Advertisement
E-Paper

শিনার মা এ-ই, দেখিয়ে দিলেন সিদ্ধার্থ

দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর পরে দেখা। ১৯৮৯ সালে গুয়াহাটিতে একদিন ইন্দ্রাণী বলেছিলেন, ‘শিলং যাচ্ছি।’ ব্যস, সেই যে গিয়েছিলেন আর ফেরেননি। তেইশ বছরের সিদ্ধার্থ দাসের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন চিরতরে। ইন্দ্রাণীকে খুঁজতে শিলং গিয়েছিলেন ‘সিড’। খুঁজে পাননি।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৩
শিনার বাবা সিদ্ধার্থ দাসও। —ফাইল চিত্র।

শিনার বাবা সিদ্ধার্থ দাসও। —ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর পরে দেখা।

১৯৮৯ সালে গুয়াহাটিতে একদিন ইন্দ্রাণী বলেছিলেন, ‘শিলং যাচ্ছি।’ ব্যস, সেই যে গিয়েছিলেন আর ফেরেননি। তেইশ বছরের সিদ্ধার্থ দাসের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন চিরতরে। ইন্দ্রাণীকে খুঁজতে শিলং গিয়েছিলেন ‘সিড’। খুঁজে পাননি।

এত দিন পরে দেখা হল শেষে পুলিশের ঘেরাটোপে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ খার থানায় ঢোকার পরে সিদ্ধার্থ প্রথমে কিছুক্ষণ অন্য ঘরে ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দ্রাণীর সঙ্গে দেখাই করতে চাইছিলেন না তিনি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে যেতেই হয় ইন্দ্রাণীর সামনে। সাদা শার্ট, জিন্স পরে বসেছিলেন ইন্দ্রাণী। থানার এক কোণের একটি ঘরে।

দেখা হল। ইন্দ্রাণীকে দেখিয়ে সিদ্ধার্থ বললেন, ইনিই শিনা ও মিখাইলের মা।

পুলিশ জানিয়েছে, পাশাপাশি দু’টি চেয়ারে বসানো হয়েছিল দু’জনকে। এক ঝটকায় চোখের সামনে ফিরে এসেছিল কি সেই তিনটে বছর? ১৯৮৬-৮৯? স্কুটারে করে ঘুরে বেড়ানো! একসঙ্গে ব্যবসা চালানো! শিনা ও মিখাইলের জন্ম!

নার্সিং‌হোমের বিছানায় সদ্যোজাত শিনাকে নিয়ে শুয়ে রয়েছেন ইন্দ্রাণী! সব কিছু! মুখ খোলেননি সিদ্ধার্থ। পুলিশ জানিয়েছে, পাশাপাশি বসে কেউ কারও সঙ্গে কথাও বলেননি। শুধু সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন— হ্যাঁ, ইনিই শিনার মা।

বৃহস্পতিবারেই শেষ নয়। শুক্রবারও থানায় মুখোমুখি হতে হয়েছে দু’জনকে। পুলিশ জানতে চেয়েছে, তাঁদের ফেলে আসা জীবনের কথা। কীসের ভিত্তিতে তিনি দাবি করছেন যে শিনা ও মিখাইল তাঁরই সন্তান, সে প্রশ্নও করা হয় সিদ্ধার্থকে। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল কি হয়নি, তাই নিয়ে যে বিতর্ক, সে বিষয়েও জেরা করা হয়েছে তাঁদের।

সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন, ইন্দ্রাণী সম্পর্কে সামান্যতম অনুভূতিও আর অবশিষ্ট নেই তাঁর মনে। ভুলে যেতে চেয়েছেন প্রাণপণে। ভুলেও গিয়েছেন। সেই ভোলার পথে সাহায্য করেছে স্ত্রী বাবলির সাহচর্য। স্বামীকে তিনি সর্বতো ভাবে ঘিরে রেখেছেন ১৭ বছর ধরে। স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করেছেন প্রতিটি কঠিন মূহূর্ত। মোকাবিলা করেছেন মিডিয়ার। সিদ্ধার্থ-র কথায়, ‘‘আমার দেখা দু’টি নারী একেবারে ঠিক যেন দুই মেরুর মানুষ। যে জীবনটায় আজ আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি, আমি তাতেই খুশি।’’ সেই কারণেই আজ আর তিনি কোনও ভাবেই ইন্দ্রাণীর কোনও ধরনের সংস্রবে থাকতে চান না। উপায় ছিল না, তাই আসতে হয়েছে মুম্বই। আজই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁর রক্ত নেওয়া হয়েছে। এ বার তিনি ফিরে যেতে চান কলকাতায় যত দ্রুত সম্ভব। তাঁর কথায়, ‘‘২৫ বছর আগে যে দিন ইন্দ্রাণী আমাকে, বাচ্চা দু’টোকে ফেলে চলে গিয়েছিল, সে দিন থেকেই দু’জনের জীবন বয়ে গিয়েছে একেবারেই ভিন্ন খাতে।’’

তারপর থেকে সময় সিদ্ধার্থকে নিয়ে অনেক খেলা খেলেছে। প্রতি পদে সংগ্রাম করতে হয়েছে জীবনের সঙ্গে। এক শহর থেকে অন্য শহরে ছুটে যেতে হয়েছে চাকরির জন্য। শেষে কলকাতায় নতুন করে সংসার পেতেছেন। ব্যস্ত শহরের গড্ডলিকায় ভেসে গিয়েছেন। অন্য দিকে রকেটের গতিতে উঠেছেন ইন্দ্রাণী। ‘শিলং যাচ্ছি’ বলে বেরিয়ে তিনিও এসেছিলেন কলকাতায়। আলাপ ব্যবসায়ী সঞ্জীব খন্নার সঙ্গে। কিন্তু ইন্দ্রাণী জানতেন, কলকাতা তাঁর শেষ গন্তব্য নয়। বিলাসী ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতে করতে সঞ্জীবের চেয়েও যাঁরা বেশি ক্ষমতাবান, ধনবান তাঁদের সঙ্গে পরিচয়। মুম্বইয়ের হাতছানি দেখতে পাওয়া। ঠিক যেমন অবলীলায় দুই সন্তানকে ফেলে গুয়াহাটি থেকে চলে আসতে পেরেছিলেন, ঠিক তেমনই কলকাতা ছেড়েও চলে গেলেন মুম্বই।

আজ যখন সিদ্ধার্থ-ইন্দ্রাণীর পথ এক বিন্দুতে মিলল, তখন ইন্দ্রাণীর বিরুদ্ধে তাঁদেরই মেয়েকে খুন করার অভিযোগ! সিদ্ধার্থ এই ইন্দ্রাণীকে চেনেন না। কলকাতায় তাঁর স্ত্রী বাবলিকে ফোন করলেও ভেসে আসে একটা কঠোর গলা। বলে, ‘‘ও (সিদ্ধার্থ) কিন্তু ইন্দ্রাণীর সঙ্গে নয়, পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছে।’’

abpnewsletters mikhail bora sheena bora indrani mukerjea mother sidhratha das sidhartha das sidhratha das indrani mukerjea meeting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy