ফাইল চিত্র।
জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত আম্মার জায়গায় আসছেন চিনাম্মাই! গতিপ্রকৃতি নাটকীয় ভাবে না বদলালে, আগামী সোমবার ও পনিরসেলভমের জায়গায় তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন শশিকলা নটরাজন। রবিবার দলের নেতা-মন্ত্রীদের বৈঠকের পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। তার আগেই অবশ্য এআইএডিএমকে-তে শশিকলা রাজ কায়েম হয়ে গিয়েছে। এ বার নিজের প্রতিষ্ঠাকে জোরদার করতে, দল এবং সরকারে জয়ার ছায়া মুছে ফেলার কাজটাও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। জয়ললিতা ঘনিষ্ঠ নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের জায়গায় নিয়ে আসছেন নিজের একান্ত অনুগামীদের। যার প্রথম কোপ পড়েছে প্রাক্তন মুখ্যসচিব এবং জয়ললিতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আমলা শীলা বালকৃষ্ণের ঘাড়ে। অবসর নেওয়ার পর শীলাকে সরকারের উপদেষ্টা পদে বসান জয়ললিতা। সেই শীলাকে একেবারে ছেঁটে ফেলা হল।
এআইএডিএমকে সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী ও পনিরসেলভমের অফিসেই এই নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের বিষয় ছিল- দল, সরকার বা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে কাকে সরিয়ে কাকে রাখা হবে তা স্থির করা। রাতেই বৈঠক শেষে জানানো হয়, উপদেষ্টার পদে আর থাকছেন না শীলা। তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে দায়িত্বে আনা হবে কি না, বা হলেও কাকে, তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। একই ভাবে সরকারের প্রধান সচিব কেএন ভেঙ্কটরমন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব রামালিঙ্গমকেও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
সরকারের শীর্ষ পদে বসার আগে দলকেও ঢেলে সাজাচ্ছেন শশিকলা। জয়ললিতার আমলে দলে পিছনের সারিতে থাকা অনেককেই তিনি নিয়ে আসছেন সামনের সারিতে। কেএ সেঙ্গোত্তাইয়ান বা সরদাই এস দুরাইস্বামীর মতো নেতা-নেত্রীরা জয়ললিতার আমলে খুব একটা গুরুত্ব পাননি। এঁরা এখন এআইএডিএমকে-র সাংগঠনিক সম্পাদক। এমনকী নিজের বেশ কিছু আত্মীয়স্বজনকেও নাকি দলে ঢোকাচ্ছেন তিনি। পোয়েজ গার্ডেনের প্রাসাদ থেকে এক সময় শশিকলার যে আত্মীয়দের দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন জয়া, তাঁদের অনেকেই আবার ফিরে এসেছেন সেখানে।
দলে জয়ার আমলের ক্ষমতাশালীদের আচমকা পিছনের সারিতে কেন পাঠাতে চাইছেন তিনি? কারণ দলের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব নেওয়াই এখন শশিকলার লক্ষ্য। ভবিষ্যতে সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন একদা জয়া ঘনিষ্ঠরাই। এমনিতেই জয়ললিতার মৃত্যুর পর থেকে এআইএডিএমকে-র শীর্ষ পদে শশিকলার বসা নিয়ে দলের একাংশ তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল। এমনকী শশিকলা তাঁর দীর্ঘদিনের বান্ধবী হওয়া সত্ত্বেও আম্মা নিজেও কোনও দিন তাঁকে দলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেননি। মুখ্যমন্ত্রীর হওয়ার পরও যে জয়ললিতার অনুগামীরা তাঁর বাধা হয়ে দাঁড়াবে পারেন, তা খুব ভাল ভাবেই জানেন তিনি। ফলে আগে থেকেই সেই কাঁটাগুলো সরিয়ে মুঠো শক্ত করতে চাইছেন শশিকলা।
আরও পড়ুন: ২২ বছর ধরে ড্রেনের মধ্যেই থাকেন এই দম্পতি!
রাজনৈতিক মহলের আর একটা অংশের মতে, দলে কাঁটাছেড়ার কাজটা এখন শুরু করলেও মুঠো শক্তের কাজটা নাকি অনেক আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে শুরু করে দিয়েছেন তামিলনাড়ুর জনমানসে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগও। কারণ দল যতই হাতে থাক, আম-জনতার সমর্থন ছাড়া যে খুব বেশি দিন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে টিকে থাকা অসম্ভব, শশিকলা তা বিলক্ষণ জানেন। তাই সরাসরি সামনে না থাকলেও জাল্লিকাট্টু নিয়ে আম-জনতার ভাবাবেগকেই প্রথম হাতিয়ার করেন তিনি।
মেরিনা সমুদ্রসৈকতে যখন শ’য়ে শয়ে মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তখন পুরোপুরি মুখ বন্ধ করে ছিলেন তিনি। একবারের জন্যও সামনে আসেননি। অথচ অর্ডিন্যান্স নিয়ে কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই সব কিছুর কৃতিত্ব নিতে মাঠে নেমে পড়েন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও পনিরসেলভমকে দিল্লি পাঠানো, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করানো, ছাড়পত্রের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মানানো, সবটার পিছনে যে তিনিই ছিলেন এটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে যা যা করার সবটাই করেছেন শশিকলা। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, নিজের হাতে গোছানো সরকারের মাথায় সোমবারই বসতে চলেছেন তিনি। আম্মার ছায়া যাতে তাঁকে তাড়া না করে, তার জন্য চেষ্টার কসুর করছেন না চিন্নাম্মা। কতটা পারবেন তা ভবিষ্যতের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy