ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরোধিতা করে ভারতের পাশে দাঁড়াল রাশিয়া। বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের তরফে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, সার্বভৌম কোনও দেশের স্বাধীন ভাবে বাণিজ্যসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। ট্রাম্প বিভিন্ন দেশকে হুমকি দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করছেন বলেও দাবি করেছে মস্কো।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার জন্য বুধবারই ভারতীয় পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। বাড়তি ২৫ শতাংশের ফলে আগামী ২৭ অগস্ট থেকে ভারতকে আমেরিকায় পণ্য রফতানি করতে হলে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা হলে দেশগুলির উপর ‘আরও অনেক’ বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এই পরিস্থিতিতে মস্কোর ওই বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনে রুশ প্রশাসনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “আমরা (ট্রাম্পের) অনেক বিবৃতির কথাই শুনছি, যেগুলি আসলে হুমকি। বিভিন্ন দেশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা এই বিবৃতিগুলিকে বৈধ এবং ন্যায্য বলে মনে করছি না।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আমরা বিশ্বাস করি যে কোনও সার্বভৌম দেশের স্বাধীন ভাবে বাণিজ্যসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনও দেশের জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী এই বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে থাকে।” পেসকভের বক্তব্যে কোথাও ভারতের নাম না-করা হলেও ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ যে ট্রাম্পের শুল্কবাণের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট।
আরও পড়ুন:
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল। এখনও পূর্ব ইউরোপে দুই দেশের যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্ব তাদের উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে রুশ বাণিজ্য যে কারণে বড়সড় ধাক্কা খায়। সেই সময়ে রাশিয়া সস্তায় খনিজ তেল বিক্রি শুরু করে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই সময়। ভারত সারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। রাশিয়া থেকে এই মুহূর্তে ৩৫ শতাংশ তেল নয়াদিল্লি আমদানি করে থাকে। এতেই আপত্তি আমেরিকার। দাবি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল এবং অস্ত্র কেনার ফলে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সুবিধা হচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে যুদ্ধে অর্থসাহায্য হচ্ছে। অবিলম্বে এই বাণিজ্য বন্ধের জন্য ভারতকে চাপ দেয় আমেরিকা।
ট্রাম্পের হুমকির কাছে মাথা নত করেনি নয়াদিল্লি। প্রথম থেকেই এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বাজারদরের কথা মাথায় রেখে ভারত তার বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ, বাজারে কে কত দাম নিচ্ছে, তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি করে বলেই ভারত তা কিনে থাকে। ভারত ট্রাম্পের শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য’ বলে দাবি করার পরে এ বার ‘পুরনো বন্ধু’র পাশে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করল রাশিয়া।