Advertisement
E-Paper

লড়াই শিখেছি তোমায় দেখে, মমতাকে সনিয়া

সংসদের সেন্ট্রাল হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে এলেন সনিয়া গাঁধী। কথায় কথায় বললেন, ‘‘তুমি চিরকালের লড়াকু নেত্রী।’’ সহাস্য মমতা জানালেন, চলতি অধিবেশনে সনিয়ার ছবিও তিনি টিভির পর্দায় দেখছেন। কংগ্রেস সভানেত্রীও কিছু কম যাচ্ছেন না!

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৯

সংসদের সেন্ট্রাল হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে এলেন সনিয়া গাঁধী। কথায় কথায় বললেন, ‘‘তুমি চিরকালের লড়াকু নেত্রী।’’ সহাস্য মমতা জানালেন, চলতি অধিবেশনে সনিয়ার ছবিও তিনি টিভির পর্দায় দেখছেন। কংগ্রেস সভানেত্রীও কিছু কম যাচ্ছেন না! সনিয়ার পাল্টা জবাব, তিনি লড়াই শিখেছেন মমতাকে দেখেই!

আগামিকাল প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে তাঁর বৈঠক। তার আগে মঙ্গলবার, দীর্ঘ পাঁচ মাস পরে সংসদ ভবনে পা দিয়ে, বিরোধী নেতাদের সঙ্গে একের পর এক আলোচনা চালালেন মমতা। বুঝে নিতে চাইলেন জাতীয় রাজনীতির উত্তাপ। এনসিপি-প্রধান শরদ পওয়ার থেকে জেডিইউ নেতা শরদ যাদব— একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতার সঙ্গে আজ মমতার কথা হয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আগামিকাল পওয়ারের বাড়িতে অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি দলগুলির একটি বৈঠক হবে। যেখানে অন্যতম আমন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার না করলেও যে বৈঠককে অনেকেই সম্ভাব্য তৃতীয় ফ্রন্টের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন।

এ দিন রাতেই আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে নৈশভোজ-বৈঠকও করেন মমতা। সেখানে দুই মুখ্যমন্ত্রীই একে অন্যের রাজনৈতিক দাবির প্রতি সমর্থন জানান। মমতা কেজরীবালকে পশ্চিমবঙ্গে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ২২-২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক ও সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মমতাকে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কেজরী। পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, আগামিকাল বিকেলে কেজরী ফের আসবেন মমতার বাড়ি। সেখান থেকে দু’জনে এক সঙ্গে পওয়ারের বাড়িতে বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন।

এ সবের মাঝে অবশ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও দেখা করে সৌজন্য বিনিময় করেন মমতা। সংসদের সেন্ট্রাল হলে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র। গত বছর লোকসভা ভোটের সময় দু’জনের মধ্যে কিছুটা তিক্ততা হলেও গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফরের সময় থেকেই বাবুলের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। যা নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে বেশ অস্বস্তি রয়েছে। এ দিনও দু’জনে সৌহার্দ্য বিনিময় করেন। আর তৃণমূল দফতরে এসে বিহারের বিজেপি সাংসদ কীর্তি আজাদ জানিয়ে গিয়েছেন, আগামী ভাইফোঁটায় তিনি কালীঘাটে অবশ্যই যাবেন ফোঁটা নিতে!

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আগামিকাল বিকেলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রশাসনিক পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে মমতার। সূত্রের খবর, বিকেল চারটে নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মমতা। দু’জনে প্রায় ঘণ্টাখানেক কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছে। মমতা জানিয়েছেন, এই বৈঠক কেন্দ্র-রাজ্যের ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা’-র মধ্যে পড়ে। ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা জানিয়েছেন, এটি একটি প্রশাসনিক বৈঠক। রাজ্যের জেএনইউআরএম-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প, বন্যাত্রাণ ও ছিটমহলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন ও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাড়তি অর্থের দাবি জানাতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করতে যাচ্ছেন তিনি। এর পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। এ দিন রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অসুস্থ স্ত্রীকেও দেখতে যান মমতা।

এ দিন সেন্ট্রাল হলে সনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ আচমকা হলেও কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে সংসদে নিজের দলীয় দফতরে আধ ঘণ্টা একান্তে বৈঠক করেন মমতা। পাশাপাশি বৈঠক করেন প্রফুল্ল পটেল, কে সি ত্যাগির সঙ্গেও। মমতার সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিজেডির ভর্তৃহরি মহতাব, দিলীপ তিরকেরা। মমতা এসেছেন শুনে একবার দলীয় দফতরে এসে উঁকি মারেন সপা সাংসদ জয়া বচ্চনও। জয়াকে দেখে জড়িয়ে ধরেন মমতা।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, পওয়ারকে মমতা আজ সমস্ত অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি দলগুলিকে এক করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন পওয়ার তাঁকে প্রস্তাব দিয়ে বলেন, মমতার বাড়িতেই কাল একটি বৈঠক হোক। যেখানে জেডিইউ, এসপি ও আপের মতো দলগুলি থাকবে। মমতা তাঁকে জানান, শরদ পওয়ার যে হেতু প্রবীণ নেতা, তাই তাঁর বাড়িতে বৈঠকটি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। পওয়ার তাতে রাজি হয়ে যান। ঠিক হয়েছে, আগামিকাল সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পওয়ারের বাসভবনে তৃণমূল, এনসিপি, এসপি, জেডিইউ ও আপ নেতারা বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা তথা ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় স্তরে সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে বসবেন। চেষ্টা হচ্ছে লালুপ্রসাদের আরজেডিকেও ওই বৈঠকে সামিল করার।

তবে ওই বৈঠকে সিপিএমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে, সীতারাম ইয়েচুরি এখন কেরলে রয়েছেন। তাঁর কাছে রাত পর্যন্ত কোনও আমন্ত্রণ যায়নি। আর দফতরে কোনও আমন্ত্রণ এসেছে কিনা, তা কাল সকালে জানা যাবে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বৈঠকে মমতার উপস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এ যাত্রা সিপিএমকে আমন্ত্রণ জানানো থেকে পিছিয়ে এসেছেন পওয়ার। এ দিকে আজ শরদ যাদবের সঙ্গে আলোচনায় বিহারের আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন মমতা। এ প্রসঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, নীতীশ কুমার তাঁর ভাল বন্ধু। দরকার হলে নির্বাচনে নীতীশের পাশে দাঁড়াতেও আপত্তি নেই তৃণমূলের। তবে তিনি মনে করেন, তার প্রয়োজন হবে না।

agni roy anamitra sengupta sonia on mamata mamata meets sonia mamata sonia relation sonia learned fighting mamata struggle sonia greets mamata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy