E-Paper

গন্ডারের তৃণভূমি রক্ষায় কোপ পড়ছে শিমুল-জারুলে

জঙ্গলে শিমুল-জারুল গাছই বাড়ায় শোভা। একঘেয়ে ঘাসবনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা নিষ্প্রাণ ফ্রেমে প্রাণ এনে দেয় বিরাট শিমুল গাছ আর তার লাল ফুলের দল।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৯
An image of trees

কাজিরাঙায় শিমুল। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত। 

কবি-সাহিত্যিক হোন বা চিত্রগ্রাহক-জঙ্গলে শিমুল গাছে রাঙা ফুলের আগুন বা জারুল গাছের বেগুনি আঁচলের হাতছানি উপেক্ষা করার সাধ্য কী! সেই গাছকেই কি না হাতে না মেরে ভাতে মারার ব্যবস্থা! কিন্তু অসমে গন্ডারের তৃণভূমি বাঁচাতে অনন্যোপায়
হয়েই এ কাজ করা হচ্ছে।

জঙ্গলে শিমুল-জারুল গাছই বাড়ায় শোভা। একঘেয়ে ঘাসবনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা নিষ্প্রাণ ফ্রেমে প্রাণ এনে দেয় বিরাট শিমুল গাছ আর তার লাল ফুলের দল। অনেক পাখি বাসাও বাঁধে সেই গাছে। আবার জারুল গাছের দল গোলাপি চাদরে ঢেকে দেয় জঙ্গলের আকাশ, মাটি। কিন্তু সেই সুন্দরী গাছের দল এবং এমন আরও অনেক সুপরিচিত গাছেদের নিয়ে এখন বেজায় বিপাকে পড়েছেন অসমের বনকর্তারা। কারণ গাছ হলেই তো হল না, কোন জঙ্গলে, কোন ধরনের এলাকায়, কোন প্রাণীর জন্য কী ধরনের গাছ ভাল— তার বাঁধাধরা নিয়ম রয়েছে। তাই মানস, পবিতরা, ওরাং, কাজিরাঙার তৃণভূমিতে হওয়া শিমুল, জারুল, রাবণলতা বা বন মটমটিয়া গাছেদের বাড়বৃদ্ধি রুখতে এখন সংরক্ষণকারী সংগঠনগুলির সাহায্য নিচ্ছে অসম বন দফতর। এদের মধ্যে শিমুল গাছের আবার মরণ সহজে আসে না। কেটে দিলেও গজিয়ে ওঠে গাছ। তাই তিলে তিলে শিমুল মারার পন্থা নেওয়া হয়েছে। মন ভাঙলেও, মানসের তৃণভূমিতে বাঁচাতে এ ভাবে মারা হয়েছে অন্তত ৬ হাজার গাছ। আরণ্যক সংস্থার তরফে আলোলিকা সিংহ জানান, অসমে গন্ডার থাকা মানস, পবিতরা, কাজিরাঙা, ওরাংয়ে শিমুল জারুলের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঘাসবন কমছে। কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও শিমুল মারতে না পেরে তাঁরা এই ধরনের গাছের গুঁড়ির উপর থেকে বেশ কিছুটা উপরের অংশ পর্যন্ত গভীর ভাবে ছাল ছাড়িয়ে ফেলছেন। এতে মাটি থেকে বাকি গাছে খাদ্য পৌঁছাচ্ছে না। তার জেরে, ৮ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে মারা যাচ্ছে গাছ।

বিশেষজ্ঞেরা জানান, সব জঙ্গলেই আগ্রাসী ও বহিরাগত গাছের বাড়বাড়ন্ত এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনকর্তারা জানান, কাজিরাঙার ক্ষেত্রেও বোম্বাক্স সেইবা, ক্র্যাটিভা ম্যাগনা, ট্রিভিয়া নুডিফ্লোরার মতো ১৮টি গাছের প্রজাতিকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকী তার মধ্যে রয়েছে গন্ধে মনকাড়া হাসনুহানা গাছও। সেই সব আগাছা নির্মূলের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।

আরণ্যকের তৃণভূমি বিশেষজ্ঞ বিভূতি লহকর জানান, মানসে বন্যার জল নামলে দেখা যায় জঙ্গলের ৩০ শতাংশ এলাকাই শেয়াল মুতি, রাবণ লতা, জাপানি লতা ও বন মটমটিয়া গুল্মের দখলে। ওই সব গাছ উপড়ে, পুড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে ধ্বংস করা চলছে। সেপ্টেম্বরে ফুল ধরার আগেই তাদের ওপড়াতে হয়। সেখানে লাগাতে হয় স্থানীয় ঘাস। গোটা কাজে স্থানীয় মানুষের সাহায্য ও সচেতনতা অপরিহার্য। একই কাজ পবিতরাতেও শুরু হয়েছে। জারুল গাছ ছাল ছাড়িয়ে মারার প্রক্রিয়াও প্রথম বার শুরু করা হয়েছে। এ দিকে পবিতরার ক্ষেত্রে আরও এক আশঙ্কা হয়ে দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বদল। এখানে মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটারের কোর এলাকায় শতাধিক গন্ডারের বাস। স্থানীয় সংরক্ষণকর্মীরা জানান, ব্রহ্মপুত্র ক্রমেই জঙ্গলের দিকে এগোচ্ছে। ফলে জঙ্গলের তৃণভূমি যা গন্ডারের মূল খাদ্য সেখানে জমছে বালি। বালির স্তর যত পুরু হবে, ততই কমবে ঘাস। অথচ জঙ্গলের চারদিকেই লাগোয়া গ্রাম। ফলে জঙ্গল এক দিকে ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে চলে গেলেও অন্য দিকে অরণ্য বা গন্ডারের চারণভূমি সম্প্রসারিত করার কোনও সুযোগই থাকবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Deforestatiion Rhinoceros Assam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy