Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সুর ‘নরম’ রাজীবের! দাবি করল সিবিআই

সারদা-মামলায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) তদন্তে কিছু ‘ত্রুটি’ হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন রাজীব কুমার— দাবি সিবিআইয়ের একটি সূত্রের।

ওকল্যান্ডের অফিস থেকে বেরোচ্ছেন রাজীব কুমার।—ফাইল চিত্র।

ওকল্যান্ডের অফিস থেকে বেরোচ্ছেন রাজীব কুমার।—ফাইল চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ ও রাজীবাক্ষ রক্ষিত
শিলং শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

সারদা-মামলায় রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) তদন্তে কিছু ‘ত্রুটি’ হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন রাজীব কুমার— দাবি সিবিআইয়ের একটি সূত্রের। ওই সূত্রের বক্তব্য, লাগাতার প্রশ্নের মুখে আজ কলকাতার পুলিশ কমিশনার (সিপি) বলেছেন, সিট-এর তদন্তে কিছু ‘গাফিলতি’ হয়েছে। তবে একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন যে, সে জন্য তিনি দায়ী নন। অধীনস্থ অফিসারেরা তাঁকে ‘বিভ্রান্ত’ করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাজীব কুমারের বক্তব্য অবশ্য জানা সম্ভব হয়নি।

রবিবারের পরে আজ রাজীবকে ফের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, গত দু’দিন গোয়েন্দাদের তদন্তের পাঠ দেওয়ার চেষ্টা করলেও আজ তুলনায় অনেক ‘নরম’ ছিলেন রাজীব। কুণাল যে তথ্যপ্রমাণ পেশ করেন, সে ব্যাপারে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। তা ছাড়া, বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার কর্মীরা বিভিন্ন ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, হার্ড ডিস্ক, ক্যাশ বই এবং ডায়েরির কথা সিট-কে জানালেও তাকে যথাযথ গুরুত্ব কেন দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারেও একের পর এক প্রশ্ন করা হয় রাজীবকে। সিবিআই সূত্রের দাবি, রাজীব বলেছেন, সেই সময়ে বিধাননগরের কমিশনার হিসেবে তাঁকে বহু কাজে ব্যস্ত থাকতে হত। তাই সিট-এর প্রতিদিনের কাজ তিনি তদারকি করতে পারতেন না। সেই কাজ মূলত অর্ণব ঘোষ (বর্তমানে মালদহের পুলিশ সুপার) করতেন। প্রয়োজন হলে অর্ণব তাঁর কাছে এসে পরামর্শ নিয়ে যেতেন। তদন্তকারীদের সামনে রাজীবের দাবি, ঠিক যে ভাবে সিট তদন্ত করছে বলে বলা হচ্ছে, ঠিক সে ভাবে তদন্ত হয়নি। তদন্ত থানাস্তরেই করা হয়েছে।

সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, সিট কেন অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, তা জানতে চাওয়া হয় রাজীবের কাছে। তিনি বলেন, কোন কোন প্রভাবশালীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার তার একটি

তালিকা তিনি মুখবন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের ডেকে পাঠানোর সুযোগ পাননি।

আরও পড়ুন: ওকল্যান্ডের কাছেই থাকেন প্রতারিতেরা

আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের দাবি সঠিক পথেই এগোচ্ছে তারা​

সিবিআই সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, তদন্তকারীদের প্রশ্নের উত্তরে কুণাল যে সব কথা বলছেন, তা-ও ঠিক নয় বলে আজ দাবি করেছেন রাজীব। তিনি কুণালের নার্কো পরীক্ষার দাবি জানান। রাজীবের নার্কো পরীক্ষার পাল্টা দাবি জানান কুণালও। পরে আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘নার্কো পরীক্ষার প্রসঙ্গ উঠেছিল। আমি রাজি। কিন্তু রাজীব কুমার রাজি হননি। বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এ নিয়ে বিশদে কিছু বলতে পারব না।’’

আজ কুণালকে ছেড়ে দেওয়া হলেও মঙ্গলবার রাজীবকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। সে দিন সারদা মামলার আর এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্তকে কলকাতা থেকে শিলং এনে রাজীবের মুখোমুখি বসানো হতে পারে। আজই শিলংয়ে পৌঁছেছেন ভুবনেশ্বর ও দিল্লি সিবিআইয়ের দুই এসপি। এমনকি, আর একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা বলে চিহ্নিত টাওয়ার গ্রুপ নিয়ে তদন্ত করা অফিসারকেও নাকি উড়িয়ে আনা হচ্ছে।

এ দিকে, কলকাতায় ফিরতে চেয়ে সোমবার রাজীব সিবিআইয়ের কাছে লিখিত আর্জি জানিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গত ৩ তারিখ রাজীব কুমারের বাড়িতে যাওয়া সিবিআই অফিসারদের আটকানো নিয়ে ১৮ তারিখের মধ্যে তাঁকে হলফনামা দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআই-কে লেখা চিঠিতে রাজীব বলেছেন, সেই হলফনামা তৈরি করতে তাঁর সময় প্রয়োজন। এ ছাড়া, ১২ তারিখ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। সেই কারণেও তাঁকে কলকাতায় থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে মঙ্গলবারের জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে কলকাতা ফেরার অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি।

আজ সকাল এগারোটায় ওকল্যান্ডে সিবিআই দফতরে আসেন রাজীব। সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জাভেদ শামিম। তার মিনিট চল্লিশ আগেই আসেন কুণাল। তিন জন খানিকক্ষণ একই সঙ্গে রিসেপশনে বসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে কুশল বিনিময় হয় বলেও জানা গিয়েছে। বেলা বারোটা নাগাদ রাজীব ও কুণালকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সিবিআই গোয়েন্দারা।

সিবিআই সূত্রের খবর, টেবিলের এক দিকে বসান হয়েছে রাজীব ও কুণালকে। উল্টো দিকে বসেছেন জনা পাঁচেক সিবিআই অফিসার। তাঁদের পিছনে সোফায় এসপি পদমর্যাদার অফিসারেরা। কুণালদের বাঁ দিকে বসেছেন বাইরে থেকে নিয়ে আসা দু’জন সাক্ষী। টেবিলের দু’প্রান্তে দাঁড়িয়ে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করেছেন দু’জন। রেকর্ডিং শেষে ক্যাসেট সিল বন্ধ খামে রেখে দেওয়া হয়েছে। ঘরে ছিলেন এক জন স্টেনোগ্রাফারও। তিনি কুণাল ও রাজীবের বয়ান টুকে নিয়েছেন। এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ সিবিআই দফতর ছেড়ে যান কুণাল। রাজীব চলে যান সন্ধ্যা সাতটায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI Saradha Scam SIT Rajeev Kumar Chit Fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE