প্রতীকী ছবি।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং মুসলিম! একসঙ্গে উচ্চারণ করতে সাধারণ ধারণায় ধাক্কা লাগলেও বাস্তবে এ বার ঘটতে চলেছে তেমনই কিছু! যাকে কেউ বলছেন প্রথা ভাঙা প্রয়াস। সমালোচকেরা বলছেন, চোখে ধুলো দেওয়া মাত্র!
সঙ্ঘ পরিবারের জন্য তাদের সংগঠনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন দশেরা। সে দিনই সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা দিবস। সে দিনের বার্ষিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই সংগঠনের আগামী দিনের লক্ষ্য ঘোষণা করেন সঙ্ঘপ্রধান। হয়ে যাওয়া কর্মকাণ্ডের ময়না তদন্তও হয়। এ বার ৩০ সেপ্টেম্বর, নাগপুরে সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনের দু’টি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে ডাক পেয়েছেন এক মুসলিম অধ্যাপক এবং এক দলিত গুরু।
নাগপুরের এনআইটি ময়দানে শিশু সেবকদের নিয়ে ৩০ তারিখের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হচ্ছেন মুন্নাওয়ার ইউসুফ। তিনি নাগপুরেরই একটি হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যাপক এবং এলাকার পরিচিত চিকিৎসক। আর রেশিমবাগ ময়দানে ‘শস্ত্রপূজন’ তথা বিজয়া দশমীর যে অনুষ্ঠানে থাকবেন স্বয়ং সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত, সেখানে অতিথি বাবা নির্মলদাসজি। যিনি জালন্ধরের শ্রীগুরু রবিদাস সাধুসন্ত সোসাইটির প্রধান। এই দু’জনের কারও সঙ্গেই আরএসএসের কোনও যোগ নেই। মতাদর্শগত ভাবে তাঁরা সঙ্ঘের সমর্থকও নন। তাই তাঁদের এমন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোকে তাৎপর্যপূর্ণ ধরা হচ্ছে। বিশেষত, গো-রক্ষকদের তাণ্ডব, একের পর এক রাজ্যে খাদ্যাভ্যাসের ‘অপরাধে’ বা অন্য কোনও তকমায় পিটিয়ে মারা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় না দেওয়া নিয়ে যখন দেশ জুড়ে বিতর্ক, সেই সময়েই সঙ্ঘের তরফে এমন পদক্ষেপকে ইঙ্গিতবাহী বলছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জ গঠন
সঙ্ঘের এক কর্মকর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘যাঁদের অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাঁরা নিজেদের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের উপকারে কাজ করছেন। আমাদের সংগঠনের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁদের ডাকা হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়কে এক করে দেখা ঠিক নয়।’’ সঙ্ঘ সূত্রেই বলা হচ্ছে, কিছু বছর আগে মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের (এমআরএম) মুজফ্ফর হোসেনও বিজয়া দশমীর দিনের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়েছিলেন। তবে এমআরএম সঙ্ঘেরই শাখা। এ বারের অতিথিদের সঙ্গে সেই অর্থে আরএসএসের কোনও যোগই নেই।
বিজেপি-র বিরোধীরা অবশ্য এই সিদ্ধান্তের মধ্যে কৌশলই দেখছেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যেমন বুধবার আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘এগুলো সব নজর ঘোরানোর চেষ্টা! ভাবনা এবং কর্মসূচিতে কোনও পরিবর্তন না হলে শুধু অতিথি দিয়ে কী হবে? গোটা দেশে সঙ্ঘ এবং বিজেপি কী করছে, সকলেই দেখতে পাচ্ছে।’’ মুসলিমদের কাছে পৌঁছতে সঙ্ঘ আন্তরিক হলে রোহিঙ্গা-প্রশ্নে মোদী সরকারের এমন কঠোর অবস্থান কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ইয়েচুরি। প্রায় একই সুর তৃণমূলেরও। দলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘শুনে অদ্ভুত লাগছে! আরএসএস ঠিক কী চায়, সেটাই ভাল করে বুঝি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy