Advertisement
E-Paper

ঘট সাজিয়ে প্রসাদ বিলি, দীনদয়াল পুজো সঙ্ঘের

ছবির সামনে সিঁদুরমাখা ঘট, নারকেল, লাল শালু। চলছে পাঁচালি-পাঠ। তার পরে প্রসাদ বিতরণও হল। তবে যাঁকে পুজো করা হল, তিনি কোনও দেবতা কিংবা ধর্মগুরু নন, রাজনৈতিক নেতা।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৪
দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবি (বাঁ দিকে) সামনে রেখে চলছে পুজো। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। — নিজস্ব চিত্র

দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবি (বাঁ দিকে) সামনে রেখে চলছে পুজো। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। — নিজস্ব চিত্র

ছবির সামনে সিঁদুরমাখা ঘট, নারকেল, লাল শালু। চলছে পাঁচালি-পাঠ। তার পরে প্রসাদ বিতরণও হল। তবে যাঁকে পুজো করা হল, তিনি কোনও দেবতা কিংবা ধর্মগুরু নন, রাজনৈতিক নেতা।

কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের নেতা বা প্রতিষ্ঠাতা-সদস্যকে এ ভাবে পুজো করার দৃশ্য প্রায় চোখেই পড়ে না। কিন্তু গত তিন দিন ধরে সেটাই ঘটে চলেছে দিল্লিতে। যাঁকে ঘিরে এত কিছু, তিনি অন্য কেউ নন, জনসঙ্ঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দীনদয়াল উপাধ্যায়। তাঁকে এখন কার্যত অবতারে পরিণত করতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবার।

দিল্লিতে আরএসএসের সদর দফতর ঝান্ডেওয়ালা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান। এখানেই তিন দিন ধরে চলছে পুজোপাঠ। সিংহের উপর বসে থাকা ভারতমাতার বিশাল ছবি। ঠিক তার পাশেই নিরীহ চেহারার দীনদয়ালের একটি রঙিন আলোকচিত্র। বাইরে খাটানো হয়েছে শামিয়ানা। দীনদয়ালের স্মরণে প্রসাদ বিতরণও হয়েছে। তিনি যা খেতে ভালবাসতেন, সে সবই প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। চায়ের সঙ্গে খাস্তা কচুরি, যবের খিচুড়ি, ঘি মাখানো আটার রুটি, আলুকপির তরকারি। দীনদয়ালের নামে পাঁচালি পাঠের সময়ে পুজোর সমস্ত উপচার নিয়ে বসলেন পাঁচালি গায়ক অলক কুমার। হাজির ছিল ছোট সিঁদুরমাখা ঘট, নারকেল, লাল শালু— পুজোর সামগ্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে গাওয়া হল বন্দেমাতরম।

অনুষ্ঠানে মদনদাস দেবী থেকে শুরু করে দত্তাত্রেয় হোসাবালের মতো সঙ্ঘ নেতারা ছিলেন। ছিলেন মোদী সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রীও। এটি সরকারি কিংবা বিজেপির দলীয় অনুষ্ঠান নয়। কিন্তু এই পরিকল্পনার পিছনে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। সঙ্ঘের নেতা অতুল জৈন জানান, আগামী এক বছর শুধু দিল্লি নয়, বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীতে এই অনুষ্ঠান হবে।

অনেকেই মনে করছেন, নেহরু-গাঁধী পরিবারের আধিপত্যের বিপরীতে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ‘মুখ’ সামনে নিয়ে আসতে চায় সঙ্ঘ। দীনদয়ালের জন্ম ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯১৬। চলতি বছর জন্ম শতবর্ষ। আজ ছিল তাঁর মৃত্যুদিন। এক রেল দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। সেই মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে তদন্তের দাবি জানিয়ে এসেছে আরএসএস। তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছিল। কিন্তু বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী অস্বাভাবিক মৃত্যুর তত্ত্ব খারিজ করে দেন। জানান, তদন্তের প্রয়োজন নেই। সঙ্ঘের বর্ষীয়ান নেতা নানাজী দেশমুখ তদন্তের দাবি নিয়ে আডবাণীকে বেশ কয়েকটি চিঠিও লিখেছিলেন।

পুজোপাঠের পাশাপাশি একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করেছে সঙ্ঘ। সেখানে ১৯৬৪ সালে দীনদয়াল ও রামমনো‌হর লোহিয়ার যৌথ বিবৃতি ও দীনদয়ালের ভাবনাকে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন ‘‘শুধুমাত্র হিন্দুদের সুরক্ষা নয়, ভারতে থেকে যাওয়া মুসলিম নাগরিকদেরও সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।’’ আবার চিনের ভারত আক্রমণের পরে দীনদয়ালের যুক্তি ছিল, সেই সময়ে কংগ্রেসের বিরোধিতা করাটা অগ্রাধিকার হতে পারে না। বরং আক্রমণের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া দরকার। ১৯৫৩ সালে লন্ডন সফর করে দীনদয়াল বলেছিলেন, ভারতীয় বিদেশনীতি নির্জোট হওয়া উচিত। সঙ্ঘ এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং নিরপেক্ষ বিদেশনীতি সম্পর্কে দীনদয়ালের ভাবনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রদর্শনীতে বাজপেয়ীর ছবি থাকলেও আডবাণীর কোনও উল্লেখও নেই।

সব মিলিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট। তা হল, গোটা দেশে এখন নতুন প্যাকেজে দীনদয়ালকে অবতার হিসেবে তুলে ধরতে চায় সঙ্ঘ।

jayanta ghosal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy