ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়াকে ‘জঙ্গিদের বোন’ বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী বিজয় শাহ। বিজেপি মন্ত্রীর সেই ‘ধর্মবিদ্বেষী’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় এখনও থামেনি। তার মধ্যেই বিজেপির ওই মন্ত্রীকে নিশানা করতে গিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সাংসদ রামগোপাল যাদব। তাঁর বিরুদ্ধে ‘জাতিবিদ্বেষমূলক’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, ব্যোমিকার নামের অর্থ আকাশকন্যা।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর বিদেশ মন্ত্রক এবং সেনার যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে নিয়মিত দেখা গিয়েছিল দুই ফৌজি-কন্যা সোফিয়া এবং ব্যোমিকাকে। ভারতের হামলায় পাকিস্তানের কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার অনুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামাবাদের সমস্ত মিথ্যা দাবিও খারিজ করতেন তাঁরা। সম্প্রতি রামগোপাল একটি সভায় বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, “ওদের এক মন্ত্রী কর্নেল কুরেশিকে কটু কথা বলেছেন। কিন্তু ওই মন্ত্রী জানেন না, কে ব্যোমিকা সিংহ আর কে এয়ার মার্শাল একে ভারতী। যদি জানতেন, তবে তাঁদেরও উনি নিশানা করতেন।”
এখানেই থামেননি রামগোপাল। তিনি দাবি করেন ব্যোমিকা হরিয়ানার জাটভ সম্প্রদায়ভুক্ত। আর ভারতী বিহারের পূর্ণিয়া এলাকার যাদব। এই প্রসঙ্গে এসপি সাংসদের সংযোজন, “ওঁরা তিন জনই (সোফিয়া, ব্যোমিকা এবং ভারতী) পিডিএ (পিছড়া, দলিত, অল্পসংখ্যক)। এক জনকে হেনস্থা করা হয়েছে মুসলিম বলে। আর এক জনকে রেহাই দেওয়া হয়েছে, কারণ ভাবা হয়েছে সে বোধ হয় রাজপুত। আর তৃতীয় জনেরটা জানত না।”
বিতর্ক শুরু হতেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ লেখেন, “সেনার পোশাককে বর্ণবাদের চোখ দিয়ে দেখা হয় না। ভারতীয় সেনার প্রতিটি জওয়ান তাঁদের জাতীয় কর্তব্য পালন করেন। তাঁরা কোনও ধর্ম বা বর্ণের প্রতিনিধি নন।” রামগোপালের ‘সংকীর্ণ মানসিকতা’ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আদিত্যনাথ। তার পর সাফাই দিয়েছেন এসপি প্রধান অখিলেশ সিংহ যাদবের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রামগোপালও। তাঁর দাবি, পুরো বক্তব্য না-শুনেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন।
কর্নেল সোফিয়ার নাম না নিয়েই ইনদওরের একটি কর্মসূচিতে মধ্যপ্রদেশের জনজাতি উন্নয়ন মন্ত্রী বিজয় বলেছিলেন, ‘‘যারা আমাদের মা-মেয়ের সিঁদুর মুছে দিয়েছে, তাদের বোনকেই ব্যবহার করে হামলাকারীদের শায়েস্তা করেছি। মোদীজি ওদের বোনকে দিয়েই উচিত শিক্ষা দিয়ে দিয়েছেন। মোদীজি তো আর ওদের মতো ব্যবহার করতে পারেন না। তাই ওদের সম্প্রদায়ের বোনকে দিয়েই ওদের বারোটা বাজিয়েছেন।’’
বিজয়ের ওই মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয় কংগ্রেস। বিতর্কের মুখে বিজয় বলেন, ‘‘আমার কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তা হলে ১০ বার ক্ষমা চাইতেও রাজি আমি।’’ তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টও। বৃহস্পতিবার কর্নেল সোফিয়া সম্পর্কে কুমন্তব্য করার জন্য বিজেপির মন্ত্রী শাহকে ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত।