Advertisement
E-Paper

বন্ধ রুটের টিকিট বেচে গুনাগার রেলের

‘রং রুট’ ঠিক নয়। বলা যায় বন্ধ রুট। তবু বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই পথেই ভ্রমণের জন্য টিকিট বেচেছিল রেল। ক্রেতার হয়রানি যা হওয়ার, তা তো হয়েছেই। শেষ পর্যন্ত খেসারত দিতে হচ্ছে রেলকেও।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৫

‘রং রুট’ ঠিক নয়। বলা যায় বন্ধ রুট। তবু বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই পথেই ভ্রমণের জন্য টিকিট বেচেছিল রেল। ক্রেতার হয়রানি যা হওয়ার, তা তো হয়েছেই। শেষ পর্যন্ত খেসারত দিতে হচ্ছে রেলকেও।

এক্সপ্রেস ট্রেনটির রুট পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। তা সত্ত্বেও কেন সেই ট্রেনের সংরক্ষিত আসনে টিকিট বিক্রি করা হল, সেটা এক রহস্য। সেই রহস্যের সমাধান হোক না-হোক, যাত্রী নাকাল হওয়ায় রেল-কর্তৃপক্ষের এক লক্ষ টাকা জরিমানা করল আদালত।

ট্রেনটির নাম উৎকল কলিঙ্গ এক্সপ্রেস। তাতে খড়্গপুর থেকে পুরী যাওয়ার জন্য সংরক্ষিত আসনের টিকিট কেটেছিলেন সুশান্তকুমার সাহা নামে ইছাপুরের এক বাসিন্দা। তিনি টিকিট কেটেছিলেন ব্যারাকপুরে রেলেরই বুকিং কাউন্টার থেকে। কিন্তু সফরের দিন খড়্গপুরে গিয়ে শোনেন, ট্রেনটি অনেক দিন আগেই খড়্গপুর দিয়ে আর চলাচল করছে না। অর্থাৎ ট্রেনটির ওই রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে জেনেও তাঁকে বেমালুম টিকিট বেচেছে রেল। ট্রেন না-পেয়ে ওই দিন তাঁকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত শ্রীক্ষেত্র-সফর হয়েছে সুশান্তবাবুর। কিন্তু রেলের এই মর্মান্তিক রসিকতা মোটেই হজম করেননি তিনি।

পুরী থেকে ফিরে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা ঠুকে দেন ওই যাত্রী। সেখানে রেলের এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু সুরাহা হলেও সেই জরিমানার টাকা আদায় বিলম্বিত হতে থাকে। কারণ, ওই মামলা জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত হয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ফলে বন্ধ রুটের টিকিট কিনে পুরী-যাত্রায় সুশান্তবাবুর যে-হয়রানি হয়েছিল, আইনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ঝক্কি তার থেকে বাড়ল বই কমলো না। তবে সম্প্রতি রেলের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সেখানে চূড়ান্ত বিচারে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ই বহাল রাখা হয়েছে। তাই রেলকে গুনাগার দিতেই হচ্ছে। সুবিচার পেয়েছেন ওই যাত্রীও।

তার আগে তাঁর কতটা ভোগান্তি হয়েছিল, তার বিবরণ দিলেন সুশান্তবাবু। ওই যাত্রী নিজেও পেশায় আইনজীবী। অনুমতি নিয়ে শীর্ষ আদালতে নিজের মামলায় তিনি নিজেই সওয়াল করেছেন। সুশান্তবাবু জানান, ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উৎকল কলিঙ্গ এক্সপ্রেসে খড়্গপুর থেকে পুরী যাওয়ার জন্য ব্যারাকপুরের টিকিট সংরক্ষণ কেন্দ্রে টিকিট কাটেন তিনি। তাঁর যাওয়ার কথা ছিল ১১ অক্টোবর। সুশান্তবাবুর বক্তব্য, সফরের দিন সকালেও তিনি রেলের ১৩৯ নম্বরে ফোন করে জানতে চান, ট্রেন ঠিকমতো চলছে কি না। রেল তখনও নিজেদের ভুলের কথা জানায়নি তাঁকে। ওই এক্সপ্রেস ট্রেন যে আর খড়্গপুর দিয়ে চলছেই না, তা জানানো হয়নি। উল্টে বলা হয়, তিনি যেন ঠিক সময়ে খড়্গপুরে পৌঁছে যান। সুশান্তবাবু তার পরে হাওড়া স্টেশনের অনুসন্ধান অফিসের কাছেও পরিস্থিতি জানতে চান। সেখান থেকেও ওই এক্সপ্রেসের রুট পরির্বতনের কথা জানানো হয়নি।

তার পরে খড়্গপুরে গিয়ে সুশান্তবাবু জানতে পারেন, ট্রেনটি অনেক দিন আগেই ওই রুট পরিবর্তন করে অন্য রুট দিয়ে যাতায়াত করছে। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পরে ওই এলাকায় ট্রেন চলাচলে যে-বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা হয়েছিল, তারই অঙ্গ হিসেবে ট্রেনটিকে ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। রেল কেন সেটা জানাল না, কেন তাঁকে ওই ট্রেনের টিকিট দেওয়া হল, দেওয়া হলেও সফরের দিন তাঁকে সত্যিটা জানানো হল না কেন, সেটা প্রহেলিকা। খড়্গপুরে রেলের দফতরে প্রশ্ন করেও জবাব পাননি তিনি। চূড়ান্ত ভাবে মানসিক ও শারীরিক হয়রানির শিকার হন ওই যাত্রী। তার পরে অন্য একটি ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় কোনও মতে উঠে প্রায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরী পৌঁছন। ফিরে এসে রেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

ট্রেনের দেরি, আসন সংরক্ষণে ঝক্কি, দূরসফরে অখাদ্য খাবার, নিরাপত্তায় ঘাটতি— রেলে যাত্রীদের দুর্ভোগের হাজারো পথ খোলা। তার উপরে বন্ধ রুটের টিকিট বিক্রির এই গাফিলতি অভিনব বলেই মনে করছেন যাত্রীরা। তাঁদের অনেকের প্রশ্ন, পেশায় আইনজীবী সুশান্তবাবু না-হয় আইনি সুলুকসন্ধান জানার সুবাদে শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলেন। অতি সাধারণ যাত্রীরা সেটা কী করে পারবেন? আইনের পথ খোলা, এটা জানলেও দীর্ঘ মামলা লড়ার অর্থ ও সময় ক’জনের আছে? রেলের অবিমৃশ্যকারিতার জন্য আর কত ভাবে ভুগতে হবে যাত্রীদের?

সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। সুশান্তবাবু যেখান থেকে টিকিট কিনেছিলেন, সেই ব্যারাকপুর পূর্ব রেলের অধীন। আর যে-ট্রেনের টিকিট কিনেছিলেন, সেটি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের। এই সুযোগে দুই রেলের মধ্যে বল ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ রেলের হাতে এসে পৌঁছয়নি। ফলে নির্দেশে সর্বোচ্চ আদালত ঠিক কী বলেছে, সেই ব্যাপারে রেলকর্তারা কিছু বলতে চাননি। তবে আদালত যা নির্দেশ দেবে, সেটাই মানতে হবে, জানিয়ে দিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ।

indian rail compensation wrong route ticket amitabha bandyopadhyay wrong ticket consumer forum passenger compensation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy