Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দল ছাড়লেন মুলায়ম-ঘনিষ্ঠ, কংগ্রেস-সপা জোট সঙ্কটে, মাঠে সনিয়া

ঘরে জটিলতা, বাইরেও জটিলতা।এক দিকে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির মধ্যে জোট সম্ভাবনা ক্রমশ তলানিতে এসে পৌঁছেছে। অন্য দিকে ভোটের ঠিক আগে অপ্রত্যাশিত ভাবেই সপা ছেড়ে মায়াবতীর দলে যোগ দিলেন মুলায়ম ঘনিষ্ঠ নেতা অম্বিকা চৌধরি।

মায়াবতী-শিবিরে অম্বিকা চৌধরি। শনিবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই।

মায়াবতী-শিবিরে অম্বিকা চৌধরি। শনিবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

ঘরে জটিলতা, বাইরেও জটিলতা।

এক দিকে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির মধ্যে জোট সম্ভাবনা ক্রমশ তলানিতে এসে পৌঁছেছে। অন্য দিকে ভোটের ঠিক আগে অপ্রত্যাশিত ভাবেই সপা ছেড়ে মায়াবতীর দলে যোগ দিলেন মুলায়ম ঘনিষ্ঠ নেতা অম্বিকা চৌধরি। প্রকাশ্যে অখিলেশ-মুলায়ম দ্বন্দ্ব মিটে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হলেও সপা-র অন্দরে চোরা অস্থিরতা যে রয়েই গিয়েছে, তা বর্ষীয়ান অম্বিকার শিবির বদলের ঘটনাতেই স্পষ্ট।

সমাজবাদী শিবির অবশ্য অম্বিকার দল ছাড়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে না। ভোটের মুখে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই থাকে বলে দায় এড়িয়ে আগামিকাল দলীয় ইস্তাহার প্রকাশ করতে চলেছেন অখিলেশ যাদব। ঐক্যের বার্তা দিতে তাতে থাকার কথা মুলায়মেরও। আজ অখিলেশ শিবির দিনভর ব্যস্ত ছিল জোটের অঙ্ক মেলাতে। সূত্রের খবর, আজ গোটা দিন সপা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে রফাসূত্র খোঁজার চেষ্টা করেন প্রিয়ঙ্কার দূত ধীরাজ শ্রীবাস্তব ও রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর। কিন্তু রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে জোট প্রায় ভেস্তে যাওয়ার মুখে। সপা নেতা নরেশ অগ্রবালের কথায়, ‘‘জোট প্রায় ভেঙে গিয়েছে। কংগ্রেস ১২০টি আসন চেয়েছিল। অখিলেশ ১০০র বেশি আসন ছাড়তে নারাজ। কংগ্রেস এমন ভাব দেখাচ্ছে যে মনে হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে ওরা খুব শক্তিশালী!’’

জোট বাঁচাতে রাতেই সক্রিয় হন সপা ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। একদিকে অখিলেশ দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। অন্য দিকে আসরে নেমে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী গুলাম নবি আজাদ ও আহমেদ পটেলকে নির্দেশ দিয়েছেন সপা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে। মাঠে নেমেছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও। রাতেই অখিলেশ-শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা রামগোপাল যাদবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রিয়ঙ্কা। বেশি রাতে জোট নিয়ে কথা এগোতে অখিলেশের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কংগ্রেসের নির্বাচনী কৌশল প্রণেতা প্রশান্ত কিশোরও। তবে রাত পর্যন্ত রফাসূত্র মেলেনি।

জোট নিয়ে এমন জটের পিছনে মূলত দু’টি কারণ উঠে এসেছে। প্রথমত— আসন সংখ্যা নিয়ে ঐকমত্য না হওয়া। দ্বিতীয়ত— কংগ্রেসকে যে আসনগুলি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলিতে তাদের জয়ের সম্ভাবনা না থাকা। প্রথম প্রশ্নে সুর নরম করার ইঙ্গিত দিলেও যে আসনগুলি সপা তাদের ছাড়তে চাইছে, তা নিয়ে তীব্র আপত্তি রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের। অভিযোগ, একতরফা সিদ্ধান্তে সপা নেতৃত্ব কংগ্রেসের জেতা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বেছে বেছে প্রায় নিশ্চিত হারা আসনগুলি কংগ্রেসকে দিয়েছে।

ক্ষুব্ধ রাজ্য কংগ্রেস নেতারা সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, এ ভাবে সম্মান খুইয়ে জোট করার বদলে বরং একলা লড়ুক দল। কিন্তু ২০১৯-এর বৃহত্তর জোটের কথা মাথায় রেখে আগ বাড়িয়ে জোট ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না কোনও পক্ষই। তবে কাল দুপুরের মধ্যে সপা সুর নরম করার ইঙ্গিত না দিলে কংগ্রেসও তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। প্রায় ৩৫০টি আসনে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছে তারা। রবিবার বিকেল পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে সোমবার প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে বলে কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর।

কংগ্রেস-সপা জোট নিয়ে এই অস্থিরতায় স্বস্তিতে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী ও বিজেপি। কংগ্রেস-সপা জোট ভেস্তে দিতে গোড়া থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন মায়াবতী। এক দিকে সপা’র মতো ‘গুণ্ডা ও সাম্প্রদায়িক’ দলের সঙ্গে গেলে রাহুলের দলেরই ক্ষতি হবে— এমন বার্তা দিয়ে কংগ্রেসকে জোট গড়া থেকে বিরত করতে সক্রিয় ছিলেন। অন্য দিকে ভোটের পরে সরকার গড়ার প্রশ্নে রাহুলদের সঙ্গে হাত মেলানোর রাস্তাও খোলা রাখতে চাইছেন তিনি। আজ মুলায়ম-অখিলেশের লড়াইকে পারিবারিক নাটক বলে মায়াবতী যখন সপাকে আক্রমণ শানাচ্ছেন, তখন আচমকাই তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হন অম্বিকা চৌধরি। তিনি বিএসপি-তে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করতেই তাঁকে বালিয়ার ফেপনা কেন্দ্র থেকে টিকিট দেন মায়াবতী। পরে অম্বিকা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে যে কেউ মুলায়মের বিরোধিতা করতেই পারেন। কিন্তু যে ভাবে অখিলেশ গোটা দেশের সামনে মুলায়মকে হেয় করেছেন, তা নিন্দনীয়। শাসক দল হিসেবে বিজেপিকে রোখার চেয়ে কোন্দলেই ব্যস্ত থেকেছে দল।’’

কংগ্রেস-সপা সঙ্কটে সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছে বিএসপি ও বিজেপি। জোট হলে রাজ্যের ১৯ শতাংশ মুসলিম ভোটের সিংহভাগই জোট প্রার্থীরা পেতেন বলে আশঙ্কা ছিল মায়াবতীর। কিন্তু এখন দুর্বল কংগ্রেস ও ঘরোয়া দ্বন্দ্বে দীর্ণ সপা’র পরিবর্তে মায়াবতীর পিছনেই সংখ্যালঘু সমাজ দাঁড়াবে বলে বসপা-র আশা।

স্বস্তিতে বিজেপিও। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, জোট না হওয়ার অর্থই হল কংগ্রেস-সপা ও বিএসপির মধ্যে মুসলিম ভোট ভাগ হবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের মতোই ফায়দা পাবে বিজেপি। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘সপা-কংগ্রেস জোট হলে বিজেপিকে রুখতে মুসলিমরা ঢেলে জোট প্রার্থীকে ভোট দিতেন। কিন্তু এখন সেই ভোট তিন ভাগ হবে। আর হিন্দু ভোট একত্রিত হলে ফায়দা পাবেন বিজেপি প্রার্থীরাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Samajwadi Party Congress UP Alliance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE