Advertisement
E-Paper

মাত্র কয়েকটা মাসেই অসামান্য রাজনৈতিক নবজন্ম রীতা বহুগুণার

লম্বা সংযোগ ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। বাবা ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা গঢ়বালের প্রবাদপ্রতিম নেতা। নিজেও টানা প্রায় দু’দশক ১০ জনপথের ছাতার তলায় ছিলেন। কিন্তু বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠকে তাঁর নামই সর্বাগ্রে উঠে এসেছিল উত্তরপ্রদেশের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৭ ১৮:৫১
রীতা বহুগুণা যোশী— ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী, হলেন বিজেপি মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। —ফাইল চিত্র।

রীতা বহুগুণা যোশী— ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী, হলেন বিজেপি মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। —ফাইল চিত্র।

লম্বা সংযোগ ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। বাবা ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা গঢ়বালের প্রবাদপ্রতিম নেতা। নিজেও টানা প্রায় দু’দশক ১০ জনপথের ছাতার তলায় ছিলেন। কিন্তু বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠকে তাঁর নামই সর্বাগ্রে উঠে এসেছিল উত্তরপ্রদেশের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।

তিনি রীতা বহুগুণা যোশী। শেষ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তিনি হলেন না বটে। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে। বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রীতা যে এত তাড়াতাড়ি এতটা সামনের সারিতে চলে আসবেন নতুন দলে, তা কিন্তু অনেকেই ভাবতে পারেননি।

হেমবতীনন্দন বহুগুণার মেয়ে রীতা বহুগুণা যোশী এক সময় মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী ছিলেন। পরে তিনি উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের সভানেত্রী হন। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লখনউ ক্যান্টনমেন্ট আসন থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন রীতা বহুগুণা যোশী। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে লখনউ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হন তৎকালীন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। সেই হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বাজিও ছিলেন রীতাই। জিততে পারেননি রীতা। আড়াই লক্ষেরও বেশি ভেটে হেরেছিলেন রাজনাথের কাছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ২০১৪-য় যে গেরুয়া তুফান ছিল, তার মধ্যে দাঁড়িয়ে রাজনাথের সিংহের বিরুদ্ধে লড়ার সাহস দেখানো এবং তিন লক্ষের কাছাকাছি ভোট পাওয়া খুব কম কথা ছিল না।

বিজেপির হয়ে প্রচার করছিলেন নিজের কেন্দ্রের বাইরেও। তবে তখনও বোঝা যায়নি, পরিষদীয় দলের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও উঠে আসবে তাঁর নাম। —ফাইল চিত্র।

কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছিল সেই ২০১৪ থেকেই। রীতার ভাই বিজয় বহুগুণা উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারানোর পর দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যে ভাবে অসহযোগিতার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছিলেন, তার জেরেই উত্তরপ্রদেশে খারাপ হচ্ছিল রীতার অবস্থা। কংগ্রেস শিবিরের গুঞ্জন রীতার জোরদার সুপারিশ মেনে নিয়েই ২০১২ সালে উত্তরাখণ্ডে হরীশ রাওয়তকে মুখ্যমন্ত্রী না করে বিজয় বহুগুণার হাতে সরকারের ভার তুলে দিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজয় বহুগুণার প্রশাসন যে ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল তার জেরেই মুখ্যমন্ত্রী পদ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে। হরীশ রাওয়তের হাতে মুখ্যমন্ত্রিত্ব যাওয়ায় কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু করেন বিজয়। রীতার হস্তক্ষেপ চেয়েছিল ১০ জনপথ। কিন্তু ভাইকে নিরস্ত করতে রীতা খুব একটা সক্রিয় হয়েছিলেন বলে শোনা যায় না। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে উত্তরাখণ্ডে জোর ধাক্কা খায় কংগ্রেস। এর পর থেকেই ১০ জনপথের কাছে রীতা বহুগুণা যোশীর গুরুত্ব কমতে শুরু করে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই ২০১৭-র উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের লক্ষ্যে ঘর গোছাতে শুরু করে রীতা বহুগুণা যোশীর তৎকালীন দল কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্ব যায় রাজ বব্বরের হাতে। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হয় শীলা দীক্ষিতের নাম। রীতা বহুগুণা যোশী বুঝতে পারছিলেন, তিনি ক্রমশ একঘরে হয়ে যাচ্ছেন দলে। ২০১৬-র শেষ দিকে কংগ্রেস ছেড়ে দেন রীতা। অমিত শাহের উপস্থিতিতে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে।

আরও পড়ুন: নক্ষত্রখচিত মঞ্চে শপথ যোগী আদিত্যনাথের, উৎসবে মাতল বিজেপি

বিজেপি-র টিকিটে আবার যখন লখনউ ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রার্থী হলেন হেমবতী-কন্যা, তখনও আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু ছিল না। কারণ বিজেপি তাদের দলে নবাগত নেত্রীকে কোনও বিস্ময়কর উপহার ডালিতে সাজিয়ে উপহার দেয়নি, বরং কঠিন লড়াইয়ের মুখেই ফেলে দিয়েছিল। মুলায়ম সিংহের পুত্রবধূ অপর্ণা যাদবের বিরুদ্ধে রীতা বহুগুণা যোশীকে লড়ে জিতে আসতে হত। তাও আবার নতুন প্রতীকে— ‘পাঞ্জা’ ছাপের বদলে ‘কমল’ নিশানে। ১১ মার্চ, ২০১৭ ইভিএম খুলতেই দেখা গেল সপা হেভিওয়েটকে প্রায় ৩১ হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন রীতা। তবে চমকের শেষ পর্বটা তখনও বাকি ছিল। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের দখল নেওয়া বিজেপি যখন মুখ্যমন্ত্রী বাছতে হিমশিম, রীতা বহুগুণা যোশীর নামই পরিষদীয় দলের বৈঠকে সর্বাগ্রে উত্থাপিত হয়েছিল রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। বিজেপি সূত্রে তেমনই খবর।

উত্তরপ্রদেশে কট্টর হিন্দুত্বের বাতাবরণ আপাতত ধরে রাখতে চায় বিজেপি, অন্তত ২০১৯ পর্যন্ত। তার জন্য রীতা বহুগুণা যোশী উপযুক্ত মুখ নন। প্রথমত তিনি সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত নন। দ্বিতীয়ত তাঁর বাবা হেমবতীনন্দন বহুগুণা বরাবরই সঙ্ঘ পরিবারের কট্টরপন্থী রাজনীতির ঘোর সমালোচক ছিলেন। তাই রামজন্মভূমির রাজ্যে গেরুয়া সরকারের সর্বোচ্চ পদটি পাওয়া রীতার পক্ষে প্রায় অসম্ভবই ছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক মাস আগে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসে যোগী মন্ত্রিসভায় যে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন রীতা বহুগুণা যোশী এবং যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের বৈঠকে সর্বাগ্রে ভেসে উঠল তাঁর নাম, তাকে ৬৭ বছর বয়সী এই নেত্রীর অসামান্য নবজন্ম হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Rita Bahuguna Joshi Uttar Pradesh Assembly Elections Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy