প্রথমে অপারেশন সিঁদুর, তার পর মোদী সরকারের এগারো বছর পূর্তি উদ্যাপন। তার জেরে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে এ মাসেও সভাপতি নির্বাচন হওয়া বেশ মুশকিল বলেই মনে করছেসংশ্লিষ্ট মহল।
সভাপতি নির্বাচনের পথে এই মুহূর্তে মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের সাংগঠনিক নিয়ম। বিজেপির সংগঠন অনুযায়ী সর্বভারতীয় সভাপতিকে নির্বাচিত করবেন বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সভাপতিরা। সে ক্ষেত্রে নতুন সর্বভারতীয় সভাপতির অন্তত ১৯টি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সভাপতির সমর্থন প্রয়োজন। সেই রাজ্য সভাপতিদের আবার নির্বাচিত করবেন রাজ্য নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে ১৪টি রাজ্যের বিজেপি সভাপতি নির্বাচন হয়েছে। বাদ রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলি। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘রাজ্য সভাপতি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কোনও ভাবেই সর্বভারতীয় সভাপতি বেছে নেওয়া সম্ভব নয়।’’
এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে ২০২৭ সালে বিধানসভা নির্বাচন। ফলে আসন্ন নির্বাচনের সমীকরণ মেনেই ওই রাজ্যে সভাপতি নির্বাচনের পক্ষপাতী দল। যোগী আদিত্যনাথ নিজে ঠাকুর সম্প্রদায়ের ও বর্তমান সভাপতি ভূপেন্দ্র সিংহ চৌধরি জাঠ সম্প্রদায়ের। ফলে ওই দুই সম্প্রদায়কে বাদ দিয়েই নতুন মুখকে সভাপতি করার পক্ষপাতী দল। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে দল ব্রাহ্মণ না ওবিসি, কোন দিকে ঝুঁকবে। ব্রাহ্মণ নেতা হিসেবে দৌড়ে রয়েছেন মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডে, মহেশ শর্মার মতো নেতারা। অন্য দিকে, রাজ্যে উল্লেখযোগ্য ওবিসি মুখ হলেন বেবিরানি মৌর্য ও কেশবপ্রসাদ মৌর্য। এঁদের মধ্যে কেশবপ্রসাদ অতীতে যোগীর বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। সে ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের নারীকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী বেবিকে সভাপতি করা হলে ওবিসি সমাজের পাশাপাশি অর্ধেক আকাশকেও বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে।
গুজরাতে বিজেপির বর্তমান সভাপতি চন্দ্রকান্ত পাটিল কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দলীয় পদ ছাড়তে আগ্রহী। ওই রাজ্যে সমস্যা হল, দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। তাঁকেও সরানোর চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু পটেল সমাজের প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীকে সরানো হলে ওই রাজ্যে কাকে কুর্সিতে বসানো হবে এবং সে ক্ষেত্রে জাতপাতের সমীকরণ বজায় রেখে কী ভাবে নয়া রাজ্য সভাপতি বাছা হবে, সে সব নিয়েই চর্চা চলছে দলের মধ্যে। মধ্যপ্রদেশেও মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের বিরুদ্ধে একাধিক নেতা সরব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রশ্নের মুখে তাঁর ভূমিকাও। বর্তমান সভাপতি বিডি শর্মাকে সরিয়ে ফের কোনও ব্রাহ্মণকেই ওই পদে বসানো হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে দলে। দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের কট্টর মুখ বলে পরিচিত নরোত্তম মিশ্র। পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর ভোট। এই আবহে বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সরিয়ে দল নতুন কাউকে বেছে নেওয়ার ঝুঁকি নেয় কি না, তা-ই এখন দেখার।
তবে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বেছে নেওয়ার প্রশ্নে এর আগে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ এক প্রস্ত স্পষ্ট করে দিয়েছেন আরএসএস নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, অপারেশন সিঁদুরের আবহে নতুন করে কোনও নাম নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনও আলোচনা হয়নি। বিজেপি শেষ পর্যন্ত কারও কথা ভাবলে এবং আরএসএসের সঙ্গে সেই নাম নিয়ে আলোচনায় বসলে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নাগপুর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)