গত বছর ঝাড়খণ্ডে যা হয়েছিল, এ বার তাকেও অনেকটাই ছাপিয়ে গেল বিহার।
দুর্দান্ত রেজাল্ট করল 'নোটা' বা 'না'-ভোট!
এর আগে দেশের আর কোনও রাজ্যে এত ভাল রেজাল্ট হয়নি 'নোটা'-র। ঝাড়খণ্ডে গত বছর 'না'-ভোট পড়েছিল ১.৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে পাঁচ রাজ্যের ভোটে প্রথম চালু হয়েছিল 'নোটা'। তাতে কোনও দলের প্রার্থীকেই পছন্দ নয় বলে জানিয়েছিলেন ১৫ লক্ষেরও বেশি ভোটার। কিন্তু গাণিতিক হিসেবে তা মোট ভোটের দেড় শতাংশের বেশি ছিল না। বিহারে 'নোটা'-র রেজাল্ট তাকেও ছাপিয়ে গেল।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, এ বার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে যত ভোট পড়েছে, তার প্রায় তিন শতাংশ পেয়েছে 'নোটা'। গাণিতিক হিসেবে ২.৫ শতাংশ।
এর মানে, বিহারে ভোট-প্রাপ্তির নিরিখে বামপন্থীদের তো বটেই, আরও তিনটি রাজনৈতিক দলকে একেবারে ধরাশায়ী করে দিয়েছে 'নোটা'।
বিহারে ভোটে 'নোটা'র সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে পারেনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঁঝির নতুন দল ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুস্তানি আওয়ামি মোর্চা। নীতীশ কুমারের একদা ঘনিষ্ঠ জিতন রাম সংযুক্ত জনতা দল ছেড়ে আওয়ামি মোর্চা গড়েছেন। ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ‘প্রিয় পাত্র’ হয়ে ওঠা জিতন রামের নতুন দল মহাদলিত ভোটে ভাল রকম ভাগ বসিয়ে মহাজোটকে পটনার কুর্সি দখলে বাগড়া দেবে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। যাঁরা সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের দারুণ হতাশ করেছে 'নোটা'। কিন্তু, বিহারের দলিতরা মুশাহর নেতা জিতন রামের দিকে না ঝুঁকে মহাজোটের দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়ায়, যত ভোট পড়েছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দল পেয়েছে তার মাত্র ২.৩ শতাংশ ভোট। রাজ্য বিধানসভার ২৪৩টি আসনের মধ্যে পেয়েছে সাকুল্যে তিনটি আসন।
'নোটা'-র কাছে নতজানু হতে হয়েছে গো-বলয়ের আর এক হেভিওয়েট মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টিকেও। প্রথমে মহাজোটে থেকেও বিহার ভোটের আগে আসন বণ্টন নিয়ে লালু-নীতীশের সঙ্গে মন কষাকষির জেরে আলাদা ভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুলায়ম। তাঁর মূল ভরসা ছিল যাদব ভোট। কিন্তু ভোটের ফলাফল দেখাচ্ছে, অশীতিপর নেতাকে ‘মোলায়েম’ জবাবটি দিয়েছে 'নোটা'-ই। তাঁর আশার যাদব ভোটের বেশির ভাগটাই মহাজোটের ঝুলিতে পড়েছে। তার ফলে, 'নোটা'-র কাছে হার মানতে হয়েছে হেভিওয়েট মুলায়মের দলকেও। সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে মাত্র ১.১ শতাংশ ভোট।
এ তো গেল মহাজোটের দলিত আর যাদব ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙার চেষ্টা করতে গিয়ে 'নোটা'-র কাছে দুই হেভিওয়েটের হার মানার কাহিনী। আরও করুণ অবস্থা হয়েছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএমের। মূলত হায়দরাবাদের এই রাজনৈতিক দলটি এ বার বিহারেও ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের ভরসা ছিল মুসলিম ভোট। ওয়াইসির আশা ছিল, মহাজোটের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে তিনি ভাল মতোই চিড় ধরাতে পারবেন। ধন্য আশা কুহকিনী! মুসলিম ভোটের বড় অংশটাই ঝুঁকেছে মহাজোটের দিকে। ওয়াইসির দলকে হার মানতে হয়েছে 'নোটা'-র কাছেও। এআইএমআইএম পেয়েছে মাত্র ০.৪ শতাংশ ভোট।
অথ বামপন্থী কথা!
দুই বামপন্থী দল সিপিআই আর সিপিএমের এক সময়ের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বিহার এ বার কার্যত, ‘গুড বাই’ জানিয়েছে ওই দুই বামপন্থী দলকে। দু’টি দল মিলে পেয়েছে মাত্র দুই শতাংশ ভোট। তারা কোনও আসনই পায়নি। দুই বামপন্থী দলকে এ বার বিহারে হার মানতে হয়েছে 'নোটা'-র কাছেও। তুলনায় সিপিআই (এমএল-লিবারেশান)-এর হাল কিছুটা ভাল। তারা দু’টি আসনও পেয়েছে। তবে ভোট-প্রাপ্তির নিরিখে তাদেরও হার মানতে হয়েছে 'নোটা'-র কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy