Advertisement
E-Paper

পর পর তিন বছর! ২৪-২৫ বর্ষে স্কুলে ভর্তি কমল ১১ লক্ষ, কারণ কী? সরকারি স্কুল নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে উদ্বেগ স্পষ্ট

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত জেলাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রক। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০২৪-’২৫ বর্ষে দেশে স্কুলে পড়ুয়াভর্তি কমে হয়েছে ২৪.৬৯ কোটি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ১৪:৩১
School Enrolment Falls for Third Year; Govt Schools Lose Students as Private Share Hits Record 39%

সরকারি স্কুলে পড়ুয়া ভর্তি কমেই চলেছে। —ফাইল চিত্র।

মিড-ডে মিল, স্কুল পোশাক, সাইকেল— সবই দেওয়া হচ্ছে! এই সুযোগসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ফি বছর লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া কমছে স্কুলে। মূলত সরকার, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে কমছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। এটা শুধু এ রাজ্যের ছবি নয়, গোটা দেশ জুড়েই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রের নয়া রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষামহল।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত জেলাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রক। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০২৩-’২৪ দেশে স্কুলে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যা ছিল ২৪.৮০ কোটি। ২০২৪-’২৫ বর্ষে তা দাঁড়িয়েছে ২৪.৬৯ কোটি। অর্থাৎ, কমেছে ১১ লক্ষ। মূলত কমেছে ছেলে পড়ুয়া ভর্তি। বরং মেয়েদের ভর্তি সামান্য হলেও বেড়েছে।

২০২২-’২৩ সালেও দেশে পড়ুয়া ভর্তি কমেছিল। কমে হয়েছিল ২৫.১৮ কোটি। ওই বছরেও আসলে স্কুলে ভর্তি কমেছিল। কারণ হিসাবে প্রাথমিক ভাবে কোভিডপর্বকে দায়ী করা হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, অতিমারির ভয় কাটলেই আবার স্কুলে ভর্তি বাড়বে।

School Enrolment Falls for Third Year; Govt Schools Lose Students as Private Share Hits Record 39%

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাস্তবে তা হয়নি। উল্টে দেখা গেল, গত তিন বছরে স্কুলে ভর্তি সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ কমে গিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রকের এক আধিকারিকের দাবি, এই রিপোর্টে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া বদলানো হয়েছিল অতিমারিকালের পর। তাতে একই নাম বহু বার ছিল পড়ুয়াদের নামের তালিকায়। সে সব বাদ পড়েছে।

জনবিন্যাসের বদলকেও দ্বিতীয় কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জন্মহার কমেছে। তার ফলে জনবিন্যাসেও বদল ঘটেছে। তবে এটাই আসল কারণ কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে জনগণনা হলে।’’

রিপোর্ট বলছে, ভর্তি মূলত কমেছে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলে। ২০২২-’২৩ সালে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলে ভর্তির সংখ্যা যেখানে ১৩.৬২ কোটি ছিল, ২০২৪-’২৫ বর্ষে তা কমে হয়েছে ১২.১৬ কোটি। তবে ভর্তি বেড়েছে বেসরকারি স্কুলে। ২০২২-’২৩ বর্ষে ৮.৪২ কোটি থেকে বেড়ে ৯.৫৯ কোটি হয়েছে ২০২৪-’২৫ বর্ষে। দেশের স্কুলপড়ুয়াদের ৩৯ শতাংশই পড়াশোনা করে বেসরকারি স্কুলে। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি স্কুলের সংখ্যাও প্রায় ৪৮ হাজার বেড়েছে ২০২৪-’২৫ বর্ষে। উল্টে, প্রায় ৫০ হাজার সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই পর্বে।

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘বিশ্বায়নের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমের স্কুলগুলিতে ভর্তির হার কমছিল। উল্টো দিকে বাড়ছিল ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তির প্রবণতা। তবে সরাসরি সরকারি স্কুলে ভর্তির চাহিদা আগেও ছিল, এখনও রয়েছে। কিন্তু যদি দেখা যায়, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্কুলেও পড়ুয়া ভর্তির হার কমেছে, তা হলে বুঝতে হবে বিজেপি শিক্ষাব্যবস্থাকেই বিক্রি করে দিতে চাইছে।’’

অনেকের মতে, স্কুলে মিড-ডে মিল বা সাইকেল এক শ্রেণির মানুষের কাছে আকর্ষক বিষয় হতে পারে, কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে নয়। এখন মফস্‌সল শহরেও আইসিএসই বা সিবিএসই বোর্ডের বেসরকারি স্কুল প্রচুর। ওই সব স্কুলে পড়াশোনার মান ভাল মনে করে অনেকে ছেলেমেয়েদের সেখানে ভর্তি করাচ্ছেন।

এক শিক্ষকের প্রশ্ন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরাও ছেলেমেয়েদের সরকারি স্কুলে দিচ্ছেন না। তা হলে একজন সাধারণ অভিভাবক কোন ভরসায় সরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাবেন?’’

শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের শিক্ষানীতির জন্যই আজ শিক্ষার ব্যাপক বেসরকারিকরণ হচ্ছে। সরকারি স্কুলে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী নেই। আধুনিক সরঞ্জাম নেই! বাধ্য হয়েই অভিভাবকেরা বেসরকারি বিদ্যালয়ে সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে গরিব-সাধারণ বাড়ির সন্তানেরা প্রকৃত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’’

শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের কথায়, ‘‘আগামী দিনে শিক্ষার হাল কী হতে চলেছে, তারই ইঙ্গিত দিল কেন্দ্রের এই রিপোর্ট। এই রিপোর্টই প্রমাণ করছে, ২০২০ সালে যে নয়া শিক্ষানীতি চালু হয়েছে, এটা তারই কুফল। কেন্দ্রই তো শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ করছে। এর কুফল সকলকে ভুগতে হবে আগামী দিনে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের।’’

প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্তরকে প্রাথমিক শিক্ষা বা ‘এলিমেন্টারি এডুকেশন’ বলা হয়। এরও একাধিক স্তর রয়েছে। যেমন— প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক। কেন্দ্রের রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরে ভর্তির সংখ্যা অনেকটাই কমেছে প্রাথমিক স্তরে, অর্থাৎ প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে। তবে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আগে প্রি-স্কুলপর্ব সারার প্রবণতা বেড়েছে। রিপোর্ট বলছে, ২০২৪-’২৫ বর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ১.৯২ কোটি পড়ুয়ার মধ্যে ৮০ শতাংশই অঙ্গনওয়াড়িতে পড়াশোনা করেছে।

আবার স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়েছে মাধ্যমিক স্তরে, অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণিতে। এই বিষয়টিও শিক্ষামহলের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ‘কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘স্কুলছুট বেড়ে যাওয়াটা অত্যন্ত চিন্তার। পঠনপাঠন পদ্ধতি আরও আকর্ষণীয় করে তোলা দরকার। সঙ্গে পরিকাঠামোর উন্নতিও জরুরি।’’

Government Schools School students School Admission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy