বৈঠকে বেসামাল দেখিয়েছিল মোদীকে। আজ ঘরের মাঠে বেকুব বনলেন রাহুল। স্বচ্ছ ভারত ও মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়ে তাঁর কটাক্ষকে মুখের উপরে নাকচ করে দিল কলেজছাত্রীরা। তার পরেও কৃত্রিম হাসিটা রাহুল ঝুলিয়ে রাখলেন ঠিকই, কিন্তু টিভির পর্দায় গোটা দেশ দেখল অশান্তির মেঘ গ্রাস করেছে তাঁকে।

বুধবার বেঙ্গালুরুর প্রথম সারির মহিলা কলেজ মাউন্ট কারমেল-এর ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন রাহুল। কলেজই তাঁকে যুব আইকন হিসেবে আমন্ত্রণ করেছিল। খাতায়কলমে অরাজনৈতিক মঞ্চ। তবু পরিবেশটা সাজিয়েগুছিয়ে রেখেছিলেন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। আবহটাও তৈরিই ছিল। মোদী-অমিত শাহদের গোহারা হারিয়েছে বিহার। অসহিষ্ণুতা নিয়ে অসন্তোষে ফুঁসছে সমাজের বড় অংশ। কাল সংসদ অধিবেশন বসার আগে গা-ঘামিয়ে নেওয়ার চমৎকার সুযোগ। প্রায় দু’হাজার ছাত্রীর সামনে ধূসর রঙের টি-শার্ট, জিন্স আর স্নিকার্সে বেশ সপ্রতিভও দেখাচ্ছিল রাহুলকে। গোল বাধল মোদী সরকারের কাজকর্ম নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে।

রাহুল দাবি করছিলেন, স্যুট-বুটের সরকার সর্বত্র ফেল করছে। শ্রোতাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘সাফাই অভিযান কি কোনও দেশের জাতীয় নীতি হতে পারে? এটা কি কাজ করছে?’’ আশা করেছিলেন, বড় গলায় ‘না’ উত্তর আসবে। কিন্তু না-এর তুলনায় হ্যাঁ-এর জোর বেশি শোনাল। থতমত খাওয়ার তখনই শুরু। সামলানোর চেষ্টা করে রাহুল ফের প্রশ্ন করলেন, ‘‘তাই কি?’’ এ বারে হ্যাঁ-এর জোর আরও বেশি। রাহুল কোনও রকমে বললেন, ‘‘আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি না, যে স্বচ্ছ ভারতে কিছু কাজ হচ্ছে!’’

অস্বস্তি আরও বাকি ছিল। পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত চিত্রনাট্য বদলে ফেলার ক্ষমতাটি রাহুল দৃশ্যত আয়ত্ত করতে পারেননি। ফলে তিনি আবার জানতে চাইলেন, ‘‘মেক ইন ইন্ডিয়া কি কাজ করছে?’’ ফের মিশ্র জবাব এল। রাহুল বললেন, ‘‘তা হলে আপনারা বলছেন মানুষ কাজ পাচ্ছে?’’ এর জবাব শোনার ঝুঁকি অবশ্য আর নেননি তিনি। নিজেই বলে চলেন, ‘‘আমি কিন্তু সরকারের কাজের কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছি না।’’ কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে!

কথাবার্তায় তত চৌকস নন, রাহুলের প্রতি এই অভিযোগ অনেক দিনের। সম্প্রতি কিছু ক্ষেত্রে কিছু চোখা চোখা কথা বলে ভাবমূর্তি খানিক পাল্টেছিলেন। এ দিন আবার সেটা কিছুটা চুপসে গেল। রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ ভাবে ‘হ্যাঁ’ কি ‘না’ প্রশ্ন করে গ্যালারি তাতানো নেতাদের অনেকেরই অভ্যাস। মোদী করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেন। কিন্তু সেগুলো সাধারণত জনসভার দস্তুর। অভিজাত কলেজের মঞ্চ নয়, যেখানে দর্শকাসনে পাঁচমিশেলি পড়ুয়াদের অরাজনৈতিক ভিড়। প্রবীণ এক কংগ্রেস নেতারই আক্ষেপ, ‘‘দর্শকাসনে যারা ছিল, তারা তো কংগ্রেসের কর্মী নয়। ওখানে এ ভাবে প্রশ্ন করাটা বোকামি হয়েছে।’’

অনেকে উল্টো দিকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাঁধা গতের বাইরে প্রশ্ন সামাল দেওয়ার সুনাম মোদী বা মমতারও নেই। বিরোধীদের অভিযোগ, বেমক্কা প্রশ্নের জবাব এড়াতে মোদী সাংবাদিক বৈঠকই করেন না। যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন বৈদ্যুতিন চ্যানেলের ক্যামেরাকে শুধু ডেকে নিতেন। এখন বিদেশ সফরে গেলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সফরসঙ্গী করেন না। মাঝেমধ্যে সাক্ষাৎকার দিলে প্রশ্ন আগে চেয়ে নেওয়া হয়। বিলেতে গিয়ে যেই অবাঞ্ছিত প্রশ্নের মুখে পড়লেন, বেগ পেলেন। আর মমতা আলটপকা প্রশ্নে কতটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারেন, তার দৃষ্টান্ত এত দিনে কিংবদন্তি। মাইক ছেড়ে উঠে যাওয়া, প্রেসিডেন্সির ছাত্রীকে মাওবাদী আখ্যা দেওয়া— এ সব তো আছেই। গোলমেলে প্রশ্ন করলে ‘আপনি তো সিপিএমের লোক’ বলে থামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও বারবার ঘটেছে। জয়ললিতাও সচরাচর সাংবাদিক বৈঠক করেন না। মুখ্যমন্ত্রী থাকলে মায়াবতীর আচরণও সে রকমই।

প্রবীণেরা মনে করাচ্ছেন, ঝটিতি জবাব দেওয়ায় রাহুলের বাবা রাজীব বরং পটু ছিলেন। কংগ্রেসেরই এক নেতার কথায়, ‘‘এ দিন রাজীব থাকলে হয়তো প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করতেন, দেশ স্বচ্ছ হলে এত অসহিষ্ণুতার আবর্জনা কেন?’’ এ সবে দক্ষ ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ীও। অস্বস্তিকর প্রশ্ন এলে এমন হেঁয়ালি করে কথা বলতেন, অর্থ বোঝাই দুষ্কর হতো।

সন্দেহ নেই, কাল সংসদে কংগ্রেস যখন সরকারকে কোণঠাসা করতে চাইবে, তার আগে এই ঘটনা তাদের কিছুটা ব্যাকফুটে নিয়ে গেল। আর অপ্রত্যাশিত অক্সিজেন পেয়ে স্বভাবতই খুশি বিজেপি। রাহুল যে দেশের নাড়ি বোঝেন না, সেটাই এ দিন প্রমাণ হল বলে দাবি করছে তারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, ‘‘রাহুলের বোঝা উচিত মানুষ এখনও ওদের চাইছে না। আমাদেরই পাশে আছে।’’ রাহুল-অনুগামীরা পাল্টা একটা যুক্তি খাড়া করতে চাইছেন অবশ্য। তাঁরা বলছেন, রাহুল তো তবু বিরুদ্ধ-মত শোনার সহিষ্ণুতা দেখাচ্ছেন! মোদী কি সেটা করেন? তাঁর হাবভাব তো স্বৈরাচারীর মতো!

bengaluru college rahul gandhi embarassement women college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy