শিলং সিবিআই দফতরের সামনে কড়া প্রহরা।—ছবি পিটিআই।
বাইরের তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় নাকের ডগা পর্যন্ত জমে যাচ্ছে। গত কাল, রাত সাড়ে ১০টা। শিলংয়ের ওকল্যান্ডে সিবিআই দফতরের বাইরে তখনও সাংবাদিকদের ভিড়। হঠাৎ মন্তব্য উড়ে এল, ‘‘এ বার যেন ঠান্ডাটা বেশিই। আমরা এখানকার বাসিন্দা। আমাদেরই বেশি ঠান্ডা লাগছে তো আপনাদের তো লাগবেই।’’
এত রাতে এখানে? ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘‘রোজ ভ্যালিতে দশ হাজার টাকা রেখেছিলাম। ফেরত পাইনি। যখন শুনলাম বড় বড় লোককে ডেকে এনে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করছে, দেখতে চলে এলাম।’’ কী মনে হচ্ছে, টাকা ফেরত পাবেন? উত্তর আসে, ‘‘জানি না। তবে মানসিক শান্তি হচ্ছে।’’ নাম-পরিচয় না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়ার আগে তিনি এ-ও বলে গেলেন, ‘‘আমি একা নই। ওকল্যান্ডে এমন অনেককে পাবেন।’’
আজ সকাল থেকে খোঁজ করে পাওয়াও গেল অনেককে। বেশির ভাগই বাঙালি। ওকল্যান্ড বাঙালি পল্লি হিসেবে খ্যাত। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসা মানুষেরা কয়েক পুরুষ ধরে বাস করছেন এখানে। কেউ হয়তো আগে শিলচরের দিকে ছিলেন। বাচ্চু বিশ্বাস তাঁদেরই একজন। বছর পঁচিশ আগে শিলচর থেকে শিলংয়ে চলে এসেছে তাঁর পরিবার। বাচ্চুর জুতোর ব্যবসা। এজেন্টের কথা শুনে লোভে পড়ে বছর সাতেক আগে রোজ ভ্যালিতে ৩০ হাজার টাকা রেখেছিলেন। এক টাকাও ফেরত পাননি। রোজ ভ্যালি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে বলে শুনেছিলেন। এখন বাড়ির কাছেই সাংবাদিকদের ভিড় দেখে জানতে চেয়েছেন, কী হচ্ছে। সব শুনেটুনে বছর চল্লিশের বাচ্চু-র মন্তব্য, ‘‘কী লাভ? ফেরত পাব টাকা?’’
ওকল্যান্ডের সিবিআই দফতরের কাছেই বাড়ি জাহির আহমেদের। হোটেলের ব্যবসা রয়েছে। বলেন, ‘‘আমার কাছে প্রায় ১২০ জন কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৫০-৬০ জন রোজ ভ্যালিতে টাকা রেখে সর্বস্ব খুইয়েছেন।’’ জাহির জানিয়েছেন, শিলংয়ে ব্যবসা জমিয়েছিল শুধু রোজ ভ্যালিই। সারদা, টাওয়ার, আইকোর বা অন্য কোনও সংস্থার নাম শোনেননি তাঁরা। তাঁর হোটেলের কর্মী শিবকুমার দাস কাছেই পোলো রোডে থাকেন। তিনি আবার রোজ ভ্যালির এজেন্টের কাজ করতেন। শিবকুমার বলেন, ‘‘আমার নিজের দেড় লক্ষ টাকা গিয়েছে। তা ছাড়া, আমানতকারীদের আরও দেড় লক্ষ টাকা পকেট থেকে ফেরত দিয়েছি।’’
গত পরশু থেকে সিবিআই অফিসের সামনে ইতিউতি আনাগোনা এমন অনেক জাহিরেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy