ফাইল চিত্র।
ছোট্ট দু’চাকার স্কুটিটা নিয়ে তো আর তেলঙ্গানার নিজ়ামাবাদ থেকে ইউক্রেনে পাড়ি দেওয়া যাবে না। গেলে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে সেটাই করতেন রাজ়িয়া বেগম। অন্তত চেষ্টা করতেন।
ঠিক যেমনটা করেছিলেন দু’বছর আগে। দেশে করোনা-পর্বের শুরুতে মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে আচমকা ডাকা লকডাউনে গোটা দেশের আরও লক্ষ লক্ষ লোকের মতো অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে আটকে পড়েছিলেন রাজ়িয়ার ছেলে মহম্মদ নিজ়ামুদ্দিন আমন। সে বার ছেলেকে বাড়ি ফেরাতে ২০২০ সালের এপ্রিলে নিজের ছোট্ট স্কুটিটা নিয়ে ১৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিলেন রাজ়িয়া। সে খবর সামনে আসতেই এক পঞ্চাশ ছোঁয়া মায়ের মরিয়া প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়েছিল গোটা দেশ।
কিন্তু এ বারে তো সে উপায় নেই। ছেলে আটকে রয়েছে আরও বহু দূরে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের সুমিতে। রুশ হানাদারিতে বিধ্বস্ত সুমির স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের মেডিক্যাল পড়ুয়া আমন আপাতত আরও ৮০০ সহপাঠীর সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে বাঙ্কারে। খাবার-জল-বিদ্যুৎ-ইন্টারনেটের কানেকশন— সবেরই প্রবল অভাব। তার মধ্যেই মা-কে মোবাইলে ভিডিয়ো কল করে কথা বলেছেন ২১ বছরের আমন। রাজ়িয়ার কথায়, ‘‘আমার ছেলে খুব সাহসী। এমনকি এখনও আমাকে বলছে, আমি ঠিক ফিরে আসব। ও চায় না আমি যুদ্ধের খবর দেখি, যদি সহ্য করতে না পারি। ও বলেছে ‘‘আমিই তোমার খবর। আমি নিরাপদে আছি আর যোগাযোগও রাখব’।’’ সেই সঙ্গেই রাজ়িয়া জানান, লাগাতার গোলাগুলি-মৃত্যু-বোমা-সাইরেনের মধ্যেও ছেলে যখনই সুযোগ পাচ্ছে, ফোন করে হাসিমুখে মায়ের খবর নিতে ভুলছে না। বারেবারেই বলছে, ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখো, কিছু হবে না’।
ছেলে বললেও মায়ের মন কি মানে! তাই সারা দিন মোবাইলে বারবার চোখ চলে যাচ্ছে। ছেলে ফোন করল কি না, ছেলে অনলাইন হল কি না— সারা দিন সেই চিন্তাতেই কাটছে তেলঙ্গানার সালামপাড় গ্রামের স্থানীয় মণ্ডল পরিষদ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাজ়িয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো আর ইউক্রেনে যেতে পারব না ওকে ফেরাতে। তাই বাড়িতে বসে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কী-ই বা করব।’’
এক আত্মীয়ের পরামর্শে গত বছর ছেলেকে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছিলেন। তার আগে ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করলেও ছেলের প্রবল ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। ভারতের থেকে অনেক কম খরচে ইউক্রেনে পড়ানোর সুযোগ পেয়ে তাই আর ভাবেননি রাজ়িয়া। কিন্তু তখন কী আর জানতেন পরিস্থিতি এ রকম হবে। দিন কয়েক আগে শেষ বার ফোন করে ছেলে যা বলেছে, তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে মায়ের। ছেলে জানিয়েছে, চার দিকে লাগাতার বোমা পড়ছে। খাবার খুবই সামান্য। যেটুকু আছে, তা ভাগ করে খেলে পরের দিন কী ভাবে চলবে, জানে না কেউ। খাবার জলেরও প্রচণ্ড টান।
নিজ়ামাবাদের কালেক্টরের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে ছেলের যাবতীয় তথ্য তুলে দিয়েছেন রাজ়িয়া। স্থানীয় বিধান পরিষদ সদস্য কলাকুন্তলা কবিতা সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন। যদিও তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। কিন্তু হাল ছাড়েননি রাজ়িয়া। ছেলের হাসিমুখের আশ্বাস আর ঈশ্বরে ভরসা রেখেই দিন গুনছেন, কবে ঘরে ফেরে ছেলে। এ বারে তো আর তিনি যেতে পারছেন না ছেলেকে ঘরে ফেরাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy