হাইকোর্ট আপাতত হাত তুলে দিয়েছে। সিবিআই তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মন বুঝে পদক্ষেপ করবে। এখন নজর কাল সুপ্রিম কোর্টের দিকে। তার আগে আজ সাহসী মুখ করে দিল্লি ঘুরে গেলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান।
এমন একটি সময়, যখন ব্যপম কেলেঙ্কারি নিয়ে ভোপাল থেকে দিল্লি উত্তাল। এমন একটি সময়, যখন নরেন্দ্র মোদী বিদেশে। আর সেই সময়েই ‘বন্ধু’ নেত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করে গেলেন শিবরাজ। এসেছিলেন অবশ্য সামনের মাসে ভোপালে আন্তর্জাতিক হিন্দি সম্মেলনের প্রস্তুতি বৈঠকের অছিলায়। কিন্তু আসলে দিল্লির জলটা মেপে গেলেন তিনি। সাহসী মুখ করে বললেন, ইস্তফা দেবেন না। হাইকোর্ট আপাতত সিবিআই তদন্ত নিয়ে রায় না দিলেও সুপ্রিম কোর্টেও একই দাবি জানাবেন তিনি।
কিন্তু শিবরাজের এই ক্ষণিকের সফরে তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন না দলের অন্য কোনও নেতা। সুষমার সঙ্গে বৈঠকের পর বললেন, নিহত সাংবাদিক অক্ষয় সিংহের বাড়িতেও যাবেন। তার পরেই ফেরত ভোপালে। কিন্তু শিবরাজ জানেন, ব্যপমের তদন্ত যদি এক বার সিবিআইয়ের হাতে চলে যায়, তা হলে দলের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধী নরেন্দ্র মোদীর থেকে অনেক বেশি বেগ পেতে হবে। কারণ, সিবিআই সরাসরি কেন্দ্রের অধীনে। তদন্ত যতই নিরপেক্ষ হোক, শাসক দলের হাতে সিবিআই-এর ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ আজ নতুন নয়। তবু ভরসা একটাই, যে ভাবে অতীতে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্ত খারিজ করে দিয়েছে, এ বারেও সেই পথেই হাঁটবে আদালত।
আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানির এক দিন আগে শিবরাজ দিল্লিতে দাঁড়িয়ে ফলাও করে বললেন, ‘‘কংগ্রেস আমল থেকে চলা দুর্নীতির রাশ টানতে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। ঘটনা সামনে আসতেই তার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এখন সুপ্রিম কোর্টেও সিবিআই তদন্তের অনুরোধ করব।’’ প্রথমে সিবিআই তদন্তে নিমরাজি হয়ে পরে তা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ভোলবদল নিয়েও সাফাই দেন তিনি। বলেন, ‘‘দুটোই সত্য। আগে সব আদালত বলেছে, তদন্ত ঠিক হচ্ছে। তাই সিবিআই তদন্তের আর্জি করিনি। কিন্তু এখন গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি এমন মোড় নিয়েছে, তাতে সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই সিবিআই তদন্ত চাইছি।’’
কিন্তু বিরোধী দল কংগ্রেস তাতে ছেড়ে কথা বলছে কোথায়? কংগ্রেসের দাবি, শুধু সিবিআই তদন্ত হলেই হবে না। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে একটি নয়, দু’-দুটি পৃথক সিবিআই তদন্ত হওয়া দরকার। একটি করবে ব্যপম কেলেঙ্কারির তদন্ত। আর একটি একের পর এক হত্যা-রহস্য উদ্ধারে। কারণ, রোজই নতুন নতুন মৃত্যুর ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনই পুরনো মৃত্যুর ঘটনাতেও গরমিল সামনে আসছে। নম্রতা দামোরের মৃত্যুকে এত দিন আত্মহত্যা বলে দাবি করে এসেছে পুলিশ। কিন্তু চিকিৎসকই বলছেন, এটি হত্যা। অভিযোগ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। অনেক মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারকেও আড়াল করা হচ্ছে। এফআইআর-এ মন্ত্রীর নাম লেখা হয়নি, কিন্তু তাঁর অভিযুক্ত স্ত্রী-কে স্রেফ ‘মন্ত্রানী’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এই যদি তদন্তের অবস্থা হয়, তা হলে শিবরাজ কোন সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছেন? এখনই তো তাঁর সরে যাওয়া উচিত।
বিজেপি-র এক নেতা বলেন, পরিস্থিতি যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে শিবরাজের কাছে এটি এসপার-ওসপার লড়াই। বিজেপি-র একটি অংশ এখন তাঁর প্রতি খড়গহস্ত হচ্ছে। অরুণ জেটলি প্রথম দিনেই সিবিআই তদন্তের ইঙ্গিত দিয়ে বসে আছেন। উমা ভারতীও ঠারে ঠারে শিবরাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। শিবরাজের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুলাল গৌড়ও এখন বিদ্রোহী। শিবরাজ নিজের রাজ্যে মন্ত্রিসভার রদবদল করতে চেয়েছিলেন, এখন সেটিও করতে পারছেন না। ফলে এখন সব মিলিয়ে আজ সাহসী মুখ করে ইস্তফা না দেওয়ার কথা বললেও যদি তাঁর গদি টলমল হয়, তা হলে তিনিও ঘুরে দাঁড়াবেন। কারণ, ব্যপম কেলেঙ্কারিতে সুরেশ সোনি-সহ বেশ কিছু আরএসএস নেতারও নাম জড়িয়েছে ইতিমধ্যে। বিজেপির নেতাটির কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে ডুবলে সকলকে নিয়ে ডুববেন। যদি তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, তা হলে সকলকে নিয়েই দাঁড়াবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy