Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অমিত-রামগোপাল বৈঠক

জোট ছেড়ে লালুদের দল ভাঙছেন মুলায়ম

মুলায়ম আছেন মুলায়মেই! হতেই পারেন তিনি জনতা পরিবারের প্রবীণতম নেতা কিংবা লালুপ্রসাদের ‘সম্বন্ধী’। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত পিচ্ছিল চরিত্র হিসেবে পরিচিত এই নেতা এ বার বিহার নির্বাচনের আগে বিজেপি-বিরোধী জনতা-কংগ্রেস মহাজোটের বাইরে চলে গিয়ে সেটাই ফের প্রমাণ করলেন!

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:০১
Share: Save:

মুলায়ম আছেন মুলায়মেই! হতেই পারেন তিনি জনতা পরিবারের প্রবীণতম নেতা কিংবা লালুপ্রসাদের ‘সম্বন্ধী’। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত পিচ্ছিল চরিত্র হিসেবে পরিচিত এই নেতা এ বার বিহার নির্বাচনের আগে বিজেপি-বিরোধী জনতা-কংগ্রেস মহাজোটের বাইরে চলে গিয়ে সেটাই ফের প্রমাণ করলেন!

আজ লখনউয়ে মুলায়ম সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টির তরফে সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় মুখপাত্র রামগোপাল যাদব সরকারি ভাবে মহাজোট থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। বিহারে সপা-র প্রভাব না থাকলেও ভোটের প্রায় মুখে জনতা পরিবারের ভাঙন বিজেপি-বিরোধী ভোট ব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন অনেকে। মুলায়ম শুধু জোট থেকে বেরোননি, জেডিইউ-আরজেডির একাধিক প্রবীণ নেতাকে দলে টানার কাজও শুরু করেছেন!

সপা-র এই সিদ্ধান্তে জাতীয় স্তরে মাস পাঁচেক আগে তৈরি হওয়া ‘জনতা পরিবার’ ফের ভাঙনের মুখে। তাতে উল্লসিত বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবির। লোকজনশক্তি পার্টির নেতা, রামবিলাসের পুত্র চিরাগ পাসোয়ান বলেন, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল। মুলায়মজি প্রতিশোধ নিলেন। নব্বইয়ের দশকে লালু প্রসাদ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি।’’ বিজেপি সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডের কথায়, ‘‘অনৈতিক জোট এ ভাবেই ভেঙে যায়।’’ ৩০ অগস্ট গাঁধী ময়দানের সভায় মুলায়ম নিজে হাজির থাকেননি। পাঠিয়েছিলেন রামগোপাল, কিরণময় নন্দকে। তখনই তাঁর মহাজোটে থাকা না থাকা নিয়ে গুজব তৈরি হয়। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই, ১ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন রামগোপাল। ঘণ্টাখানেক কথা হয়। সে দিনই সপা জানায়, লখনউয়ে দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক হবে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত হবে। সূত্রের খবর, আরজেডি এবং জেডিইউ-এর একাধিক বিক্ষুব্ধ নেতাকে ফোন করেন রামগোপাল। ৭-৮ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ফের সপা-র সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বসছে। বিহার নির্বাচনের পরবর্তী রণনীতি সেখানে ঠিক হবে বলে জানান দলের বিহার রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র যাদব। কয়েক জন নেতাকে সপা-তে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ দিন আরজেডির সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রঘুনাথ ঝা’কে দলে টেনেছে সপা। বিহারের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা রামজীবন সিংহও সপা-তে নাম লিখিয়েছেন। ফোনে রঘুনাথ বলেন, ‘‘আমি গত কাল লখনউয়ে মুলায়মজির সঙ্গে দেখা করেছি। বিহারে নীতীশ কুমারের সঙ্গে যাওয়ায় আরজেডির ক্ষতি হচ্ছে। ১৭ বছর বিজেপির সঙ্গে যিনি ছিলেন, তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না।’’ আরজেডির আর এক ‘হাই-প্রোফাইল’ সহ-সভাপতি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ মনেপ্রাণে নীতীশ-বিরোধী। তিনি বলেন, ‘‘আসন বণ্টনের দিনই আমি বলেছিলাম, দু’জন বসে ঠিক করলে হবে না। সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে আসন বণ্টন করতে হবে। মহাজোটে সপা-কে উপেক্ষা করা হয়েছে।’’ বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বিহারে নরেন্দ্র মোদীর চারটি ‘পরিবর্তন র‌্যালি’-তে বিপুল লোক এসেছেন। এবং গাঁধী ময়দানে তিন দলের জোটের সভা ‘ফ্লপ’ করেছে। এ সব দেখেই পিছু হটেছেন মুলায়ম। বুঝেছেন, বিহারে নীতীশ-লালুর হার নিশ্চিত। তার প্রভাব পড়তে পারে ২০১৭-র উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনেও। তাই আগেভাগেই জোট ছাড়তে চাইছেন মুলায়ম-অখিলেশরা। বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন এ দিন পটনায় বলেন, ‘‘মহাজোট ডুবন্ত জাহাজ। সকলের আগে লাফ দিলেন মুলায়ম!’’

কেন মুলায়ম এমন করলেন? জনতা পরিবারের এক প্রবীণ নেতা বলছেন, বছর তিনেক আগে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়ও মুলায়মের ডিগবাজিতে জাতীয় রাজনীতিতে অপদস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘এ বারে পিছলে যাওয়ার পিছনে হয়তো সিবিআইয়ের কোনও মামলা আছে!’’— রসিকতা ওই নেতার।

তার মধ্যেই এ দিন নীতীশ কুমারের আচরণে বিস্মিত আমলা থেকে শুরু করে তাঁর দলের সহকর্মী— সকলেই। এ দিন সমস্তিপুরে একটি পলিটেকনিক কলেজের উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন নীতীশ। সেখানে তাঁর বক্তৃতার সময় তথ্য-সংগ্রহকারী অস্থায়ী কর্মীরা স্থায়িত্বের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালে তিনি রেগে যান। মঞ্চে দাঁড়িয়েই বিক্ষোভকারীদের হুমকি দেন, ‘‘বেশি চেঁচামেচি করলে তোমাদের একদম রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেব!’’ এখানেই না থেমে নীতীশ বলেন, ‘‘আমি প্যানেল বাতিলের চিঠিতে সই করিনি বলেই এখনও তোমাদের চাকরি রয়েছে। বেশি চিৎকার করলে চিঠিতে সই করে দেব! রাস্তায় চলে আসবে তোমরা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE