বন্যায় বিপর্যস্ত সিকিম। —ফাইল চিত্র।
বিপর্যয়ের ছ’দিন পরে শিলিগুড়িতে নেমে এখনও চোখেমুখে আতঙ্ক রিনা অধিকারীর। সামান্য আওয়াজেও চমকে উঠছেন। মনে পড়ছে, বিপর্যয়ের পরে এমনই সব শব্দ কানে ভেসে এসেছিল। হোটেল ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। চোখের সামনে পাথরের চাঁই পড়ে দুমড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া গাড়ি দেখতে হয়েছে। হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা রিনা, তাঁর স্বামী সমীর এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ছেলে সায়ন্ত লাচেনে আটকে পড়েন।
সায়ন্ত বলেন, ‘‘এক দিন দুপুরে হোটেলে ফিরে দেখি, পিছনের অংশ ধসে গিয়েছে। কাছেই একটি পাহাড়ের মাথার অংশ ধসে সমান হয়ে গিয়েছে। পরে, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। হোটেলে ফিরতে সাহস হয়নি।’’ সোমবার বায়ুসেনার এমআই-১৭ হেলিকপ্টারে অন্য পর্যটকদের সঙ্গে তাঁরা নামেন মঙ্গনে। সেখান থেকে সিকিম সরকারের বাসে গ্যাংটকে। এ দিন দুপুরে শিলিগুড়ি।
হুগলির ভদ্রকালীর অলক সেন এবং অপর্ণা সেন আটকে ছিলেন লাচুংয়ে। তাঁরা চুংথাং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে গিয়েছিলেন। সেটা জলের তোড়ে উড়ে গিয়েছে জেনে শিউরে উঠেছেন। বায়ুসেনা হেলিকপ্টারে তাঁদের উদ্ধার করে সোমবার। তার পরে বাসে পাকিয়ং বিমানবন্দর হয়ে শিলিগুড়ি। মঙ্গলবার ভোরে কলকাতার ট্রেন।
এ দিনই বায়ুসেনা উদ্ধার করেছে হুগলির সিঙ্গুরের বাসিন্দা তৃষা দাস, তাঁর স্বামী মৃগাঙ্ক পাইন এবং তাঁদের ১০ জনের দলকে। শিলিগুড়িতে নেমে হাঁফ ছাড়েন তাঁরা। দক্ষিণ লোনাক হ্রদে জলোচ্ছ্বাস এবং হড়পা বানে বিপর্যস্ত সিকিম থেকে উদ্ধার হওয়া পর্যটকেরা ফিরছেন এমনই ভয়, আতঙ্ক নিয়ে।
এ দিন সকালে উত্তর সিকিম থেকে পর্যটকদের উদ্ধারে নামে বায়ুসেনার একাধিক এবং ‘সিকিম উর্জা’র একটি হেলিকপ্টার। খারাপ আবহাওয়ার জন্য বেলা ১২টার পরে উদ্ধারকাজ করা যায়নি। তবে তার মধ্যেও ১৭৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই কাজে একজোট হয়ে করেছে সেনা, সিকিম সরকার, ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব সিকিম’।
এ দিনও জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদীর পারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের বাইশটি দল খুঁজেছে অস্ত্র-বিস্ফোরক। অসংখ্য বিস্ফোরক ফাটিয়ে নিষ্ক্রিয় করছে তারা। এ দিন অন্তত ২০টি জায়গায় শতাধিক বিস্ফোরক ফাটানো হয়েছে। এগুলি সবই হড়পা বানে সিকিম থেকে ভেসে এসেছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, কত বিস্ফোরক ভেসে এসেছে এবং কতটুকু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তার আন্দাজ সেনাবাহিনী দেয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy