দেরিতে ট্রেন চালানোই যেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাসের পর মাস ধরে বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন দেরিতে ছুটছে। দেরির বহরে কখনও কখনও গন্তব্যে পৌঁছনোর তারিখ বদলে যাচ্ছে। চিকিৎসার প্রয়োজনে ট্রেনে সফর করা যাত্রীদের অনেকেই ডাক্তার দেখাতে সময়মতো পৌঁছতে পারছেন না। বেঙ্গালুরু, পুণের মতো শহরে নতুন চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বহু তরুণ-তরুণীকে। বিলম্বের কারণে ট্রেনের শৌচাগারের অবস্থা হয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ। চিকিৎসার কারণে দূরপাল্লার ট্রেনে যাত্রীদের দুর্ভোগপৌঁছচ্ছে চরমে।
দূরপাল্লার ট্রেনগুলির মধ্যে চেন্নাই মেল, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসগামী মুম্বই মেল, শালিমার-লোকমান্য তিলক টার্মিনাস এক্সপ্রেস, অমরাবতী এক্সপ্রেস, হাওড়া-এস এম ভি টি (বেঙ্গালুরু) এক্সপ্রেসের মতো একাধিক ট্রেন দেরিতে চলাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের বড় অংশের।
ওই সব ট্রেনের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে পনেরো ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব কার্যত রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছেন যাত্রীদের বড় অংশ। সময়ানুবর্তিতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে হাওড়া-মুম্বই এবং হাওড়া-পুণে দুরন্ত এক্সপ্রেস নিয়েও। পরিস্থিতির ফেরে মাঝেমধ্যেই সময়ানুবর্তিতার গরিমায় ধাক্কা লাগছে করমণ্ডল এবং ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনের ক্ষেত্রেও।
কাছাকাছি দূরত্বে কাণ্ডারী এবং তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস গত দেড় বছর ধরে সময়ে চলে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ট্রেন দেরিতে চলার কারণে হাওড়া-দিঘার পাশাপাশি খড়গপুর-টাটানগর পথের বহু রুটেযাত্রীদের ট্রেনের তুলনায়সরকারি এবং বেসরকারি বাসের উপর নির্ভরতা বেড়েছে।
ট্রেন চলার ক্ষেত্রে বিলম্ব ছাড়াও নানা কারণে আচমকা ট্রেন বাতিলের ঘোষণা যাত্রীদের দক্ষিণের পথে সফরকেই কার্যত আতঙ্কের করে তুলেছে। এ সম্পর্কে হাওড়া-মুম্বই পথের এক যাত্রী অম্লান সামন্ত বলেন, ‘‘দু’মাস আগে টিকিট কেটেও কবে কখন ট্রেন বাতিল হবে তার নিশ্চয়তা নেই। সঙ্গে দেরির ঝক্কি তো রয়েছেই।’’ বেঙ্গালুরুতে নতুন চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে প্লাবন সরকারের। মাস দুয়েক আগে শেষ মুহূর্তে আচমকা ট্রেন বাতিলের ঘটনায় অথৈ জলে পড়তে হয় তাঁকে।
কেন এই দেরি ?
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ট্রেনের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় প্রায়ই ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সময়মতো সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। তাতে ট্রেন ছাড়তে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে শুরুতেই কয়েক ঘণ্টা দেরি হয়ে যাচ্ছে। দেরিতে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন রাস্তায় অগ্রাধিকার পায় না। ফলে সেখানে আরেক দফা বিলম্ব বাড়ছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেল ছাড়াও পূর্ব উপকূল, দক্ষিণ, এবং দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেল সহ একাধিক এলাকায় পরিকাঠামো সম্প্রসারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলার কারণে ট্রেনে বিলম্ব হচ্ছে। বন্দে ভারতের মতো ট্রেন সময়ে চালাতে গিয়ে অন্যান্য ট্রেনের উপরেও চাপ পড়ছে।
তবে রেল কর্তাদের বড় অংশের দাবি, হাওড়া থেকে খড়গপুর হয়ে টাটা ছাড়াও আদ্রা-পুরুলিয়া, চক্রধরপুর শাখায় পণ্য পরিবহণের অস্বাভাবিক চাপ রয়েছে। সারা দেশের সবচেয়ে বেশি পণ্যবাহী রেলের প্রথম চারের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অবস্থান। এ প্রসঙ্গে এক রেল কর্তা বলেন, ‘‘সময়ানুবর্তিতা নিয়ে রেল বোর্ড নিয়মিত বৈঠককরে। তারা কি জানে না ট্রেন কতটা সময়ে চলছে? তবু পরিস্থিতির বদল হয় না কেন?’’
সম্প্রতি সাঁতরাগাছি স্টেশনে ইন্টারলকিংয়ের কাজ সময়মতো সম্পূর্ণ করতে না পারা এবং যাত্রী ভোগান্তি নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনার পর ওই রেলের প্রিন্সিপাল চিফ অপারেশনস ম্যানেজারকে সম্প্রতি হাজিপুরে বদলি করা হয়েছে। ওই বদলি শাস্তিমূলক কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। রেল কর্তারা অবশ্য সব ট্রেন দেরিতে চলছে মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, বহু ক্ষেত্রে অন্যান্য জ়োনের কারণেও ট্রেন দেরিতে চলছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)