Advertisement
E-Paper

মাথার দামে গণপতি এখন ডন দাউদের দশ গুণ

দাউদ ইব্রাহিম কে! দেশের কাছে এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় ‘বিপদ’ মাওবাদী শীর্ষনেতা মুপল্লা লক্ষণ রাও ওরফে গণপতি। কেননা, দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি মুম্বইয়ের ডনের চেয়েও দশ গুণ বেশি মাথার দাম ঘোষণা হয়েছে তাঁর জন্য। সরকারকে গণপতির খোঁজ দিতে পারলে পাওয়া যাবে ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা!

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯

দাউদ ইব্রাহিম কে! দেশের কাছে এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় ‘বিপদ’ মাওবাদী শীর্ষনেতা মুপল্লা লক্ষণ রাও ওরফে গণপতি। কেননা, দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি মুম্বইয়ের ডনের চেয়েও দশ গুণ বেশি মাথার দাম ঘোষণা হয়েছে তাঁর জন্য। সরকারকে গণপতির খোঁজ দিতে পারলে পাওয়া যাবে ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা!

মাস খানেক আগেও গণপতির মাথার দাম ছিল ৪৯ লক্ষ টাকা। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ় সরকার এক কোটি টাকা করে ইনাম ঘোষণা করায় আড়াই কোটির অঙ্ক পার করেছে মাওবাদী শীর্ষনেতার মাথার দাম। মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ় সরকার ছাড়াও এর আগে গণপতির খোঁজ দিলে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ২৫ লক্ষ, ঝাড়খণ্ড সরকার ১২ লক্ষ এবং জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনএসএ) ১৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল।

করিমনগরের বীরপুরের প্রাক্তন বাসিন্দা ৬৫ বছরের মুপল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। পৃথক তেলঙ্গানার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তিনি। সে সময়ে তাঁর পরিচয় হয় আদি রেড্ডি ও কে সীতারামাইয়া-র সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে মিলেই নকশাল আন্দোলনে ঝাঁপ দেন এই বিজ্ঞানের স্নাতক। তখন তাঁর পরিচয় হয় কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি-র সঙ্গে। তার পরে নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে ২০০৪ সালে তৈরি হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবেই উঠে আসে গণপতির নাম। গোয়েন্দাদের দেওয়া খবর অনুযায়ী, তিনি ছত্তীসগঢ়ের অবুঝমাঢ়ের গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছেন। সংগঠনের ভেতরের সদসদের সাহায্য ছাড়া সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা কার্যত অসম্ভব।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের ছেড়ে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের পিছনে পড়েছে দেশের দশ রাজ্যের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থা?

জাতীয় সুরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই মাওবাদী হামলায় বিপর্যস্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। বৃদ্ধ হলেও বিভিন্ন মাওবাদী হামলার পিছনে সক্রিয় ভূমিকা আছে গণপতির। ১৯৯৪-এ তৎকালীন সিপিআই(এমএল) জনযুদ্ধ গোষ্ঠী তৈরি করেছিল টেকনিক্যাল ডেভলপমেন্ট কমিটি (টিডিসি)। সংগঠনে টিডিসি-র মর্যাদা ছিল রিজিওনাল কমিটির মতো। বিভিন্ন বিস্ফোরক তৈরি-সহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই কমিটির। সমন্বয়ের অভাবে খুব সফল হয়নি টিডিসি। এর পরে টিডিসি ভেঙে দিয়ে ২০০১-এর জুলাই মাসে রাজ্য কমিটির সমান মর্যাদা দিয়ে তৈরি হয় সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটি। ২০০৫-এ সেই কমিটির নাম পাল্টে হয় টেকনিক্যাল রিসার্চ আর্মস ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট বা ট্রাম ইউনিট। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সদুলা রামকৃষ্ণের হাতে দায়িত্ব দেন গণপতি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, সদুলা ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ট্রাম ইউনিটের দায়িত্ব নিজের হাতেই রেখেছেন গণপতি। সে কারণেই বৃদ্ধ হলেও তাঁকে গ্রেফতার করা জরুরি।

মাওবাদী সমস্যা নিয়ে গত ২৭ জুন দিল্লিতে দেশের মাওবাদী প্রভাবিত ১০টি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেখানেই গণপতির পিছনে পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব ওঠে। কেন্দ্র সরকারের ছাড়পত্র পাওয়ার পড়েই মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ় রাজ্য সরকার তা বাড়িয়ে দেয়। মাওবাদী হামলায় এখন সব চেয়ে বেশি বিপর্যস্ত এই দুই রাজ্য।

মাওবাদী শীর্ষনেতা গণপতির পাশাপাশি তাঁদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির ২১ জন সদস্যের প্রত্যেকের মাথার দাম এক কোটি টাকা করে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যগুলি পুরস্কারের টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় সকলের মাথার দাম বেড়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাড়াও শীর্ষ নেতৃত্বের বেশ কয়েক জনের খোঁজ দিতে পারলে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে মাওবাদী নেতাদের খোঁজ দিতে পারলে ২৫ কোটি টাকার পুরস্কার মিলবে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, “শুধু শীর্ষনেতাদের মাথার দাম ঘোষণা করাই নয়, মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যদের আত্মসমর্পণ করানোর ওপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।” মাঝারি মাপের স্কোয়াড কমান্ডাররা আত্মসমর্পণ করলে পুরস্কারের মূল্য তারাই পাবে। কেন্দ্রের দাবি, প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আর্থিক প্যাকেজ রয়েছে। তবে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের তরফে দেওয়া অর্থমূল্য বাড়ানো হয়েছে। আগে ১০ হাজার টাকা থেকে দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হতো। সেই টাকা বাড়িয়ে ২০ হাজার থেকে আড়াই লক্ষ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন বছর ধরে মাসে চার হাজার টাকা ভাতাও দেওয়া হবে আত্মসমর্পণকারীদের। কোনও জঙ্গি অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে ২৫ হাজার টাকা বোনাস দেওয়া হবে। চলতি বছরে গত অগস্ট পর্যন্ত ২৮৩ জন আত্মসমর্পণ করেছেন বলে কেন্দ্রের দাবি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন রাজ্য সরকার অর্থমূল্য বাড়ানোয় গণপতির মাথার দাম এখন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সদস্য ইকবাল ভটকল, রিয়াজ ভটকল ও আমির রেজা খানদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। বিদেশে লুকিয়ে থাকা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ওই সদস্যদের প্রত্যেকের খোঁজ দেওয়ার জন্য ২৫ লক্ষ টাকার পুরস্কারের কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ওই জঙ্গিদের জন্য জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ১৫ লক্ষ টাকা এবং দিল্লি পুলিশ ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার দেবে বলে ঠিক রয়েছে। একই ভাবে দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি মুম্বইয়ের প্রাক্তন ডন দাউদ ইব্রাহিমের খোঁজ দিতে পারলে ২৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার রয়েছে। ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্তের মাথার দাম ঘোষণা করেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। প্রায় ২১ বছর পার হলেও সেই পুরস্কারের মূল্য বাড়াতে পারেনি সিবিআই। এমনকী, পুরস্কারের অর্থমূল্য কেন্দ্রের তরফে পর্যালোচনাও করা হয়নি।

শুধু তা-ই নয় মুম্বইয়ে ২৬/১১ হামলার ষড়যন্ত্রী তথা লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের মাথার দাম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ঘোষণা করেছে ১ কোটি ডলার অর্থাৎ ৬১ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু এই পাক জঙ্গি নেতার মাথার জন্য কানাকড়িও

ঘোষণা করেনি ভারত। বাড়ছে গণপতিদের মাথার দাম।

dibakar roy maoist ganapati latest news online news latest news online
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy