‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের যুদ্ধবিমান ধবংস করেছে পাকিস্তান, আগেই তা মেনে নিয়েছিলেন সেনার সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহান। কী কারণে এই বিপর্যয় ঘটল, এ বার তা নিয়ে নতুন দাবি প্রকাশ্যে এল। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতের যুদ্ধবিমানে আদৌ কোনও ত্রুটি ছিল না। ত্রুটি হয়েছিল ভারতের গোয়েন্দাদের। পাকিস্তানের শক্তি সম্পর্কে একটি তথ্য তাঁরা ভুল জানতেন। সেই কারণেই সিঁদুর অভিযানে পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। রয়টার্সের দাবি, অন্তত একটি রাফাল যুদ্ধবিমান সেই রাতে ধ্বংস করেছিল পাক সেনা।
দুই ভারতীয় এবং তিন পাকিস্তানি আধিকারিকের সাক্ষাৎকার নিয়ে সিঁদুর অভিযান সম্পর্কে রিপোর্টটি প্রস্তুত করেছে রয়টার্স। তাতে দাবি করা হয়েছে, চিনে তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল পাকিস্তান। তাতে ছিল চিনে তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র। ৬ মে মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি টের পেয়েই হামলার নির্দেশ দেন পাক বায়ুসেনা প্রধান জ়াহির সিধু। রাফাল যুদ্ধবিমান নিশানা করেছিলেন তিনি। অন্তত একটি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছেন। পাক হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা মেনে নিলেও কতগুলি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল, তা কিন্তু স্পষ্ট করেননি জেনারেল চৌহান। ফলে এই সংখ্যা নিয়ে এখনও ধন্দ থেকে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
রয়টার্সের রিপোর্টে দাবি, ভারতের হামলার আশঙ্কায় মে মাসে দফতরেই কাটাচ্ছিলেন পাক বায়ুসেনা প্রধান। বায়ুসেনার অভিযান কক্ষের বাইরে একটি গদিতে রাতের পর রাত ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। ৬ তারিখ মধ্যরাতের কিছু পরে আচমকা অভিযান কক্ষে জ্বলে ওঠে সতর্কতার লাল আলো। সিধু দেখতে পান, পাকিস্তানের সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান। তৎক্ষণাৎ তিনি জে-১০সি যুদ্ধবিমানগুলিকে হামলার নির্দেশ দেন। এই সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ১১০টি যু্দ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়েছিল। সংঘাত চলেছিল প্রায় এক ঘণ্টা ধরে, দাবি রয়টার্সের। ভারত সরকার প্রথম থেকেই জানিয়ে এসেছে, মাত্র ২৩ মিনিটে পাকিস্তানের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে এসেছে ভারতীয় সেনা।
ভারতের সেনা সর্বাধিনায়কের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর ফ্রান্সের রাফালের পারদর্শিতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, রাফাল যুদ্ধবিমানের অর্ডার বাতিল করে তারা চিনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার কথা ভাবছে। কিন্তু রয়টার্সের রিপোর্টে দাবি, রাফালে কোনও ত্রুটি ছিল না। ভারতের গোয়েন্দারা পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত ছিলেন না। তাঁরা মনে করেছিলেন, পিএল-১৫ ১৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে নিশানা করতে পারে না। তাই ভারতীয় পাইলটেরা নিশ্চিন্তে ছিলেন। তবে এই তথ্য সঠিক নয়। চিনে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি। ফলে সহজেই তা সাফল্য পেয়েছিল। পাকিস্তানের আধিকারিকদের দাবি, অন্তত ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে ভারতের যুদ্ধবিমানকে নিশানা করা হয়েছিল।
রয়টার্সের এই প্রতিবেদন নিয়ে অবশ্য ভারতের প্রতিরক্ষা বা বিদেশ মন্ত্রক থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। সেনা সর্বাধিনায়ক যে যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা বলেছিলেন, তা রাফাল কি না, তা-ও স্পষ্ট করেননি। ভারতের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির কথা পাকিস্তান স্বীকার করে নিয়েছিল আগেই। সিঁদুর অভিযানের পর টানা চার দিন দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত চলেছে। ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। তবে এখনও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে।