Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অর্থনীতি নিয়ে বৈঠকে এ বার সঙ্ঘ-প্রধানই

সঙ্ঘের দিল্লি শাখা ৬ অক্টোবর রাজধানীতে এর আয়োজন করছে। বিজয়া দশমীর বার্ষিক বক্তৃতায় ভাগবত গত কাল ডোকলাম ও অন্য কিছু প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তারিফ করেছেন।

মোহন ভাগবত

মোহন ভাগবত

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩০
Share: Save:

দেশের নিম্নমুখী অর্থনীতি নিয়ে তিনি যে উদ্বিগ্ন, গত কাল বিজয়া দশমীর বার্ষিক বক্তৃতাতেই তা খোলাখুলি জানিয়েছেন আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবত। এ বারে তিনি দেশের বিভিন্ন আর্থিক বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

সঙ্ঘের দিল্লি শাখা ৬ অক্টোবর রাজধানীতে এর আয়োজন করছে। বিজয়া দশমীর বার্ষিক বক্তৃতায় ভাগবত গত কাল ডোকলাম ও অন্য কিছু প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তারিফ করেছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেওয়ার প্রশ্নেও মোদী সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। কিন্তু আর্থিক প্রশ্নে ছাড় দেননি। কী কী করা উচিত স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছেন মোদী সরকারের উদ্দেশে। কিন্তু এর পরেও তিনি নিজেই কেন আর্থিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন? স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। এটা ঘটনা, ভাগবত কাল তাঁর নিপুণ বাক-শৈলীতে যা-যা বলেছেন, সঙ্ঘের বিভিন্ন সংগঠন সেগুলিই বলে থাকে। তবে আরও আক্রমণাত্মক ভাষায়। তবে কি আর্থিক নীতির প্রশ্নে সঙ্ঘের সঙ্গে মোদীর বিরোধ আরও তীব্র হতে চলেছে? সঙ্ঘ কী চাপ বাড়াচ্ছে মোদী সরকারের উপরে?

সঙ্ঘের অবশ্য দাবি, ওই বৈঠকের মধ্যে কোনও অভিনবত্ব নেই। বিজয়দশমীর বক্তৃতার পরে প্রতি বছরই সমাজের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠক করেন সরসঙ্ঘচালক। ক’দিন আগে দিল্লিতেই কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাগবত। যদিও রাজনীতির লোকজন ও প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ এটিকে সঙ্ঘের তরফে চাপ বাড়ানোর প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন। এমনিতেই সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন ‘ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ’, ছোট-মাঝারি শিল্পের সংগঠন ‘লঘু উদ্যোগ ভারতী’, ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’ লাগাতার সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করে আসছে। ছোট ও মাঝারি শিল্পকে জোর না দিলে যে রোজগার তৈরি হবে না, সেই অশনি-বার্তাও তারা দিয়ে যাচ্ছে লাগাতার। সম্প্রতি বৃন্দাবনে সঙ্ঘের বৈঠকেও এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সঙ্ঘের বিভিন্ন সংগঠন। নেতৃত্বের অনুমতি নিয়ে তাদের অনেকে আন্দোলনেও নামছে। এ বারে খোদ সঙ্ঘ-প্রধান তাদের মুখ হিসেবে কেন্দ্রের নীতি-নির্ধারক ও প্রশাসনের কর্তাদের উপরে চাপ বাড়াতে চাইলে, সেটা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।

দু’টি উদ্দেশ্য পূরণ হবে এতে।

এক, তিন বছর পেরিয়ে আসার পরে অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে মোদী সরকার এখন বিরোধীদের তোপের মুখে। দেশের আর্থিক বেহাল দশা, কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া নিয়ে রাহুল গাঁধীরা লাগাতার মোদী সরকারকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। এখন সঙ্ঘ-প্রধান নিজেই এ সব নিয়ে সরব হয়ে সমালোচনার হাওয়াকে নিজেদের শিবিরে টেনে এনে বিরোধী রাজনৈতিক আক্রমণ কিছুটা ভোঁতা করে দিতে পারবেন।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি সঙ্ঘের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক নীতির প্রশ্নে সরকার ও প্রশাসনের কাজকর্মে সঙ্ঘের দৃষ্টিভঙ্গির আরও বেশি প্রতিফলন ঘটানো। বিজয়া দশমীর বার্ষিক বক্তৃতায় ভাগবত কাল স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, বিদেশে পড়াশোনা করা পণ্ডিত বা বিশেষজ্ঞদের বিদেশি দাওয়াইয়ে কিছু হওয়ার নয়। চলতে হবে দেশি পথে। যাতে সমাজের শেষ প্রান্তের মানুষটির কাছেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছোয়।

মনে করা হচ্ছে, এ বারে আর্থিক বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারকদের বৈঠকে জড়ো করে সেই দিশাতেই চলার জন্য আহ্বান জানাবেন ভাগবত। ওই বৈঠকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রধানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আরএসএস সূত্রে জানানো হয়েছে, অধিকাংশই উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন। আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটির নির্দেশকেরা। পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এনটিপিসি, রেল বোর্ড, এইমসের নির্দেশককেও। সব মিলিয়ে জনা ৫০-৬০ জনের সঙ্গে বৈঠক করবেন আরএসএস-প্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE