২৭ জানুয়ারি: অমিত শাহ ও যোগী আদিত্যনাথ যখন প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে একসঙ্গে স্নান করছেন, তখন সংবিধানের প্রণেতা বি আর অম্বেডকরের জন্মস্থান মহূ থেকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে কটাক্ষ করে বলছেন, গঙ্গায় ডুব দিয়ে দারিদ্র্য দূর হয় না।
মধ্যপ্রদেশের মহূতে ‘জয় বাপু, জয় ভীম, জয় সংবিধান’ জনসভা থেকে রাহুল গান্ধী আজ কংগ্রেসের কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন, কংগ্রেসের ‘মিশন’ হল, যেখানে বিজেপি-আরএসএস সংবিধানের অপমান করবে, সেখানেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এটাই মতাদর্শের লড়াই। তাঁর অভিযোগ, আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠাকে ‘আসল স্বাধীনতা’ বলে সংবিধানের অপমান করেছেন। রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে কোনও গরিব, দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসরকে দেখা যায়নি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আদিবাসী বলে তাঁকে রামমন্দিরের অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
কংগ্রেস নেতাদের মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি হাতে অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে। বিজেপির নালিশ, কংগ্রেস রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠায় না গিয়ে রামের অপমান করেছিল। এখন মহাকুম্ভের অপমান করছে। বিজেপির প্রশ্ন, হিন্দুদের ধর্মের প্রতি কংগ্রেসের এত ঘৃণা কেন? বিজেপি তাঁর গঙ্গায় ডুব নিয়ে মন্তব্যকে হাতিয়ার করে রাজনীতি করবে বুঝে খড়্গে আগেই বলে রেখেছিলেন, তিনি কারও আস্থায় আঘাত দিতে চান না। কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে তিনি আগেভাগে মাফও চেয়ে নেন। তার পরেও খড়্গের প্রশ্ন, গঙ্গায় ডুব দিলে দারিদ্র্য দূর হয় কি? পেটে খাবার মেলে কি? তাঁর অভিযোগ, “বিজেপি নেতারা হাজার হাজার টাকা খরচ করে গঙ্গায় ডুব দিয়ে ছবি তোলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।” প্রসঙ্গত, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা ভোটের দিন প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে স্নান করার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিছু দিন আগেই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘অম্বেডকর-অম্বেডকর-অম্বেডকর করা এখন ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। এত বার ভগবানের নাম নিলে স্বর্গবাস হত।’’ অমিত শাহের ওই মন্তব্যের পরেই কংগ্রেস অম্বেডকরের অপমান হয়েছে বলে নতুন করে সংবিধান হাতে মাঠে নামে। দেশ জুড়ে ‘জয় বাপু, জয় ভীম, জয় সংবিধান’ যাত্রা ও জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। কর্নাটকের বেলগাভিতে প্রথম জনসভার পরে আজ অম্বেডকরের জন্মস্থান মহূতে ছিল দ্বিতীয় জনসভা। সেখানে কংগ্রেস সভাপতি পাল্টা কটাক্ষ করে বলেছেন, “মোদী-শাহ এত পাপ করেছেন, যে একশো বার জন্ম নিলেও স্বর্গবাস
হবে না। মানুষের অভিশাপে নরকেই স্থান হবে।”
রাহুল বলেন, “মোহন ভাগবত অম্বেডকর এবং সংবিধানের অপমান করেছেন। তাঁর দাবি, ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা ঝুটো স্বাধীনতা ছিল। এর অর্থ ভাগবত সংবিধান মানেন না। যেদিন সংবিধান শেষ হয়ে যাবে, সেদিন দেশে গরিবদের জন্য আর কিছু থাকবে না।”
জনসভার শেষে রাহুল-খড়্গে দু’জনেই অম্বেডকরের জন্মস্থানে তৈরি স্মৃতিস্মারকে শ্রদ্ধা জানান। তার
পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান দাবি করেন, ওই স্মৃতিস্মারক বিজেপি সরকারের তৈরি। মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ অবশ্য একে মিথ্যে দাবি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
গোটা দেশের কংগ্রেসের নেতাদের পাশাপাশি মহূতে হাজির ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও। তাঁর মতে, সংবিধান রক্ষার লড়াই আসলে গরিবের রুটিরুজির লড়াই। রাহুল গান্ধীও সংবিধান রক্ষার লড়াইকে রুটিরুজির লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়ে অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপি-আরএসএস স্বাধীনতার আগের ব্যবস্থা চালু করতে চায়। যখন গরিবের কোনও অধিকার ছিল না। তারা মানুষকে ফের গোলাম করতে চায়। দেশের সমস্ত ধনসম্পদ আদানি-অম্বানীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই রুটিরুজি মিলছে না। বেসরকারি কলেজে লাখো টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শেখালেও চাকরি মিলবে না। আইআইটি-আইআইএমের পড়ুয়ারা চাকরি পাচ্ছেন না। আদানি-অম্বানীরা চিনের পণ্য ভারতে বেচছেন। তাতে চিনের তরুণদের চাকরি হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)