বিরসা মুণ্ডার মূর্তির সামনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।
টানা চারমাস অন্ধকারে ডুবে ছিল ‘ভগবান’ এর গ্রাম। স্বাধীনতা দিবসের দু’দিন আগে সেই গ্রামে আলো নিয়ে এলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
‘ভগবান’ বিরসা মুণ্ডার গ্রাম, উলিহাতুর বাসিন্দারা জানেন, গ্রামে ভিআইপি আসার সৌজন্যেই তারা একদিনের জন্য আলো পাচ্ছেন। তাঁরা জানেন, মন্ত্রী চলে গেলেই ফের অন্ধকারে ডুবে যাবে গ্রাম। নেতা মন্ত্রীরা এলেই সেজে ওঠে ‘ভগবানের’ গ্রাম। না হলে রাঁচি থেকে মাত্র ষাট কিলোমিটার দূরে, জঙ্গলের মধ্যে বিরসা মুণ্ডার জন্মস্থান উলিহাতুকে কেই বা মনে রাখে! গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রঘুনাথ মুণ্ডার কথায়, ‘‘ভগবানের নামে নেতা মন্ত্রীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু কী হল গ্রামের? বিদ্যুৎতের তার এল ঠিকই। কিন্তু কারেন্ট থাকাটা তো ভাগ্যের ব্যপার। এই তো গত চারমাস আলো নেই। আজকে মন্ত্রী আসছেন বলে গ্রামে আলো এসেছে। মন্ত্রী চলে গেলেই ফের অন্ধকার।’’
আসলে রঘুনাথ বা জুনেল মুন্ডারা কথা বলছেন পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে। জুনেল বলেন, ‘‘বিরসা মুণ্ডার জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এর আগে ঝাড়খণ্ডের প্রায় সব মুখ্যমন্ত্রীই উলিহাতুতে এসেছেন। এসেছেন রাজ্যপালও। তখন এসেছে আলো। সঙ্গে নানা প্রতিশ্রুতি। তারা চলে গেলে আলো নিভে গিয়েছে।’’ চার মাস আগে এক ঝড়বৃষ্টির পরে আলো চলে গিয়েছিল। সেই আলো আর আসেনি। আজকে এলো। কারণ আজ দিল্লির মন্ত্রী এসেছেন। অথচ গ্রামবাসীদের নামে নামে প্রত্যেক মাসে বিদ্যুতের বিল কিন্তু আসছে। কারো ৫২ টাকা, কারও ৬০ টাকা। আমরা মুখিয়াকে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনও
ফল হয়নি। গ্রামবাসীরা আশায়, দেখি বিদ্যুতের বিলটা যদি মন্ত্রীদের দেখাতে পারি!
দেশের ৭০ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ইয়াদ করো কুরবানি’ পালন করছে। কেন্দ্রের এক একজন মন্ত্রী এক এক রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রামে পৌঁছচ্ছেন। সেই উপলক্ষেই রাজনাথ দিল্লি থেকে বিরসা মুণ্ডার গ্রাম উলিহাতু পৌঁছন আজ বেলা দেড়টা নাগাদ। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস ও তাঁর মন্ত্রীরা। ছিলেন মুখ্যসচিব রাজবালা বর্মা, ডিজিপি ডি কে পাণ্ডে। রাজনাথ বিরসা মুণ্ডার ভিটের বারান্দায় বসে কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। কথা বলেন কয়েকজন স্কুল ছাত্রের সঙ্গেও। কথা বলেন, বিরসা মুণ্ডার বংশধর সুখরাম মুন্ডার সঙ্গেও। কথা বলতে বলতেই প্রবীণ রাজনীতিক বুঝে যান, বিরসা মুণ্ডার আদি গ্রাম ঝাড়খণ্ডের পিছিয়ে পড়া অন্য প্রত্যন্ত গ্রামগুলির থেকে কিছু মাত্র আলাদা নয়। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের সমস্যার কথা ঝাড়খণ্ড সরকারের মুখ্য সচিব রাজবালা বর্মা নোট করে নিয়েছেন। দ্রুত এসবের সমাধান হয়ে যাবে।’’
রাজনাথের এই বক্তব্যের পরেই উঠে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস ঘোষণা করেন, ‘‘এই গ্রাম ‘মডেল গ্রাম’ হিসেবে ঘোষণা করা হল। সাত দিনের মধ্যেই গ্রামের সব ঘর পাকা করার কাজ শুরু হবে। ছ’মাসের মধ্যে ঘরে ঘরে আলো ও পানীয় জল চলে আসবে।’’ এরপর এক অনুষ্ঠানে উলিহাতু ও খুঁটির আশপাশের গ্রামের উন্নয়নের জন্য ১৮৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের শিলান্যাসও করলেন রাজনাথ। তবে অভিজ্ঞ গ্রামবাসীদের পুরনো অভিজ্ঞতা থেকেই আশঙ্কা, সত্যিই হবে তো উন্নয়ন? শিলান্যাসের শিলাতে শ্যাওলা জমবে না তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy