বহু আলোচিত এবং রহস্যে মোড়া ওড়িশার কোনারক সূর্যমন্দিরের গর্ভগৃহের বালি সরানোর কাজ শুরু হল মঙ্গলবার থেকে। ১২২ বছর পর এই বালি সরানোর কাজ শুরু করল ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)। ব্রিটিশশাসিত সময় ১৯০৩ সাল থেকে সূর্যমন্দিরের গর্ভগৃহ বন্ধ। তার পর থেকে সেটি বন্ধ অবস্থাতেই পড়ে ছিল। কিন্তু সেই গর্ভগৃহের নিস্তব্ধতা ভাঙল ১২২ বছর পর। কী রয়েছে ওই গর্ভগৃহে, সেই রহস্যের সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে।
সূর্যমন্দিরের ওই গর্ভগৃহ বালি দিয়ে ঠাসা। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল, গর্ভগৃহের ওই বালি ক্রমশ জমাট বাঁধছে। তার ফলে বালির স্তূপ এবং মন্দিরের কাঠামোর মধ্যে ১৭ ফুট দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাতে মন্দিরের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা ধরা পড়ে। এই সমীক্ষাটি করেছিল সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিবিআরআই)। সিবিআরআই-এর পরামর্শ ছিল, হয় ওই ১৭ ফুট জায়গা নতুন বালি দিয়ে ভর্তি করতে হবে। নতুবা সমস্ত বালি বার করে এনে কাঠামোটি বাঁচানোর জন্য নতুন পন্থা ভাবতে হবে। তারা আশ্বাস দিয়েছিল, ১৭ ফুটের এই ব্যবধান তৈরি হওয়া সত্ত্বেও কাঠামোটি এখনও স্থিতিশীল রয়েছে। এর পরে এএসআই-এর চার সদস্যের কমিটি যে রিপোর্ট দেয়, তাতে বালি সরানোর কথাই বলা হয়। অবশেষে সেই বালি সরানোর কাজ শুরু হল।
আরও পড়ুন:
ত্রয়োদশ শতকে তৈরি এই মন্দিরের অভ্যন্তরে যে গৃহে বালি ভরা আছে, তার নাম ‘জগমোহন’। সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে মন্দিরের পশ্চিম দিকের দেওয়ালে ন’মিটার খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। ড্রিলিং এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে কোনও কম্পন না হয়। কম্পনের জেরে মন্দিরের দেওয়াল ভেঙে পড়তে পারে এই আশঙ্কা করেই অত্যন্ত সাবধানী পদক্ষেপ করতে হচ্ছে এএসআইকে। মন্দিরের পশ্চিম দিকে ৪ ফুট বাই ৪ ফুটের সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বালি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ১০ বিশেষজ্ঞের একটি দল এই পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘সূর্য মন্দিরের সংরক্ষণ’ বিষয়ক একটি জাতীয় সম্মেলনের সময় ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তকমা অর্জন করেছিল এই মন্দির। এই সম্মেলনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেল উপস্থিত ছিলেন। মন্দিরের ‘জগমোহন’ থেকে ভরাট করা বালি সরানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। এএসআই-কে তিনি বলেছিলেন, নিরাপদে কী ভাবে বালি সরানো যায়, তার একটি রিপোর্ট তৈরি করতে। সিবিআরআই-এর নেতৃত্বে গবেষণায় মন্দিরের কাঠামোগত ক্ষতির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছিল। তার পরই ‘জগমোহন’ থেকে বালি সরিয়ে ফেলা অপরিহার্য বলে মনে করা হয়।