চলছে কোচ সরানোর কাজ। বুধবার উত্তরপ্রদেশের হরচন্দপুর স্টেশনে। ছবি: রয়টার্স
বছর খানেক বড় দুর্ঘটনা হয়নি— এ নিয়ে ক’দিন আগেই স্বস্তি প্রকাশ করেছিল রেল। সেই স্বস্তিকে মরীচিকা প্রমাণ করে আরও এক বার রেল-সুরক্ষার ঘাটতিটাই সামনে চলে এল। ফের বড় মাপের রেল দুর্ঘটনা ঘটল উত্তরপ্রদেশে। আজ সকালে রায়বরেলীর কাছে হরচন্দপুর স্টেশনে ঢোকার মুখে লাইন থেকে ছিটকে গেল নয়াদিল্লিগামী ১৪০০৩ নিউ ফরাক্কা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন-সহ পাঁচটি কামরা। সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ৬। আহত ২০। বেসরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, মৃতের সংখ্যা ৭। কামরাগুলি একে অপরের উপরে উঠে যাওয়ায় নীচে আরও দেহ থাকতে পারে বলে সন্দেহ। পশ্চিমবঙ্গের কয়েক জন জখম হলেও মৃতেরা অধিকাংশই বিহারের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রক।
গত কাল সকাল ন’টায় মালদহ টাউন ছেড়েছিল ট্রেনটি। আজ সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ঘটে এই দুর্ঘটনা। এর ফলে প্রায় এক ডজন ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পরিবর্তিত পথে চালানো হচ্ছে প্রায় কুড়িটি ট্রেন।
কেন এই দুর্ঘটনা? রেলের একটি সূত্র বলছে, ঠিক সময়ে পয়েন্ট পরিবর্তন না হওয়ায় ট্রেনটি ভুল লাইনে যেতে গিয়ে লাইনচ্যুত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনটির আগে একটি লোকাল ট্রেন হরচন্দপুর স্টেশনে এসে দাঁড়ায়। সেটি ঠিক ভাবেই লুপ লাইনে পাঠানো হয়েছিল। তার পরে আসে নিউ ফরাক্কা এক্সপ্রেস। এটি যাওয়ার কথা ছিল মেন লাইন দিয়ে। রেলের মতে, লুপ লাইন থেকে মেন লাইন— অভিমুখ পাল্টানোর সময়েই সম্ভবত সমস্যা হয়। এক রেলকর্তার মতে, সম্ভবত যার মাধ্যমে ওই লাইন পরিবর্তন করা হয় সেটি বিকল হয়ে পড়েছিল। অথবা পুরো প্রক্রিয়াটি ঠিক ভাবে কাজ করেনি। ‘পয়েন্ট’-এর মুখ পুরোটা মেন লাইনের দিকে না ঘোরায় দুর্ঘটনা ঘটে। সেই কারণে সম্ভবত ইঞ্জিন-সহ পরের কামরাটির মুখ মেন লাইনের দিকে থাকলেও, বাকি কামরাগুলির অভিমুখ লুপ লাইনের দিকে ছিল।
দুর্ঘটনার তদন্ত করছে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি (উত্তর)। তদন্তের স্বার্থে সাসপেন্ড করা হয়েছে হরচন্দপুরের সহকারি স্টেশন মাস্টারকে। সিল করা দেওয়া হয়েছে ইন্টারলকিং রুমটিও। দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতা থাকতে পারে— এই আশঙ্কায় রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন উত্তরপ্রদেশ সন্ত্রাসদমন বাহিনীর তিন পদস্থ কর্তা।
রাত পর্যন্ত নাশকতার বদলে যান্ত্রিক ত্রুটি ও রেলকর্মীদের গাফিলতির বিষয়টিই সামনে উঠে এসেছে। সামগ্রিক ভাবে যা আঙুল তুলছে রেল-সুরক্ষার খামতির দিকেই।
মৃতদের পরিবার পিছু উত্তরপ্রদেশ ও বিহার সরকার মিলিয়ে ২ লক্ষ টাকা ও রেল ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেবে বলে জানিয়েছে। বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা সাত হলেও, রাত পর্যন্ত রেল জানিয়েছে, ছ’জন যাত্রী মারা গিয়েছেন। এক জনের পরিচয় জানা যায়নি। বাকিরা বিহারের। মারা গিয়েছেন কিষাণগঞ্জের বাসিন্দা অজয় কুর্রি (৪৫)। মুঙ্গেরের বাসিন্দা, ইটভাঁটার শ্রমিক রসিকলাল মাঁঝি কাজের খোঁজে বিহারের বরিয়ারপুর থেকে গোটা পরিবার নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে যাচ্ছিলেন। তাঁর আট বছরের ছেলে দীনেশ ঘটনাস্থলে মারা যায়। আর রসিকলাল ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। তাঁর গ্রাম লক্ষ্মীপুরের প্রায় সাত জন ওই ট্রেনে ছিলেন। জখম হয়ে তাঁরাও হাসপাতালে। এলাকারই গড়ৌরা পঞ্চায়েতের কিষণপুরের মাঁঝিটোলার মোহন মাঁঝিও কাজের খোঁজেই যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুনীতা দেবী (৫২), ছেলে শম্ভু (২৫), মেয়ে রীতা (১)। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাঁর গ্রামেরই দু’জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy