শাহিন বাগে চলছে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন। ছবি: পিটিআই
‘প্রতিবাদ করুন, কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে নয়’। এই অবস্থান নিয়েই শাহিন বাগ থেকে আন্দোলন অন্যত্র সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করল সুপ্রিম কোর্ট। মধ্যস্থতার জন্য দুই আইনজীবীকে নিয়োগ করে দিল বিচারপতি এস কে কল-এর বেঞ্চ। সোমবারের শুনানিতে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘প্রতিবাদ করা মৌলিক অধিকার। ...কিন্তু প্রত্যেকেই যদি রাস্তা আটকে আন্দোলন করেন, তা হলে সাধারণ মানুষ যাবেন কোথায়?’’
মামলাটি করেন আইনজীবী অমিত সাহনি। শাহিন বাগের আন্দোলনের উল্লেখ করে দিল্লির রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। সেই মামলার শুনানিতেই মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করল সুপ্রিম কোর্ট। বর্ষীয়ান আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও আইনজীবী সাধনা রামচন্দ্রনকে নিয়োগ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। দুই আইনজীবী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে অন্য কোনও বিকল্প জায়গায় আন্দোলন করার প্রস্তাব দেবেন। আন্দোলনকারী এবং পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আন্দোলনের জন্য বিকল্প কোনও জায়গা ঠিক করে দেবেন তাঁরা। এই প্রক্রিয়ায় দুই আইনজীবীকে সাহায্য করবেন কেন্দ্রের প্রাক্তন তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ।
অমিত সাহনির পাশাপাশি শাহিন বাগের আন্দোলনের জট কাটাতে সুপ্রিম কোর্টের মধ্যস্থতার আর্জি জানিয়েছিলেন ভীম আর্মি চিফ চন্দ্রশেখর আজাদ এবং আরও দু’জন। চন্দ্রশেখর একটি সভায় মন্তব্য করেছিলেন, এই রকম চলতে থাকলে সারা দেশে আরও ৫০০ শাহিন বাগ হবে। সেই বিষয়টি তুলে ধরে এ দিন সওয়াল করেন অমিত সাহনি। দিল্লি সরকারের পক্ষে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
আরও পড়ুন: ২৫০০ কোটি মেটানোর আর্জি ভোডাফোনের, ফেরাল সুপ্রিম কোর্ট
বিচারপতি কল বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করা মৌলিক অধিকার। রাস্তা না আটকে প্রতিবাদের বিকল্প জায়গা কী হতে পারে?’’ জবাবে দিল্লি পুলিশের আইনীজীবী বলেন, ‘‘তাঁরা বিকল্প জায়গা খুঁজে দিতে পারেন।’’ তবে একই সঙ্গে বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘(আন্দোলনের) কিছু গণ্ডি ও সীমানা আছে। আপনারা প্রতিবাদ করতে চান। কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আগামিকাল সমাজের অন্য কোনও অংশ অন্য কোনও জায়গায় প্রতিবাদ শুরু করতে পারে...। কিছু নিয়ম থাকা উচিত, যাতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকে।’’ দুই আইনজীবীও আশাবাদী, আন্দোলনের সুষ্ঠু সমাধান হবে। তাঁরা বলেন, ‘‘কিছুটা সময় দিন। আমরা সমাধান বের করব।’’
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীতে মহিলাদের স্থায়ী কমিশনড পদে নিয়োগের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির শাহিন বাগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মহিলারা। সেই আন্দোলন ঘিরে সারা দেশেই ব্যাপক আলোড়ন। এমনকি, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনেও শাহিন বাগের আন্দোলনকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। গোড়া থেকেই এই আন্দোলন তুলতে সরকার ও পুলিশ প্রশাসন চেষ্টার কসুর করেনি। কিন্তু আন্দোলনকারীদের টলানো যায়নি। উল্টে শাহিন বাগের ধাঁচে কলকাতা, লখনউ-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টও সেই আন্দোলনে কোনও রাশ টানতে রাজি হয়নি। তবে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করে আন্দোলনের স্থান পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করল সর্বোচ্চ আদালত। এতে স্পষ্ট, অন্যত্র সরতে পারে, তবে আন্দোলন আপাতত থামছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy