এক শশীর জয়ে দলই ছেড়ে দিতে হল আর এক শশীকে!
কংগ্রেসের দুর্দিনে তিরুঅনন্তপুরম থেকে ১৫ হাজার ভোটে জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য লোকসভায় গিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন কর্তা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী তারুর। তাঁর ওই জয়ের ধাক্কায় এখন বেসামাল কেরলের বিরোধী দুই বাম দল সিপিএম এবং সিপিআই। তিরুঅনন্তপুরম আসনটি টাকার বিনিময়ে ছাড়া হয়েছিল কি না, এমনই অভিযোগ উঠেছে বাম শিবিরে। দলে শাস্তির মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত দলই ছেড়ে দিয়েছেন সিপিআইয়ের তিরুঅনন্তপুরম জেলা সম্পাদক ভি শশী। দলের রাজ্য কাউন্সিল থেকে সরতে হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী সি দিবাকরণ-সহ আরও এক জনকে। আর ওই কেন্দ্রে ভুল প্রার্থী মনোনয়নের দায় শুধু সিপিআইয়ের নয়, তাতে বাম জোট এলডিএফ নেতৃত্বেরও ভূমিকা আছে বলে মন্তব্য করে বিতর্কে আরও ঘৃতাহুতি দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবি!
বেবি এ বার হেরেছেন কংগ্রেস-সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী এন কে প্রেমচন্দ্রনের কাছে। লোকসভা ভোটের মুখেই আরএসপি কেরলে বাম জোট এলডিএফ ছেড়ে বেরিয়েছে। তার পরের সঙ্কট আর এক বাম শরিক সিপিআইকে নিয়ে। তিরুঅনন্তপুরম আসনে তারুরের বিরুদ্ধে সিপিআই প্রার্থী করেছিল ডক্টর বেনেট আব্রাহামকে। দলের বাইরে থেকে এনে কেরলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন প্রধান আব্রাহামকে প্রার্থী করলে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের ভোট টানতে সুবিধা হবে, এমনই যুক্তি দেওয়া হয়েছিল। আব্রাহাম ওই আসনে তৃতীয় হয়েছেন। তাঁর চেয়ে ৩৪ হাজার ভোট বেশি পেয়ে দ্বিতীয় বিজেপি-র ও রাজাগোপাল। পরাজয়ের পরেই টাকার বিনিময়ে দুর্বল প্রার্থী দেওয়ার অভিযোগে উত্তপ্ত হয়েছে সিপিআই।
অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ এসেছে, ভোটের প্রচারের তহবিল খরচেও কিছু অনিয়ম হয়েছে। খরচের বড় অংশই আবার এসেছে খোদ প্রার্থীর কাছ থেকে! তাই টাকার বিনিময়েই তিরুঅনন্তপুরমের মতো ‘মর্যাদার আসনে’ দুর্বল প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল কি না, প্রশ্ন থাকছেই। তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে শশী, দিবাকরণদের রাজ্য কাউন্সিল থেকে সরিয়ে দিয়েছেন সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব। এর মধ্যে দিবাকরণ আবার দলের জাতীয় কর্মসমিতিরও সদস্য। ক্ষুব্ধ জেলা সম্পাদক শশী আরএসপি নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী শিবু বেবি জনের সঙ্গে দেখা করে এসে সিপিআই ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। মনে করা হচ্ছে, বাম শিবির ছেড়ে বিদ্রোহী শশী আরএসপি-তেই যাবেন।
শশীর বক্তব্য, “আব্রাহামকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে অনুমোদিত হয়েছিল। সেখানে রাজ্য সম্পাদক পি রবীন্দ্রন এবং আরও কিছু জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যও ছিলেন। অথচ ভুল প্রার্থী বাছার দায় জেলা নেতৃত্বের উপরে চাপানো হল!” আবার সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক রবীন্দ্রনের দাবি, তাঁদের কাছে তথ্য আড়াল করা হয়েছিল। সিপিআইকে নিয়ে এই বিতর্কেই নয়া মাত্রা এনে দিয়েছেন বেবি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, এলডিএফে আলোচনা করে তবেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। সুতরাং, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হয়ে থাকলে নেতৃত্ব দায় অস্বীকার করতে পারেন না। অর্থাৎ তাঁর সুর মিলে গিয়েছে বিদ্রোহী শশীর সঙ্গেই!
সিপিএম ও সিপিআইয়ের সংযুক্তির পক্ষে সদ্যই সওয়াল করেছেন বেবি। আব্রাহাম-কাণ্ডে তাঁর মতামতও পিনারাই বিজয়নদের বিপক্ষে। এর্নাকুলামের মতো কিছু আসনে বিজয়নেরা যে ক’জন নির্দলকে টিকিট দিয়েছিলেন, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েও এখন সিপিএমের একাংশ দলে ফের প্রশ্ন তোলার মওকা পেয়ে যাচ্ছে বেবির ওই মতের দৌলতেই! স্বভাবতই জল্পনা বাড়ছে, বেবি কি পরিকল্পনামাফিক বিজয়ন শিবিরের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বাড়াচ্ছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy