E-Paper

বিপন্ন লাদাখ, মত সোনমের

উষ্ণায়নের দাপটে গোটা পৃথিবীতে ক্রমশ পিছু হটছে হিমবাহ। পরিসংখ্যান বলছে, যে দ্রুত হারে হিমবাহ গলছে, তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ হিমবাহের দৈঘ্য এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:২২
লাদাখের খারডোংলা গিরিপথের হিমবাহ গলেছে। এখন কেবলই রুক্ষ পাথর।

লাদাখের খারডোংলা গিরিপথের হিমবাহ গলেছে। এখন কেবলই রুক্ষ পাথর। —নিজস্ব চিত্র।

প্রয়াগরাজে এ বারের কুম্ভের এ যাত্রায় ডুব দিয়েছেন অন্তত ৬৫ কোটি মানুষ। কিন্তু গোটা পৃথিবীতে যে ভাবে হিমবাহ গলে যাচ্ছে তাতে ১৪৪ বছর পরে কুম্ভে ডুব দেওয়ার মতো জল কি আর থাকবে— সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুক। সিনেমার পর্দায় যে লাদাখবাসীর আদলে বানানো হয়েছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর আমির খানের ‘রাঞ্চো’ চরিত্রটি। হিমালয় ও লাদাখ অঞ্চলে উষ্ণায়নের জন্য অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে অনেকাংশে দায়ী করেছেন তিনি।

উষ্ণায়নের দাপটে গোটা পৃথিবীতে ক্রমশ পিছু হটছে হিমবাহ। পরিসংখ্যান বলছে, যে দ্রুত হারে হিমবাহ গলছে, তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ হিমবাহের দৈঘ্য এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। যে কারণে জনসচেতনা বাড়াতে চলতি বছরকে ‘হিমবাহ বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আজ দিল্লিতে লাদাখের খারডুংলা হিমবাহের ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ার গল্প শোনালেন সোনম। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৯২ সালে নুব্রা উপত্যকায় থাকা খারডুংলা হিমবাহ পেরোতে লোহার সেতু বানিয়েছিল সেনা। আজ সেই সেতু আর নেই। হিমবাহ ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ায় চওড়া রাস্তা হয়েছে সেখানে। বরফের ছিঁটোফোটা চোখে পড়লেও, মূল হিমবাহ পিছিয়ে গিয়েছে প্রায় ৫০০-৭০০ মিটার।’’

হিমবাহের এই পশ্চাদপসরণ লাদাখের মতো শীতল এলাকার এক দিকে বাড়ছে খরার সমস্যা। অন্য দিকে হিমবাহগলিত জল ও বর্ষার বৃষ্টি মিশে বাড়াচ্ছে বন্যার বিপদ। যা সময়ে সময়ে ডেকে আনছে হড়পা বান। সোনমের কথায়, ‘‘২০০৬ সালে লাদাখে প্রথম হড়পা বান। তারপর থেকে নিয়মিত হয়ে আসছে। পরিবেশের খামখেয়ালিপানার কারণে লাদাখের জ়াস্কর এলাকায় খুমিক, লে-র কুলুমেক মতো গ্রামগুলি আজ জনশূন্য। পরিবেশজনিত কারণে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন ওই গ্রামের মানুষ। পিছিয়ে যাচ্ছে হিমালয়ের হিমবাহগুলি। গঙ্গা, যমুনার মতো নদী হিমবাহ নির্ভর।’’ সেই হিমবাহ বাঁচাতে তৎপর না-হলে ভবিষ্যতে হিমালয়ের নদীগুলি বর্ষানির্ভর নদীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সোনম। তাঁর কথায়, ‘‘তা হলে ১৪৪ বছর পরে কুম্ভে স্নান করার জল থাকবে না। বালিতেই ডুব দিতে হবে।’’

হিমবাহের দ্রুত গলে যাওয়ার পিছনে উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন পরিবেশবিদেরা। সোনমের মতে, ‘‘অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন লাদাখের অন্যতম মূল সমস্যা। দলে দলে পর্যটক ডিজেল গাড়িতে ঘুরতে আসছেন। গাড়ি থেকে নির্গত ব্ল্যাক কার্বন হিমবাহের উপরে জমা হয়ে দ্রুত গলিয়ে দিচ্ছে সেগুলিকে। কিন্তু লাদাখের মতো এলাকায় পর্যটকের উপস্থিতি প্রয়োজন রয়েছে। সেই কারণে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে আমার মতে ইলেকট্রিক বাস পরিষেবা চালু হওয়া উচিত লাদাখে। একই সঙ্গে উচ্চমূল্যের পরিবেশ করও বসাতে হবে।’’ পাশাপাশি, গলওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে গত পাঁচ বছরে যে ভাবে লাদাখের মতো সংবেদনশীল এলাকায় ভারত-চিন সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে, পরিকাঠামো বৃদ্ধি করেছে, বায়ুসেনার গতিবিধি বাড়িয়েছে তা এলাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি করেছে বলেই মত সোনমের। ফলে দ্রুত গলছে হিমবাহ। কেবল লাদাখ নয়, সিয়াচেন হিমবাহের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক বলেই মত তাঁর। স্পর্শকাতর হিমবাহ এলাকাগুলিকে সব দেশ যাতে ‘নো মিলিটারি জোন ঘোষণা’ করেন তার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে, আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে হিমবাহ রক্ষায় কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sonam Wangchuk Global Warming

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy