Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীরে হামলার নতুন মুখ এ বার বুরহানের বন্ধু সবজার

‘থামলে চলবে না। চালিয়ে যেতে হবে আন্দোলন। পথে নেমে প্রশাসনের মুখোমুখি লড়তে হবে। প্রয়োজনে অস্ত্র তুলে নিতে হবে।’ কাশ্মীরি যুবকদের বিক্ষোভে সামিল করতে এক দিকে এমন প্ররোচনা। অন্য দিকে হুঁশিয়ারি—‘ভুল করেও যেন কোনও কাশ্মীরি সেনা বা পুলিশ যোগ না দেয়। দিলেই মৃত্যু।’

সবজার অহমেদ বাট

সবজার অহমেদ বাট

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

‘থামলে চলবে না। চালিয়ে যেতে হবে আন্দোলন। পথে নেমে প্রশাসনের মুখোমুখি লড়তে হবে। প্রয়োজনে অস্ত্র তুলে নিতে হবে।’

কাশ্মীরি যুবকদের বিক্ষোভে সামিল করতে এক দিকে এমন প্ররোচনা। অন্য দিকে হুঁশিয়ারি—‘ভুল করেও যেন কোনও কাশ্মীরি সেনা বা পুলিশ যোগ না দেয়। দিলেই মৃত্যু।’ ভূস্বর্গে ভাইরাল এই ভিডিওবার্তার মালিক হিজবুল মুজাহিদিন গোষ্ঠীর জঙ্গি সবজার অহমেদ বাট। হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির বন্ধু এই সবজারই এখন হিজবুলের নতুন পোস্টার বয়।

এক বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে ৭০ দিন ধরে জ্বলছে কাশ্মীর। তারই মধ্যে প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে সবজার অহমেদের ক্ষমতায়ন। বুরহানের মতো দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা সবজার বয়সে তরুণ। যাকে আপাতত বুরহানের স্থলাভিষিক্ত করেছে হিজবুল নেতৃত্ব। দায়িত্ব পেয়েই সংগঠন মজবুত করতে নেমে পড়েছে সে। একটি ভিডিওবার্তায় তরুণদের জেহাদে নামার আহ্বান জানিয়েছে সবজার। যা এখন কাশ্মীরের কিশোর-তরুণদের মোবাইলে ঘুরছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। সবজার ছাড়াও সক্রিয় রয়েছে বুরহান ঘনিষ্ঠ আর এক জঙ্গি নেতা জাকির রশিদ বাট। উচ্চ শিক্ষিত ওই জঙ্গির আর একটি ভিডিওবার্তাও এখন উপত্যকায় ঘুরছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

সবজার ও জাকির সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য হল, দুই হিজবুল জঙ্গিই সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে অস্ত্র শিক্ষা পেয়েছে। তবে সবজারকেই এক নম্বরে রাখছে নয়াদিল্লি। আগের সরকারের আমলে কাশ্মীর জুড়ে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের হত্যা করে অস্থিরতা তৈরির পিছনে মূল মাথা ছিল এই সবজার। দক্ষিণ কাশ্মীরের রুথসুনা এলাকার যুবক বছর পাঁচেক আগে জঙ্গি দলে নাম লেখায়। বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় বুরহানই সবজারকে জঙ্গি কার্যকলাপে টেনে আনে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। অন্য দিকে, জাকির রশিদ বাটের বাড়ি কাশ্মীরের নুরপুরা এলাকায়। জঙ্গি দলে নাম লেখানোর আগে তার নাম ছিল মেহমুদ গজনভি। চণ্ডীগড়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রটি ২০১৩ সালে ছুটিতে বাড়ি ফিরে এসেছিল। তার পর কলেজে ফিরে না গিয়ে জঙ্গি দলে নাম লেখায়। উচ্চশিক্ষিত, টেক-স্যাভি জঙ্গি নেতা এখন পুলিশের দুশ্চিন্তার কারণ।

গোয়েন্দাদের মতে, দুই জঙ্গির ভিডিওগুলির বক্তব্য মোটামুটি এক। কাশ্মীরি যুবকদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে এর মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, দু’টি ভিডিওতে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর নিন্দা ও একে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামার জন্য কাশ্মীরিদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। যুবকদের আরও বেশি সংখ্যায় পথে নামার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মীরে স্পেশ্যাল পুলিশ অফিসার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল রাজ্য প্রশাসন। ভিডিওতে রাজ্য পুলিশে যোগ দিতে যুবকদের নিষেধ করা হয়েছে।

জঙ্গিরা জানিয়েছে, পুলিশে নিয়োগের আসল লক্ষ্য ‘ইখওয়ানি’ (আত্মসমর্পণ করা, ধরা পড়া, জঙ্গি সংগঠন ছেড়ে আসা প্রাক্তন জঙ্গিদের নিয়ে তৈরি দল। যারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে) তৈরি করা। যাতে কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে স্পষ্ট হুমকি, যারা পুলিশে যোগ দেবে, তারা নিজেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে। কেন্দ্র মনে করছে, হুমকিতে বেশ ভালমতোই কাজ হয়েছে। কেননা, পুলিশে নিয়োগে যে পরিমাণ আবেদন আশা করা গিয়েছিল, ততটা জমা পড়েনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, সবজার ও জাকির গত দু’মাসে দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন জঙ্গি সংগ্রহে কিশোর-তরুণদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। এদের প্রকাশ্যে ঘুরতেও দেখা গিয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এদের প্রভাবেই জঙ্গি হতে ঘর ছেড়েছে শ’দেড়েক কাশ্মীরি যুবক। তারা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি শিবিরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabzar Ahmad Hizbul Burhan Wani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE