পহেলগাম কাণ্ডের দেড় মাস পরে ব্রিকস সম্মেলনে মোদী সরকারের কূটনৈতিক মান রক্ষা হল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। কারণ, ব্রাজ়িলের রিয়ো ডি জেনেইরো-র যৌথ বিবৃতিতে পহেলগাম কাণ্ডের নাম করে সন্ত্রাসবাদের কড়া নিন্দা করা না হলে, কানাডার জি-৭ এবং চিনের এসসি-ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মতোই এ বারেও শূন্য হাতে ফিরতে হত ভারতকে। বিজেপি এ বার সুপরিকল্পিত ভাবে মোদী সরকারের আন্তর্জাতিক অবস্থান নিয়ে প্রচার করবে। সাউথ ব্লকও পাকিস্তান প্রশ্নে ব্রিকস বিবৃতিকে সামনে নিয়ে আসবে অদূর ভবিষ্যতে। সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপূঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের আগে এর ফলে হাত কিছুটা শক্ত হল মোদীর, এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
কিন্তু পাশাপাশি প্রশ্নও উঠছে রিয়ো ডি জেনেইরোর এই বিবৃতি, ভারতের কোন কাজে লাগবে? প্রথমত এই বিবৃতিতে পহেলগাম কাণ্ডের নিন্দা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোথাও পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করে ওই রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি। ইসলামাবাদের সব আবহাওয়ার মিত্র বেজিং, ব্রিকস-এরই অন্যতম প্রভাবশালী দেশ এবং তাদের আপত্তিতেই পাকিস্তান বিরোধিতাকে সরাসরি রাখা যায়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর।
দ্বিতীয়ত, ব্রিকস গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে একটি বিবৃতি দিয়ে কাজ সারতে পারে, কিন্তু তার সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রের সঙ্কটে পাশে দলবদ্ধ ভাবে এসে দাঁড়িয়েছে এমন কোনও দৃষ্টান্ত নেই। ব্রিকসভুক্ত একটি রাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক ভাবে অন্য সদস্য রাষ্ট্রের পাশে তার প্রয়োজনে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সেটা স্থির হয় ওই দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং দেনা পাওনার উপর। ভারত পাকিস্তান সংঘাতের সময়ে ব্রিকস-কে একটি বহুপাক্ষিক মঞ্চ হিসেবে বা অথবা ব্রিকসভুক্ত কোনও রাষ্ট্রকে ভারতের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। ব্রিকস-এর লক্ষ্য, সদস্য রাষ্ট্রগুলির কিছু সাধারণ স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করা, পদক্ষেপের পরিকল্পনা করা। কোনও একটি দেশের বিশেষ স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রাখা নয়। ব্রিকস-এর কাছ থেকে ভারত কোনও মতাদর্শগত আশা যে করতে পারে না তা এর আগেও প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। ফলে ব্রাজ়িল ঘোষণাপত্রে ভারতের মাটিতে এর পরের সন্ত্রাসবাদী কোনও হামলার প্রতিরোধে কাজে লাগবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
পশ্চিমের প্রভাবের বাইরে থাকা একটি পরিবর্ত মঞ্চ হিসেবে ব্রিকস-এর গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে ভারতের কাছে। বিশ্ব ব্যবস্থায় বহু বিকল্প আবেগ স্বর পাচ্ছে ব্রিকস-এ। এখনও পর্যন্ত যা হয়তো শুধু ভাষ্য হয়েই থাকছে। কিন্তু জি৭ বা জি২০-র পশ্চিমী শক্তির সঙ্গে দরাদরি করতে গেলে ব্রিকস ভাষ্য ভারতের কাছে একটা অস্ত্র। তারা দু’তরফের মধ্যে সেতু তৈরি করতে সক্ষম। তবে সেটাও করতে হয় নিক্তিতে মেপে, ভারসাম্য রক্ষা করে।
সব মিলিয়ে রিয়ো ডি জেনেইরো-র ঘোষণাপত্রে ঘরোয়া রাজনীতিতে স্বস্তি রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তা কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)