এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। জাতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে দলিত আইপিএস অফিসার ওয়াই পূরণ কুমারের আত্মহত্যার পরে তাঁর পরিবার এখনও মরদেহের ময়না তদন্তে সায় দেয়নি। পরিবারের দাবি, হরিয়ানা পুলিশের ডিজি শত্রুজিৎ কপূর-সহ অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের গ্রেফতার করতে হবে। সোমবার গভীর রাতে হরিয়ানার বিজেপি সরকার শত্রুজিৎকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও পরিবার ময়না তদন্তে সায় দেয়নি। ফলে পূরণ কুমারের মরদেহের সৎকারও করা যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান বাতিল করতে হল। ১৭ অক্টোবর হরিয়ানার সোনিপতে এই অনুষ্ঠানটি ছিল। আজ হরিয়ানায় পূরণের বাড়িতে গিয়ে রাহুল গান্ধী দাবি তুললেন, ‘‘অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হোক। এই তামাশা বন্ধ হোক। প্রয়াত পুলিশ অফিসারের সসম্মানে সৎকার করতে দেওয়া হোক।’’ বিজেপিকে নতুন করে ‘দলিত বিরোধী’ বলে প্রমাণ করতে আজ তিনি বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষ হরিয়ানার ঘটনা দেখছে।
বিহার ভোটের আগে দলিত ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে বিজেপিকে চাপে ফেলে এনডিএ শরিক চিরাগ পাসোয়ানও পূরণের বাড়িতে গিয়েছেন। কার্যত রাহুলের সুরেই মোদী সরকারের মন্ত্রী চিরাগ বলেন, ‘‘এই পরিবার যদি বিচার না পায়, তা হলে কোনও দলিত পরিবার মূলস্রোতে যোগ দেওয়ার কথা ভাববে না।’’ এর আগে এনডিএ-র শরিক দল আরপিআই-এর দলিত নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অটওয়ালে পূরণের বাড়িতে যান। পরে তিনি হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিংহ সাইনির সঙ্গেও দেখা করেন। তাঁদেরও অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ডিজিকে সাসপেন্ড করতে চাইলেও তাতে তাঁর মুখ্য প্রধান সচিব রাজেশ খুল্লার সায় দেননি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তাঁর একজন আর্দালিকে সাসপেন্ড করার ক্ষমতা নেই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর ও তাঁর আস্থাভাজন খুল্লারই সরকার চালাচ্ছেন।
৭ অক্টোবর পূরণ কুমার নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী হন। আট পৃষ্ঠার ‘সুইসাইড নোট’-এ তিনি হরিয়ানা পুলিশের ডিজি শত্রুজিৎ কপূর, রোহতকের এসপি নরেন্দ্র বিরজনিয়া-সহ আট আইপিএসের বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্থা, দলিত বলে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিলেন। রোহতকের এসপি-কে আগে বদলি করা হলেও ডিজি-কে সদ্য সোমবারে ছুটিতে পাঠানো হয়। পূরণের স্ত্রী, হরিয়ানার আইএএস অফিসার অমনীত কুমারের দাবি, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। ময়না তদন্তের প্রয়োজনে পূরণের দেহ শনাক্ত করার জন্য অমনীতকে নির্দেশ দেওয়া হোক, এই আর্জি নিয়ে চণ্ডীগড় পুলিশের তদন্তকারী অফিসার স্থানীয় আদালতে গিয়েছিলেন। আদালত অমনীতকে বুধবারের মধ্যে তাঁর বক্তব্য জানাতে বলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে অমনীতদের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, প্রাথমিক এফআইআরে অভিযুক্তদের নামও ছিল না। তফসিলি জাতির উপরে অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের ধারাও ছিল না। পরে তা যোগ করা হয়।
আজ রাহুল পূরণের বাড়িতে যান। পরে অভিযোগ তোলেন, ‘‘দেশের দলিত সমাজ মানসিক যন্ত্রণায় রয়েছে। কিন্তু দিল্লি থেকে হরিয়ানায় সরকার চালানো প্রধানমন্ত্রীর মন গলছে না। এমন ঘটনায় দেশের কোটি কোটি দলিত পরিবারের কাছে ভুল বার্তা যায় যে, দলিত হলে দমন করা হবে।’’ রাহুলের দাবি, সাইনি পরিবারকে নিরপেক্ষ তদন্ত ও পদক্ষেপের আশ্বাস দিলেও তা পূরণ করা হয়নি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)