–প্রতীকী ছবি।
আখ চাষের জমি। জমি ধরে ক্যামেরা যত এগিয়েছে, আস্তে আস্তে ফুটে উঠেছে এক নিরীহ মেয়ের ভয়ার্ত মুখ। হাত-পা বুকের কাছে জড়ো করে বসে, মুখটাকেও প্রাণপণে দুই হাঁটুর ভিতরে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল সে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অসহায় মেয়েটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একদল লোলুপ। ক্যামেরা বন্ধ হয়নি। সেই ভিডিওটাই চলছে দোকানে। দোকানিকে ঘিরে থাকা আরও কতগুলি লোলুপ মুখ ততক্ষণে দরদাম করতে ব্যস্ত। গণধর্ষণের এই ভিডিওটি বিক্রি হল নগদ ৫০ টাকায়! তো কেউ আবার ‘এইটুকুতেই’ সন্তুষ্ট নয়। আরও বেদনাদায়ক, আরও নিষ্ঠুর কোনও ধর্ষণের ভিডিও-র খোঁজ করতে লাগল।
হ্যাঁ, উত্তরপ্রদেশের খোলা বাজারে আইনের চোখে ধুলো দিয়ে এভাবেই বিকোচ্ছে ধর্ষণের ভিডিও। ধর্ষণের ভয়াবহতার উপরে নির্ভর করে ওঠানামা করে এই ভিডিওগুলির দাম। কোনওটা ৫০ টাকা তো কোনওটা ১৫০ টাকা। অবশ্য পুলিশের থেকে বাঁচতে একটি কৌশল নিয়েছে দোকানিরা। বিশ্বস্ত এবং চেনা মুখ ছাড়া আর কাউকেই এই ভিডিও দেখানো হয় না।
পর্ন ভিডিও-র সিডি কেনার জন্য এত দিন এই সব দোকানে ভিড় জমাতে দেখা যেত অনেককে। তবে ধর্ষণের মতো নির্মম একটি ঘটনার তুলে রাখা ছবিও যে অনেকের কাছে আনন্দদায়ক হতে পারে তা জানা যাচ্ছে তাজগঞ্জ, সর্দার এলাকার মতো উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি বাজারে গেলে।
আরও পড়ুন: হোমওয়ার্ক না করার ‘শাস্তি’, বেল্ট দিয়ে বেধড়ক মার শিশুকে!
আগ্রার এক দোকানদার জানান, এর বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিও। যা কোনও না কোনও সময় ধর্ষণকারীরাই এই সমস্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেছে। আবার অনেক সময় এমন ঘটনার ভিডিও করে সরাসরি দোকানিকেই দিয়ে যায় তারা। এই সমস্ত ‘এক্সক্লুসিভ’ ভিডিও-র দামও অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। এই ভিডিওগুলির মধ্যে যেমন সাজিয়ে-গুছিয়ে অভিনয় করা ভিডিও রয়েছে, তেমনই রয়েছে সত্যি ঘটনাও। আবার অনেক সময় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এই ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেল করা হয় নির্যাতিতাকে। যা পরে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হয়। খরিদ্দারদের পছন্দমতো ভিডিও তাদের মোবাইলে বা পেনড্রাইভে ডাউনলোড করে দেন দোকানিরাই। উত্তরপ্রদেশ জুড়ে এ ধরণের ঘটনা যে ঘটছে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে গত মঙ্গলবারের ঘটনাতেও। বরেলীতে স্কুলে যাওয়ার পথে এক শিক্ষিকাকে গণধর্ষণই শুধু করা হয়নি। সেই ধর্ষণের ভিডিও রেকর্ডিং-ও করে রাখে দুষ্কৃতীরা।পরে ওই শিক্ষিকাকে হুমকি দেওয়া হয়, বাইরে এ নিয়ে মুখ খুললে ওই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দেওয়া হবে।
নাকের ডগায় এরকম ব্যবসা চলছে তা জেনেও নিরুত্তাপ কেন পুলিশ?
আগ্রার এক পুলিশ কর্তা বলছেন, ‘‘বেশ কিছু দিন আগে খবর পেয়ে তাজগঞ্জ এবং সর্দার এলাকার বাজারে অভিযান চালিয়ে এক দোকানিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর থেকে তারা আরও বেশি সতর্ক হয়ে পড়েছে।’’ তিনি জানান, শুধু এই দুই এলাকাতেই নয়, বেলাগঞ্জ, বালকেশ্বর, কামলানগরের মতো উত্তরপ্রদেশের আরও অনেক এলাকাতেও এই ধরণের ভিডিও কেনাবেচা চলছে। পুলিশের উপর মহলও বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy